যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
নিয়মের বারোটা
আজ মহাষষ্ঠী। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের প্রহর শুরু হয়ে গিয়েছে মহালয়ার পর থেকেই। নতুন জামা, নতুন জুতোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মুখ চালাতে না পারলে বাঙালি অন্তত উৎসবের মানে খুঁজে পায় না। সারা বছরের টুকটাক ডায়েটের নিয়ম ভেঙে বেলাগাম খাওয়াই এই সময়ের অন্যতম কাজ হয়ে দাঁড়ায়। রাত দেড়টায় বিরিয়ানি, ভোর চারটেয় ফুচকা এসব ছাড়া পুজো জাস্ট জমে না! তবে পুজোর ক’দিন পেটবাবাজির উপর যে অত্যাচার চলে, তার ফলে অচিরেই বাড়ে ওজন, ত্বককে ঘিরে ধরে ক্লান্তি আর শুরু হয় হজমের গোলমাল।
হাতেগরম উপায়
কিন্তু উপায় একখান আছে! পুজোর ক’টা দিন যদি নিজের প্রতি একটু খেয়াল রাখেন, সামান্য যত্নও পৌঁছে দেন পাকস্থলীতে তাহলে কিন্তু জাঙ্ক ফুড, ভাজাভুজি, রাত দেড়টার বিরিয়ানি— সবকিছুর জন্যই শরীর তৈরি থাকবে। ত্বকও এই ক’দিনের অযত্ন গায়ে মাখবে না। আসলে এই ক’দিনের রোল, চাউমিন, ফুচকা, পোলাও, মাংস, লুচি, বিরিয়ানির সঙ্গে লড়তে গেলে হজমশক্তি ও ত্বক দুই-ই রাখতে হবে তরতাজা। একটু বেশি যত্ন, বাড়তি খেয়ালের জন্য তাই হাতে তুলে নিতে হবে ডিটক্স ডায়েট। কেমন সেটা? কী নিয়ম মানবেন, জানালেন বেঙ্গালুরু নারায়ণা মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালের ডায়েটিশিয়ান অমৃতা দাস পারুয়া।
কাকে বলে ডিটক্স ডায়েট?
‘ডি’ কথার অর্থ ‘বাদ’ বা ‘বিয়োগ’। ‘টক্সিন’ থেকে এসেছে ‘টক্স’ শব্দটি। টক্সিন কথার অর্থ ‘বর্জ্য পদার্থ’। শরীর থেকে দূষিত বা বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া হয় যে পদ্ধতিতে তাকেই বলে ডিটক্সিফিকেশন। তাই খাবার হজম করতে সাহায্য করে যারা, সেই সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে একটু বিশ্রাম দিয়ে শরীরে নিত্য প্রবেশ করা টক্সিনদের বের করে দেওয়ার পদ্ধতিকে মাথায় রেখেই তৈরি হয় ডিটক্স ডায়েট। পুজোর মুখে যেমন ওজন ঝরাতে এই ডায়েটের জুড়ি নেই, তেমন আবার পুজোর ক’দিন একে অন্তত একবেলা সঙ্গে রাখলে দুপুর বা রাতের অত্যাচার পেট অনেকটা সয়ে নিয়ে পারে। খুব তেল চপচপে খাবার খাওয়া হচ্ছে মানেই কিন্তু শরীরের সঙ্গে ত্বকও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তৃতীয়া বা চতুর্থীতে যে ফেসিয়াল করে এলেন, হয় সে আর জেল্লা দিচ্ছে না বা স্পা করে আসার পরেও ত্বক কেমন যেন মনমরা হয়ে আছে। আসলে পুজোর ক’দিনের খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম ত্বককে বেশ বিরক্ত করে। তার জেল্লা কমে, ক্লান্তির ছাপ পড়ে। তাই পুজোর ক’দিন সকাল থেকে কী কী পানীয় ও খাবারে ভরসা করলে শরীরের ডিটক্সিফিকেশন চালু থাকবে ও ত্বক, পেট আরামে থাকবে, তার সন্ধান দিলেন অমৃতা।
সমাধানের ‘ডিটক্স জল’
