হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে বিপদে পড়তে পারেন। চলচিত্র ও যাত্রা শিল্পী, পরিচালকদের শুভ দিন। ধনাগম হবে। ... বিশদ
করোনা আবহে রেস্তরাঁয় বসে খাওয়াদাওয়ায় আপাতত ছাড় মিলেছে। বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়স্বজন মিলে হইহই করে খেতে যাওয়া বাঙালি একটু একটু করে রেস্তরাঁমুখীও হয়েছে। কিন্তু অনেকে এখনও রেস্তরাঁ বা বাইরের খাবারে ভরসা পাচ্ছেন না। রাশ টেনেছেন ঘন ঘন অর্ডার করায়। কারও আবার এই ওয়ার্ক ফ্রম হোমের দিনগুলোয় বাড়িতে নতুন নতুন রান্না শেখার শখ হয়েছে। কেউ আবার কাজ সামলে রান্নাবান্নায় কম সময় দিতে পারছেন। সময় বাঁচবে কিসে, সেটাই ভাবছেন।
এসব সমস্যার আশু সমাধান একটি কনভেকশন আভেন ও একটি ওটিজি। এমনিতেও রেস্তরাঁ স্টাইলের খাবার যখন বাড়িতে বানানোর প্রসঙ্গ ওঠে, তখন কিন্তু খুব স্বাভাবিকভাবেই এই দুই অ্যাপ্লায়েন্স আলোচনায় ঢুকে পড়ে। একটা সময় ছিল যখন সাধারণ মাইক্রোওয়েভ আভেনের কাজ ছিল স্রেফ খাবার গরম ও ডিফ্রস্ট করা। যুগে যুগে তাকে আধুনিক করে তুলে তৈরি করা হয়েছে কনভেকশন। যেখানে খাবার গরম থেকে শুরু করে রান্না— সবই সম্ভব। এতে নানা ধরনের মোড সেট করা থাকে। তাতে আজকাল অনায়াসে খুব কম সময়ে ভাত থেকে কাজ চালানোর মতো কেক বেকিং প্রায় সবই সম্ভব।
কনভেকশন আভেনের কাজ
কনভেকশন আভেনে কোনও কয়েল থাকে না। ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভের মাধ্যমে রান্না হয়। কয়েক সেকেন্ডে খাবার গরম থেকে কয়েক মিনিটে রান্না এই অ্যাপ্লায়েন্সেই সম্ভব।
কী কী অ্যােক্সসরিজ
বেকিংয়ের জন্য শর্ট মেটাল র্যাক, গ্রিলিংয়ের জন্য হাই মেটাল র্যাক দেওয়া হয় আভেনের সঙ্গে। এছাড়া থাকে বেকিং ট্রে।
সাধারণত মাইক্রোওয়েভ আভেনকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। সোলো, মাইক্রোওয়েভ কাম গ্রিল ও কনভেকশন। সোলো আভেনে শুধুই খাবার রান্নার পাশাপাশি গরম ও ডিফ্রস্ট করা যায়। নামেই মালুম, মাইক্রোওয়েভ কাম গ্রিলে গ্রিল করা যায় আর কনভেকশন থাকলে করতে পারবেন বেক। হাই, মিডিয়াম, লো এই তিনটি পাওয়ার দেওয়া থাকে এমন আভেনে। এছাড়া ডিফ্রস্টিং, অটো মেনুও থাকে। আজকাল আধুনিক বহু কনভেকশন আভেনে ডিরেক্ট মেনু থাকে। ফলে রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে আভেনে ঢুকিয়ে দিলে অটো মেনুর সাহায্যে রান্নাটা তৈরি হয়ে যাবে। তবে কনভেকশনের চেয়ে ওটিজির রান্নার স্বাদ অনেক বেশি ভালো হয়। তবে রোজের রান্নার বেলায় অল্প সময়ে, চটপট করতে কনভেকশন সত্যিই অতুলনীয়। এর বিদ্যুৎ খরচও অনেক কম।
ওটিজি-র কাজ
