করোনা মহামারী থমকে দিয়েছিল আমাদের বাঁধা ছকের জীবনযাত্রাকে। থমকে গিয়েছিল নাট্যজগতও। গতিহীন হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু নাট্যকর্মীদের ইচ্ছাশক্তির প্রাবল্যকে রুখতে পারেনি স্বাস্থ্যবিধির বাঁধ। ভার্চুয়াল মাধ্যমে চলেছে নাট্যচর্চা। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত নাট্যকর্মীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বাকিরা। তারপর আনলক পর্ব শুরু হতেই একে একে প্রকাশিত হতে শুরু করেছে বিভিন্ন নাট্যসংস্থাগুলির নাট্যপত্র। যেমন হাতে এল ‘ব্রাত্যজন নাট্যপত্র’-র চতুর্দশ সংখ্যা। পত্রিকাটির কলেবরে লকডাউনের কোনও ছাপ পড়েনি, তবে এবার নেই কোনও সাক্ষাৎকার, নেই ব্রাত্যজনের প্রযোজনাগুলির সমালোচনার পুনঃপ্রকাশ। শুরুতেই রয়েছে এই বিষাক্ত বছরে যে শিল্পীদের আমরা হারিয়েছি, তাঁদের ছবি। সম্পাদকীয়তেও মহামারী এবং লকডাউনের আঁচ। তারপর ফরাসি নাট্যকার ও শিল্পী আন্তোনিন আর্তো— যিনি উদ্ভাবন করেছিলেন ‘নিষ্ঠুরতার থিয়েটার’, তাঁর জীবন ও দর্শনের সঙ্গে পাঠককে পরিচিত করিয়েছেন ব্রাত্য বসু। জাপানি পরিচালক তাদাশি সুজুকির থিয়েটার দর্শন নিয়ে একটি লেখার অনুবাদ রয়েছে মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলমে। এই দু’টি বিশেষ নিবন্ধ ও অনুবাদ ছাড়াও আছে চারটি প্রবন্ধ। ব্রাত্য বসু লিখেছেন ‘সঙ্গীত ও থিয়েটার’, অরিন্দম ঘোষ লিখেছেন নাট্যমঞ্চে দুই মজুমদারের কাজ নিয়ে। কমলকুমার মজুমদার সাহিত্যিক এবং দীপক মজুমদার কবি হিসেবেই অধিক পরিচিত। কিন্তু তাঁরাও নাটক সম্পর্কে উৎসাহী ছিলেন। কমলকুমার মজুমদার নিজেও বেশ কয়েকটি নাটক লিখেছেন ও পরিচালনা করেছেন। অন্যদিকে হাবিব তনবির এবং গ্রোটস্কির সঙ্গে কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছিলেন দীপক। এসব মনোগ্রাহী তথ্যে ভরপুর প্রবন্ধটি। অন্যধারার থিয়েটার নিয়ে লিখেছেন দেবাশিস রায় এবং ইস্কাইলাস থেকে শুরু করে জন ফসে পর্যন্ত বিশ্বের ১০০ জন নাট্যকারের সঙ্গে পাঠকের পরিচয় ঘটানোর চেষ্টা করেছেন রাহুল দাশগুপ্ত। ব্রাত্য বসু, তীর্থঙ্কর চন্দ, সৌম্য সেনগুপ্ত, অসীম সামন্ত ও গৌতম সেনগুপ্তের লেখা মোট পাঁচটি নাটক প্রকাশিত হয়েছে নাট্যপত্রে। তবে একটি নিয়মিত বিষয় এবারও রয়েছে। গোলটেবিল বৈঠক। থিয়েটারের অর্থনীতি নিয়ে আলোচনায় বসেছেন ব্রাত্য বসু, সৌমিত্র মিত্র, বিলু দত্ত, বিজয় মুখোপাধ্যায় ও ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী।