হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে বিপদে পড়তে পারেন। চলচিত্র ও যাত্রা শিল্পী, পরিচালকদের শুভ দিন। ধনাগম হবে। ... বিশদ
টিআরপি-র লড়াইয়ে টানা কয়েক মাস নিজের এক নম্বর জায়গাটা ধরে রেখেছে ‘মিঠাই’। এই ধারাবাহিকে ‘মিঠাই’-এর ভূমিকায় অভিনয় করেন সৌমিতৃষা কুণ্ডু। বারাসতের মেয়ে সৌমিতৃষা জানালেন তাঁর রাখি উদ্যাপনের কথা।
সৌমিতৃষা কুণ্ডু: আমার কাছে রাখি মানেই আমার দিদা গৌরী চক্রবর্তী ওরফে বুয়ার সঙ্গে সময় কাটানোর দিন। নিজের ভাই-দাদারা বেশ দূরে দূরে থাকায় ছোটবেলা থেকে এই দিনে বুয়ার হাতে রাখি বেঁধে দিতাম। বাড়তি পাওনা ছিল বুয়ার হাতের রান্না আর স্পেশাল আদর। এমনিতেই বুয়ার সঙ্গে আমার সম্পর্ক একেবারে মা-বাবার সঙ্গে আমার সম্পর্কের মতোই গভীর। সে কারণেই ঠিক বুয়ার বাড়ির পাশে বাবা আমাদের বাড়িটা তৈরি করেছিলেন। সারাবছরই তাই বুয়ার সঙ্গে আড্ডা জমত। রাখি আমার কাছে ২০১৮ পর্যন্ত ভীষণ স্পেশাল ছিল, কারণ ততদিন বুয়া আমার সঙ্গে ছিল। বুয়া আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে আমি প্রতি বছর রাখি কিনি বুয়ার নাম করেই। এবছর ভেবেছিলাম কিনব না। এই দিন বুয়ার জন্য খুব কষ্ট হয়। কিন্তু সম্প্রতি এক স্বপ্নে বুয়ার সঙ্গে যেন আমার দেখা হয়েছে দেখলাম। স্বপ্ন অত স্পষ্ট মনে থাকে না, তবে মন বলছে, বুয়া যেন বলছে, আমার সঙ্গেই সে সারাক্ষণ আছে। তাই রাখিটা এবারও কিনে ফেলেছি। বুয়াকেই মনে মনে পরাব।
এই ‘মিঠাই’ ধারাবাহিকেই ‘রাজীব’-এর চরিত্রে অভিনয় করেন সৌরভ চট্টোপাধ্যায়। ইন্ডাস্ট্রিতে সৌরভ যথেষ্ট পরিচিত মুখ। ‘গানের ওপারে’ ধারাবাহিক দিয়ে শুরু, তারপর থেকে নানা ছবি ও ধারাবাহিকে কাজ করে সুনাম অর্জন করেছেন তিনি। রাখির স্মৃতি ‘চতুষ্পর্ণী’-কে জানালেন এই অভিনেতা।
সৌরভ চট্টোপাধ্যায়: রাখি নিয়ে বলতে গেলে আমাকে ফিরে যেতে হবে আমার কলেজ-জীবনে। তখন সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। রাখির দিন কলেজ গিয়েছি। হঠাৎ দেখি ফার্স্ট ইয়ারের বেশ কয়েকজন মেয়ে এসে আমার খোঁজ করে যাচ্ছে। আসলে ওদের ব্যাচটা কলেজে ভর্তি হওয়ার পর টুকটাক নানা কাজে-অকাজে ওদের সাহায্য করতাম। ওদের অনেকেই বিভিন্ন বিষয় আমার সঙ্গে শেয়ার করত। আমিও চেষ্টা করতাম জুনিয়রদের সাহায্য করতে। তা রাখির দিন ওই ব্যাচের অনেক মেয়েই সেবছর আমাকে রাখি পরায়। আমিও ওদের এই ভালোবাসা খুব উপভোগ করেছিলাম। সেবছর আমি প্রায় ২৭টা রাখি উপহার পেয়েছিলাম। ওই দিনটা আমি ভুলব না। আর এমনিতে প্রতি বছর আমাকে আমার এক বন্ধুর দিদি রাখি পরান। আমি নিজেও তাঁকে আপন দিদিই ভাবি। প্রতিবার দিদিকে গিয়ে বলি, যাহ্! এবছর তো কিছুই কেনা হল না! তোমার গিফট ডিউ রইল। তারপর তাঁকে অবাক করে দিয়ে তাঁর প্রয়োজনীয় জিনিসটা র্যাপার খুলে বের করি! প্রতিবার দিদিও খুব অবাক হয়ে যান। দিদির কী প্রয়োজন সেটা বুঝতে আমাকে একটু চোখ-কান খোলা রাখতে হয় বইকি! সারাবছর নানা কথাবার্তায় কখনও কোনও প্রয়োজনের কথা বললেই সেটা আমি মাথায় রাখি। আর চেষ্টা করি সেটাই কিনে দিতে। এবছরও তেমনই পরিকল্পনা আছে।