আভেন-টোস্টার-গ্রিলারকে সংক্ষেপে বলা হয় ওটিজি। এই ওটিজি আবার গ্রিলিং, টোস্টিং ও বেকিংয়ে সেরা। রেস্তরাঁ স্টাইল বেক, গ্রিল থেকে শুরু করে নরম তুলতুলে টিফিন কেক— ওটিজির ওস্তাদি রয়েছে সবেতে। এর স্বাদ অতুলনীয় হলেও রান্না করতে সময় লাগে অনেকটা। বিদ্যুৎ খরচও বেশি। তবু ওটিজি-র চাহিদা রয়েছে রসনার কথা ভেবে।
কী কী অ্যােক্সসরিজ
ওয়্যার র্যাক, বেকিং ট্রে, ক্রাম্ব ট্রে, রোটিসরি রড সেট, টং— রেস্তরাঁ স্টাইলে রান্না করতে যা যা প্রয়োজন, সবই পাওয়া যাবে ওটিজির সঙ্গে। তবে মনে রাখতে হবে, এটিতে মাইক্রোওয়েভের অটো মোডের মতো খাবার ঢুকিয়ে দিলেই রান্না করা যায় না। কারণ, ওটিজি-তে প্রি-হিট করার প্রয়োজন হয়। কিছু সময় ধরে প্রি-হিট করে তারপর আভেনে খাবার ঢুকিয়ে রান্না করা হয়। তাই সময় ও বিদ্যুৎ অনেক বেশি পোড়ে এক্ষেত্রে। তবে খাবারের স্বাদ অনেক ভালো হয় ওটিজি-তে। ওটিজি-তে উপরে ও নীচে কয়েল থাকে। গ্রিল ও বেক করার সময়ে প্রয়োজন অনুসারে সেই কয়েল উত্তপ্ত হয়ে রান্না করে। সাধারণত ওটিজি-তে তাপমাত্রা, মোড ও সময় মাপার জন্য আলাদা আলাদা তিন ধরনের নব থাকে। টেম্পারেচার নবে থাকে ১০০ ডিগ্রি থেকে ২৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত দাগ। একটি বেসিক ওটিজিতে টোস্ট, বেক, ওয়ার্ম, ব্রয়েলের পাশাপাশি রোটিসরি মোড থাকে। রান্নার পর পরিবেশনে যতটা দেরি, সেই হিসেবে কিপ ওয়ার্ম মোডে রাখলে খাবার গরম থাকে। গ্রিল করার জন্য কাজে আসে ব্রয়েল অপশন। তন্দুরি বা বার-বি-কিউ-এর জন্য রয়েছে রোটিসরি মোড। টোস্ট ও বেক মোড যথাক্রমে টোস্টিং ও বেকিংয়ের উদ্দেশ্যে রাখা হয়। এতে সময়েরও নব আছে। শূন্য থেকে শুরু করে ৯০ মিনিট পর্যন্ত দাগ থাকে এই মোডে। কোনও রান্না যদি ৯০ মিনিটের বেশি সময় ধরে হয়, তাহলে ৯০ মিনিট পেরিয়ে গেলে নব ঘুরিয়ে আবার বাড়তি সময়টুকু সেট করে নিতে হবে।
কত ক্যাপাসিটি কত দাম
অ্যাপ্লায়েন্স কিনলেই হল না, পরিবারে কত ক্যাপাসিটির প্রয়োজন, সেটাও জানা দরকার। যদি ২-৩ জনের সংসার হয়, তাহলে ১৫-২০ লিটারের মধ্যে কিনতে পারেন। আর যদি তিন জনের বেশি সদস্য পরিবারে থাকেন, তাহলে ২১-৩০ লিটারের আভেন ভালো বিকল্প। তারও বেশি জন সদস্য হল ৩০ লিটারের বেশি ক্যাপাসিটির আভেন কিনুন।
ভালো মানের কনভেকশন আভেনের জন্য ভরসা করতে পারেন আইএফবি, স্যামসাং, এলজি, হায়ার, কোরিও, ওয়ার্লপুল, ওনিডা, মারফি, প্যানাসনিক ইত্যাদি সংস্থার উপর। ১৫-২০ লিটারের কনভেকশন আভেন কিনতে চাইলে বাজেট রাখুন প্রায় ৮-১০ হাজার টাকার মধ্যে। যেমন আইএফবি-র ২০ লিটারের মেটালিক সিলভার রঙের মডেলটি অনলাইনে কিনলে দাম পড়বে ৭,৯৯৩ টাকা। আবার ওয়ার্লপুল পছন্দ হলে এই একই ক্যাপাসিটির আভেনের দাম পড়বে ৯ হাজার টাকার একটু বেশি। হায়ারের মডেলের দাম ছাড় নিয়ে ৭,৯৩০ টাকা। হায়ার একটি দারুণ দেখতে অত্যাধুনিক মডেল বাজারজাত করেছে। ২০ লিটার ক্যাপাসিটির সেই অ্যাপ্লায়েন্সের দাম পড়বে ৮,৮৫০ টাকা। কোরিও ব্র্যান্ডের ২০ লিটারের আভেন মিলবে ৭,৯৯৯ টাকায়। স্যামসাংয়ের ২১ লিটার ক্যাপাসিটির আভেন মিলবে ১১ হাজার টাকার আশপাশে। এই সংস্থারই স্লিম ফ্রাই মডেল পছন্দ করলে দাম পড়বে ১২,২০০ টাকা। সব মডেলের উপর এখন অনলাইনে ছাড় চলছে।
