প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। তবে তা বাস্তবায়িত হওয়াতে সমস্যা আছে। লৌহ ও ... বিশদ
করোনা পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে অনেক হিসেব। তার সঙ্গে তাল রাখতে গিয়ে বদলেছে জীবনযাত্রার মান। ফারাক ঘটেছে প্রয়োজনীয়তার। আগে যে জিনিস না হলেও চলে যেত, এই পরিস্থিতি তাকেই নিত্যসঙ্গী করে তুলেছে। নিউ-নর্মালে শুধু মাস্ক বা স্যানিটাইজারের আমদানিই ঘটেছে এমন নয়, জীবনের আরও নানা খাতের ‘দরকার’-কে সে ‘অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন’ করে তুলেছে। এই যেমন ধরুন রোজ ফিরে পোশাক কাচা। যেসব পরিবারে ওয়াশিং মেশিন ব্যবহারের চল ছিল না, তারাও কিন্তু এখন প্রয়োজনের তাগিদে কাচাকাচির জন্য এই গ্যাজেট কিনছেন। কেউ হয়তো এয়ার পিউরিফায়ার কিনবেন ঠিক করেও এতদিনে কেনেননি। এবার তিনিও নড়েচড়ে বসছেন। বাড়ির পরিবেশে ও হাওয়াবাতাস বিশুদ্ধ রাখার যন্ত্রের দরদাম করছেন। আপনিও কি ভাবছেন এমন কিছু প্রয়োজনীয় গ্যাজেট কেনার কথা? তাহলে নতুন বছরেই তা কিনে ফেলতে পারেন। ইদানীং বছরের শুরুর দিকে অনলাইনে নানা সেল চলে। ফলে প্রয়োজনীয় জিনিসটি কিনে ফেলার সময় কিন্তু এখনই! কোথায় কেমন দামে মিলবে এসব? রইল তার হদিশ।
ওয়াশিং মেশিন: বাড়ি ফিরেই প্রতিদিন জামাকাপড় ভালো করে কাচার নিদান দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। এমন অবস্থায় এই যন্ত্রটি না থাকলে শ্রম বাড়বে আপনারই। তাই বছরের শুরুতেই কিনে ফেলুন ওয়াশিং মেশিন।
কী কী দেখে কিনবেন: যে কোনও বৈদ্যুতিন যন্ত্র কেনার সময় বিদ্যুৎ খরচের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে প্রথমেই। তাই যে যন্ত্রই কিনবেন তা যেন হয় ফাইভ স্টার-যুক্ত। এতে বিদ্যুৎ খরচ কম হয়।
এর পরেই ঠিক করে নিন ওয়াশিং মেশিনটি ফুল অটোমেটিক বা পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় বৈশিষ্ট্যের কিনবেন না কি আধা স্বয়ংক্রিয় বা সেমি অটোমেটিক হবে। সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় কিনলে ধোয়াকাচার কোনও পর্বেই আপনার কোনও কাজ নেই। মেশিন নিজেই পুরো ব্যবস্থাটি সামলে নেবে। কিন্তু আধা স্বয়ংক্রিয় কিনলে অল্প কিছু কাজ আপনার জন্যও বরাদ্দ থাকবে। পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের দাম আধা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের তুলনায় বেশি।
যন্ত্র অনুযায়ী জল-সাবান ও পোশাক ধারণ করার ক্ষমতাও এক এক রকম হয়। পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী ঠিক করে নিন কত কেজি ক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্র কিনবেন। ৫-১০ কেজি ইত্যাদি নানা ওজনের যন্ত্র বাজারে মিলবে। সাধারণত ৩-৪ জন সদস্যের জন্য ৬-৬.৫ কেজি ও ৪-এর বেশি সদস্য সংখ্যা হলে ৭ কেজির কথা ভাবতে পারেন। পরিবারে কাচাকাচি কতটা হয়, তার ওপরও অবশ্য এই মাপ নির্ভর করে। ছোট পরিবার হলে ৫ কেজিও কিনতে পারেন। খুব বড় পরিবার হলে ৮ কেজি বা ১০ কেজিও কিনতে পারেন।
রয়েছে লোডিংয়ের ফারাকও। ফ্রন্ট লোডিং কিনবেন না কি টপ লোডিং এই ধন্দে পড়ার কোনও দরকার নেই। একটু কম জল খরচে পোশাক ভালো করে কাচতে চাইলে ও অপেক্ষাকৃত সহজ ইনস্টলেশন চাইলে কিনতে পারেন টপ লোডিং।
কোন সংস্থারা ভরসাযোগ্য: আজকাল বিভিন্ন সংস্থা অত্যাধুনিক ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়াশিং মেশিনের নানা মডেল বাজারজাত করেছে। তার মধ্যে আইএফবি, গোদরেজ, ওয়ার্লপুল এই সংস্থাগুলোর ওয়াশিং মেশিনের জগতে আলাদা কদর আছে। সম্প্রতি স্যামসাং, এলজি-ও বেশ নাম করেছে এই বিভাগে। সেমি অটোমেটিক বিভাগে প্যানাসনিকও ভালো।