‘মিঠাই’-এর মতো খড়কুটো-র ‘গুনগুন’-ও টেলিদর্শকদের খুব কাছের। সৌজন্য ও গুনগুনের জুটিকে ভালোবেসে ‘সৌগুন’ বলেও ডাকেন অনেকে। গুনগুনের চরিত্রে অভিনয় করেন তৃণা সাহা। তিনিও এই ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ কয়েক বছর কাজ করছেন। এর আগে ‘মেম বউ’, ‘খোকাবাবু’-র মতো বেশ কিছু ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। রাখি নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার ঝাঁপি খুললেন তিনিও।
তৃণা সাহা: আসলে রাখি নিয়ে বলতে আমার একদম ভালো লাগে না বলেই এই কথাগুলো বলা। মানে, কেন ভালো লাগে না তা তো সকলের জানা উচিত! আরে রাখি মানেই আমার একগাদা খরচ। আমার বেশিরভাগ তুতো দাদা দূরে থাকে, কাছে থাকার মধ্যে সবাই আমার তুতো ভাই! আর তারা আমার চেয়ে বেশ ছোট। একজন তো সবে ক্লাস ফাইভ। কজেই যাবতীয় যত গিফট আমাকেই কিনতে হয়। এজন্যই আমার রাখির চেয়ে ভাইফোঁটা বেশি ভালো লাগে, কারণ তখন পুজোর ছুটিতে দাদারা এখানে আসে। আমিও প্রচুর গিফট পাই। না, তার মানে এমন নয় যে আমি কিপ্টে, কিন্তু একটু কিছু রিটার্ন গিফট পেতেও তো ইচ্ছে করে নাকি! সে গুড়ে বালি এখন। আমার ভাইরা বলেছে ওরা বড় হওয়া অবধি এটার জন্য আমাকে অপেক্ষা করতে হবে। সেদিনের আশাতেই বসে আছি। একটা করে বছর যায় আর ওদের ক’টা গিফট ডিউ হল তার হিসেব খুব মন দিয়ে রাখি। সুদে-আসলে উসুল করতে হবে তো! তবে ভাইদের জন্য নিজের হাতে বেছে রাখি কেনা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়।
‘মিঠাই’, ‘খড়কুটো’-র মতো টেলি ধারাবাহিকে জনপ্রিয়তার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে ‘দেশের মাটি’-ও। বিশেষ করে মাম্পির চরিত্রে রুকমা রায়ের অভিনয় উচ্চপ্রশংসিত। ‘খড়কুটো’-য় নেগেটিভ চরিত্র ‘তিন্নি’-র ভূমিকাতেও রয়েছেন রুকমা। সেখানেও তাঁর অভিনয়দক্ষতা দাগ কেটেছে দর্শকদের মনে। রুকমা জানালেন তাঁর রাখির গল্প।
রুকমা রায়: আমার রাখির একমাত্র সঙ্গী আমার দাদু। ছোটবেলা থেকেই দাদুকে রাখি পরাতাম। আমার যেহেতু দাদা বা ভাই তেমন কেউ নেই, তাই দাদু আমার সে অভাব পূরণ করতেন রাখির দিন। প্রতি বছর রাখি পরানোর পর দাদু আমাকে চকোলেট উপহার দিতেন। আর আমি উত্তেজনায় গোটা চকোলেটটাই একা খেয়ে ফেলতাম। শেষে খেয়াল হত, এই যাহ্! দাদুকে তো দেওয়া হল না! তখন দাদুর কাছে গিয়ে খুব মিষ্টি করে বলতাম, ‘আমি একা চকোলেট খাব, তুমি খাবে না তা কি হয়? এই নাও চকোলেট...,’ বলেই দাদুর হাতে খালি র্যাপারটুকু ধরিয়ে দে ছুট! দাদু ছদ্ম রাগ দেখাতেন। আর ছোটবেলায় সেই রাগকে আসল ভেবে আমি ভারি মজা পেতাম। আর যে রাখির দিনগুলো স্মরণীয়, সেসব একটু বড় হওয়ার পর। তখন স্কুলে পড়ি। উঁচু ক্লাস। টুকটাক নানা প্রোপোজাল পাই। আর আমাদের বন্ধুদের গ্রুপে নিয়মই ছিল, স্কুল লাইফে কেউ প্রোপোজ করলেই তাকে রাখির দিন যেভাবেই হোক রাখি পরিয়ে দিতে হবে। স্কুল ছুটির পর সেই রাখি পরানোর ধুম চলত। ছেলেরাও পরবে না, আর আমিও ছাড়ব না। আজও ভাবলে হাসি পায়! তবে এবছর আমাদের শ্যুটিং ফ্লোরের সব ছোট ভাইবোন ও দাদা-দিদিদের হাতে রাখি পরিয়ে দিনটা উদ্যাপন করব।