২০-২১ লিটারের চেয়ে একটু বেশি ক্যাপাসিটির মডেল চাইলে ভরসা করতে পারেন এই সংস্থাগুলির উপর। যেমন, প্যানাসনিকের ২৩ লিটার ক্যাপাসিটির মডেলটির উপর অনলাইনে অফার চলছে। দাম পড়বে ১০,২৯০ টাকা। এই সংস্থারই ২৭ লিটার ক্যাপাসিটির অ্যাপ্লায়েন্স কিনলে দাম হবে ১১,৭৯০ টাকা। গোদরেজ একটি অত্যাধুনিক মডেল বাজারজাত করেছে। এতে চাইল্ড লক সিস্টেম রয়েছে। মূল আভেনের উপর ১ বছর ও ম্যাগনেশনের উপর ৫ বছরের ওয়্যারেন্টি দিচ্ছে সংস্থাটি। দাম পড়বে ৯,৬৯০ টাকা। আইএফবি আবার ৭১টি অটো কুক মেনু ও স্টিম ক্লিনিংয়ের সুবিধাযুক্ত একটি আভেন প্রস্তুত করেছে। তার দাম পড়বে ১১,৭৯০ টাকা। অন্যান্য সংস্থার
২৩-২৭ লিটার ক্যাপাসিটির আভেনের দাম ঘোরাফেরা করবে ১১-১৪ হাজারের মধ্যে। অফারে আর একটু কমেও পেতে পারেন। ৩০ লিটার পর্যন্তই এমন দামে মেলে। তবে ক্যাপাসিটি ৩০ লিটার ছাড়িয়ে গেলে দাম একটু বাড়ে। আভেন যত আধুনিক হয়, দাম তত বেশি পড়ে। যেমন এলজি-র ৩২ লিটার চারকোল কনভেকশন আভেনের দাম পড়ে প্রায় ২৭,৫০০ টাকার কাছাকাছি। স্যামসাংয়ের ৩২ লিটার ক্যাপাসিটির আভেনের দাম ২২-২৩ হাজার টাকার মধ্যে। ৩৫ লিটারের আভেন কিনলে এই দাম বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৩০ হাজার টাকার কাছে। আইএফবি ৩০ লিটারের একটি আভেন বাজারজাত করেছে। ফুলেল নকশাওয়ালা এমন আভেনের দাম অফারে ১৪,৯৯০ টাকা।
এ তো গেল কনভেকশনের দাম। কিন্তু যদি ওটিজি কেনার সাধ হয়, তাহলে? পকেটে ঠিক কতটা চাপ পড়বে ভেবে হিসেব কষা বন্ধ করুন। কারণ ওটিজি আভেনের দাম তুলনামূলক কম। এতেও এখন চলছে নানা অফার। ওটিজির জন্য ভরসা করতে পারেন ফিলিপস, কেন্ট, বাজাজ, মারফি, বরোসিল, ওয়ান্ডারশেফ, পিজিয়ন, অ্যাগারো ইত্যাদি ব্র্যান্ডের ওপর। ওটিজি সাধারণত ৯,১৬, ১৯, ২০, ৩৬, ৩৮, ৪৫, ৬০, ৯০ লিটার ইত্যাদি নানা ক্যাপাসিটির হয়। ছোট ক্যাপাসিটির ওটিজি চাইলে ৯ লিটারের আভেন কিনতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে কোনও কোনও মডেলে রোটিসরি অর্থাৎ বার-বি-কিউ-এর মোডটি পাবেন না। সব ক্যাপাসিটির সব মডেলই কমবেশি ৩-৬ হাজার টাকার মধ্যেই মেলে। পিজিয়নের ৯ লিটারের ওটিজি পাবেন মাত্র ২,৩৭৩ টাকায়। প্রেস্টিজের ৯ লিটারের ওটিজি-র দাম ২৫০০ টাকার আশপাশে।
মাইক্রোওয়েভ ও ওটিজি পরিষ্কার করার উপায়: যে কোনও আভেন নিয়মিত ব্যবহারে তেল-কালি জমে নোংরা হয়। দুর্গন্ধও বেরয়। পরিষ্কারের জন্য সুইচ অফ করে আভেনের ভিতর বেকিং সোডা ছড়িয়ে কিছুক্ষণ রাখুন। পরে জল ছিটিয়ে নরম কাপড় বা স্পঞ্জ দিয়ে চেপে মুছে নিন।