যাঁরা ডায়েট করেন, তাঁরা এমন ডিটক্স পানীয় সম্পর্কে বেশ অবগত। সকাল, দুপুর বা রাত যে কোনও সময়েই এই পানীয় খেতে পারেন। তবে এক একটি পানীয়ের খাওয়ার সময় এক এক রকম। বিশেষ করে সকালে উঠেই যদি এমন একটি পানীয় খেয়ে নেওয়া যায়, তাহলে সারাদিন হজম নিয়ে খুব একটা ভাবতে হয় না। সারারাত যকৃত বিশ্রাম পাওয়ার পর প্রথম খাবারটা যদি সহজ পায়, তাহলে তারও কাজ শুরু করতেও সুবিধা হয়।
• রাতে এক গ্লাস জলে ২ কুচি আদা, একটা দারুচিনির কাঠি, এক চিমটে গোলমরিচ ও এক চামচ মধু মিশিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখুন। সকালে উঠে সেই জল ছেঁকে গরম করে নিন। ঈষদুষ্ণ জলে একটা পাতিলেবু নিংড়ে সেই জলটা পান করুন। শরীরের যাবতীয় বর্জ্য বের করতে এই পানীয় ওস্তাদ। সঙ্গে ত্বকের কোমলভাব ফেরাতেও এর জুড়ি নেই।
• লাউ কুরিয়ে তার রস বের করে নিন। এবার এই তরলে একটা গোটা লেবু ও এক চিমটে বিটনুন যোগ করুন। এই তরল শুধু পেট পরিষ্কার করবে এমনই নয়, সারাদিন খুব আজেবাজে খেলেও ত্বকে তার ছাপ পড়তে দেয় না। সঙ্গে হজমশক্তি বাড়ায়।
• বিশেষ কিছু পানীয় আছে, যেগুলো খালি পেটে খেলে ভালো ডিটক্সিফিকেশন হয়। ২৫০ মিলি উষ্ণ গরম জলের সঙ্গে ২০ মিলি অ্যাপল সিডার ভিনিগার, ২ চামচ পাতিলেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন। এর সঙ্গে এক চিমটে গোলমরিচ গুঁড়োও যোগ করা যেতে পারে। ওজনবৃদ্ধি ও সুগারের সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের জন্য এই ডিটক্স খুব উপকারী।
• দুপুরে খাওয়ার পর ডিটক্স পানীয় খেয়ে ত্বক ও পেটকে সন্ধে ও রাতের যাবতীয় অত্যাচারের জন্য তৈরি রাখতে পারেন। খোসাযুক্ত শসা মিক্সারে দিয়ে ঘুরিয়ে নিন। এবার এতে এক চামচ জিরে গুঁড়ো, অল্প পরিমাণে কুচানো আদা ও জল দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এই ডিটক্স হজমে সহায়ক ও লিভারকে শক্তিশালী করে।
• প্রতি রাতে খাওয়াদাওয়ার পর এক গ্লাসের চেয়ে একটু বেশি পরিমাণ জল (২৫০ মিলি) আভেনে বসান। একটু গরম হলে এতে এক চামচ সাদা জিরে যোগ করে তা ফুটতে দিন। পাঁচ মিনিট মতো ফুটে উঠলে বন্ধ করে ছেঁকে ওই জলটা পান করুন। পুজোর সময় সারাদিন অনিয়মের যা কিছু খাবেন, জিরে তা হজম করাবে সহজে।
• পুজোয় বাইরে বেরনোটাই একমাত্র কাজ। দেদার আড্ডা আর ভুরিভোজের মাঝেও অল্প অল্প করে চুমুক দিতে পারেন ডিটক্স ওয়াটারে। একটা শসা কুচিয়ে তার সঙ্গে ১০-১৫টা পুদিনা পাতা, একটি পাতিলেবুর রস ও দু’চামচ আদা কুচি মিশিয়ে একটি বোতলে ভরে বাইরে বেরন। ঘুরে বেড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে সেই জলে চুমুক দিন। হাঁটার ক্লান্তি যেমন কমবে তেমনই ত্বককে টানটান রাখতেও সাহায্য করবে এই ডিটক্স পানীয়।
তবে যে কোনও একটি বা দু’টি ডিটক্স ওয়াটারে আস্থা রাখলেই চলবে। কিন্তু এর সঙ্গে জল খাওয়ার পরিমাণ কমালে চলবে না। ফলের রস, জল যা-ই খান না কেন, তা যেন দিনে অন্তত তিন থেকে চার লিটার হয়। জলই পারে শরীরের বর্জ্য সরিয়ে তাকে ভিতর থেকে পরিষ্কার রাখতে। আর তা রাখলে তবেই ত্বকের উপর তার প্রভাব পড়বে ও ত্বক আরও প্রাণবন্ত ও জেল্লাদার হবে।