কেমন দাম: সেমি অটোমেটিক বা আধা স্বয়ংক্রিয় ৭ কেজি ও ফাইভ স্টার যন্ত্রের দাম পড়বে ১০ হাজার টাকার মধ্যেই। ৬ কেজির মেশিন কিনলে দাম পড়বে ৮-৯ হাজার টাকার মধ্যে। পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রে ভরসা করলে দাম একটু বাড়বে। ৬-৭ কেজির যন্ত্রের বেলায় তা দাঁড়াবে ১২-১৫ হাজার টাকার মধ্যে। এগুলো সবই টপ লোডিং বা যন্ত্রের ওপর দিকের ঢাকা খুলে পোশাক ভরা যাবে এমন বৈশিষ্ট্য-যুক্ত। ফ্রন্ট লোডিং বা সামনে থেকে পাল্লা টেনে খুলতে হলে সেই যন্ত্রগুলির দাম আর একটু বেশি। সেই মডেল কিনতে গেলে দাম পড়বে ২৫-২৮ হাজার টাকার মধ্যে।
ড্রায়ার ওয়াশার: এটিও মূলত ওয়াশিং মেশিন। কিন্তু তফাত হল এই যন্ত্র শুধু ধোয়াকাচা করে পোশাক নিংড়ে দিয়েই কাজ সারে না, বরং একেবারে ধোপদুরস্ত হয়ে শুকিয়ে বার করে পোশাকগুলো।
কী কী দেখে কিনবেন: এক্ষেত্রেও ফাইভ স্টার সম্পন্ন মেশিন কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ। পরিবারের সদস্য সংখ্যার নিরিখে ওজনও দেখে নিন।
কোন সংস্থারা ভরসাযোগ্য: এই ধরনের যন্ত্র একটু দামি হয়। তাই অফার দেখলেই শুধু কিনে নেবেন না। বরং ভরসা করুন ভালো ব্র্যান্ডে। যেমন, ইকুয়েটর, বশ, আইএফবি ইত্যাদির ওপর ভরসা করতে পারেন।
কেমন দাম: মডেল ও সংস্থা ভেদে দামের হেরফের হয়। ৪৫-৬০ হাজার টাকার মধ্যে এমন যন্ত্র মিলবে।
এয়ার পিউরিফায়ার: এই মরশুমে ঘরের বাতাসকে পরিশুদ্ধ রাখাও অন্যতম কাজ। তাই বছর জুড়ে এয়ার পিউরিফায়ারের চাহিদা ছিলই। বাড়িতে খুদে বা বয়স্ক সদস্য থাকলে এর প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়ে যায়।
কী কী দেখে কিনবেন: ঘরের আকারের ওপর নির্ভর করবে কেমন পিউরিফায়ার প্রয়োজন। বিভিন্ন ওয়াট সম্পন্ন পিউরিফায়ার বাজারে মেলে। থ্রি ও ফোর লেয়ার ফিল্টারওয়ালা পিউরিফায়ার কিনতে পারেন। অনেকে কার্বন ফিল্টারযুক্ত মডেলও পছন্দ করেন।
কোন কোন সংস্থা ভরসাযোগ্য: ফিলিপস, শার্প এয়ার, হ্যাভেলস, কেরিয়ার এয়ার পিউরিফায়ারের জগতে বেশ নামী ব্র্যান্ড। সম্প্রতি কেন্ট ও স্যামসাং এই ধরনের যন্ত্রের বাজারে বেশ খ্যাতি পেয়েছে।
কেমন দাম: আকারে ছোট ও কম বর্গফুটের ঘরের জন্য ৪-৬ হাজার টাকার মধ্যেও এমন পিউরিফায়ার মিলবে। অনলাইনে কিনলে আর একটু ছাড় পেতে পারেন। একটু বেশি ওয়াটের ও বড় ঘরের জন্য যেসব পিউরিফায়ার মেলে সেগুলোর দাম পড়বে ৯-১২ হাজার টাকা। অ্যাক্টিভেটেড কার্বন ফিল্টারযুক্ত হলে দাম গিয়ে দাঁড়াবে ১৪-১৫ হাজার টাকার আশপাশে।
রুম হিটার: ঠান্ডা লাগার ভয় থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই রুম হিটার কেনেন এই সময়। পরিবারে শিশু ও বয়স্করা থাকলে এই যন্ত্র বাড়িতে রাখা প্রয়োজন।
কী কী দেখে কিনবেন: অয়েল ফিলড রেডিয়েটর-যুক্ত রুম হিটার সাধারণ হিটারের তুলনায় একটু দামি হয়। তবে কার্যকারিতায় অয়েল ফিলড রেডিয়েটর-যুক্ত হিটারই বেশি ভালো। এই যন্ত্র কেনার সময় অয়েল ফিলড রেডিয়েটর-যুক্ত কিনা তা যাচাই করে নিন। দেখে নিন কত ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্রটি। তাতে বিদ্যুতের বিলের ওপর তা কতটা প্রভাব ফেলছে সে সম্পর্কেও কিছুটা ধারণা স্পষ্ট থাকবে। ঘর গরম রাখার জন্য এগুলোর অনেকগুলো পাখনা বা ফিন থাকে। পাখনার সংখ্যা বেশি হলে ঘর গরম হবে দ্রুত।
কোন কোন সংস্থা ভরসাযোগ্য: রুম হিটারের জগতে বাজাজ ম্যাজেস্টি, মরফি রিচার্ডস, ওরিয়েন্ট, কেনস্টার, হ্যাভেলস ইথ্যাদি বেশ ভরসাযোগ্য।
কেমন দাম: অয়েল ফিলড রেডিয়েটর ও ৯টি পাখনা যুক্ত রুম হিটারের দাম পড়বে ১১-১২ হাজার টাকা। ১২-১৩ টি পাখনা থাকলে দাম হবে ১৫-১৭ হাজার টাকার মধ্যে।
নতুন বছরে নতুন কেনা কোন যন্ত্রে পরিবারের সুখ বেঁধে দেবেন সেই সিদ্ধান্ত এবার নেওয়ার পালা!