সন্তানের কর্ম সাফল্যে মানসিক প্রফুল্লতা ও সাংসারিক সুখ বৃদ্ধি। আয়ের ক্ষেত্রটি শুভ। সামাজিক কর্মে সাফল্য ... বিশদ
প্রত্যাশা শব্দটার ভার বহন করার ক্ষমতা সকলের থাকে না। পরিবারের বাকি মানুষগুলো বউমার থেকে কিছু না কিছু প্রত্যাশা করবেনই। আর মেয়েটিরও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের থেকে প্রত্যাশা থাকবে। সেখানেই লাগে ঠোকাঠুকি। প্রত্যাশার ভার কমিয়ে ফেলুন প্রথম থেকেই। আপনার পক্ষে যতটা সম্ভব নতুন পরিবারকে সময় দিন। তাঁদের প্রয়োজন, অপ্রয়োজনে পাশে থাকুন। কিন্তু কোনওটাই নিজেকে ছাপিয়ে গিয়ে নয়। আপনি মানুষ হিসেবে যা নন, তেমন ভাবে ব্যবহার করতে চাইলে হয়তো একদিন, দু’দিন আপনি তাদের মন জুগিয়ে চলতে পারবেন। তারপর থেকে সেটা নিজের কাছেই ভার মনে হবে। ফলে ব্যবহারে নিজস্বতা বজায় রাখুন।
বাড়ি বদলেছে। বাড়ির মানুষগুলো বদলেছে। ফলে নিজের অভ্যেসে কিছু বদল আনতেই হবে। সেটাই তো স্বাভাবিক। চিরকাল একই অভ্যেস কারও বজায় থাকে না। ঘুম থেকে আধ ঘণ্টা আগে ওঠা বা সপ্তাহে একদিন নিরামিষ খাওয়ার নিয়ম যদি শ্বশুরবাড়িতে থাকে, তা জোর করে বদলানোর চেষ্টা না করাই বাঞ্ছনীয়। আপনার প্রতিদিন ফল খাওয়ার অভ্যেসও বাকিদের মতো গড়ে তোলার চেষ্টা করে দেখুন তো। ধীরে ধীরে বাকিদের মুখে হাসি ফুটবেই।
আপনি যেদিন কাজের শেষে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরলেন, মায়ের মতোই শাশুড়িও খাবার বেড়ে দিলেন। সেটা তো ভালোলাগা তৈরি করে। ঠিক তেমনই শ্বশুরের প্রয়োজনীয় ওষুধ ফুরিয়েছে কি না খোঁজ রাখুন, ঠিক যেভাবে বাবার যত্ন নিতেন। অথবা ছুটির দিনে শাশুড়ির সঙ্গে বসে চা, পকোড়া খেতে খেতে ছোটবেলার গল্প করুন। দেখবেন এক অন্যধারার বন্ধুত্ব তৈরি হবে।
সংসারে সমস্যা তৈরি করতে কখনও প্রতিবেশী, কখনও বা আত্মীয়রা ফোড়নের কাজ করে। আপনার অগোচরে বাকিদের কাছে আপনার সমালোচনা করে এবং তাঁদের অগোচরে আপনার সঙ্গেও এই ধরনের আলোচনার ফুরসত খোঁজেন, এমন মানুষ চারপাশে আছেন। মনে রাখবেন, এই ধরনের টক্সিক আলোচনাকে পাত্তা দেওয়া মানে শান্তি নষ্ট। এদের কথা যাচাই করে নিতে হবে। প্রয়োজনে যাঁকে নিয়ে সমালোচনা শুনেছেন, তাঁকে সরাসরি জিজ্ঞেস করুন।
তুলনা করবেন না। প্রতিটি পরিবারের নিজস্ব কিছু ধারা রয়েছে। তা একদিনে বদলে ফেলা যায় না। কিছু অপছন্দ হলে যুক্তি দিয়ে বলুন। কিন্তু বাবা, মায়ের বাড়িতে ওটা হতো, এখানে হয় না, এই বিশ্লেষণ কার্যকরী নয়।
মান-অভিমান যে কোনও সম্পর্কে স্বাভাবিক। নতুন পরিবারে এসে যদি এমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়, তার সহজ সমাধান খুঁজতে হবে। রাগ পুষে রাখবেন না। আর যদি দেখেন, সেই সমস্যার সমাধান আপনার হাতে নেই, তাহলে সময় দিন। ধৈর্য ধরে
অপেক্ষা করুন।
আপনার জীবনসঙ্গী এই পরিবারে বড় হয়েছেন। ফলে পরিবারের মানুষগুলোকে সম্মান করতে হবে। আপনিও এই পরিবারের সদস্য। অতিথির মতো বাড়িতে থাকবেন না। নানা বিষয়ে পরামর্শ দিন। কিন্তু পরিস্থিতি বুঝে। আপনার পরামর্শ গ্রাহ্য না হতেই পারে। কিন্তু তাতে নিজেকে এই পরিবারের থেকে আলাদা ভাববেন না। বরং যুক্তি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করুন, কীভাবে আপনার পরামর্শ সংসারে কাজে লাগতে পারে। ভবিষ্যতে সেই যুক্তি অনুযায়ী পরামর্শ দিতে পারবেন।
শিশুদের সঙ্গে সহজেই বন্ধুত্ব হয়ে যায়। নতুন পরিবারের ছোট সদস্যদের সঙ্গে জমাটি বন্ধুত্ব করে ফেলুন। অনেক পরিস্থিতি এমনিই সহজ হয়ে যাবে।
মহার্ঘ্য উপহার নয়। বরং আপনার সময়টাই দামি। বাড়ির সদস্যদের সময় দিন। পরিস্থিতি ম্যানেজ করতে দামি গিফট কোনও সমাধান হতে পারে না। বরং সময় দিয়ে তাঁদের আপন করে নিন।
সম্পর্কের বয়স বেশি হলে শ্বশুরবাড়ির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পরিচয় নতুন নয়। ফলে কার কী অভ্যেস, কে কী ভালোবাসেন, তা সম্পর্কে সম্যক ধারণা রয়েছে। কারও নিত্যনতুন বই পছন্দ। কেউ বা নতুন ধরনের খাবার খেতে পছন্দ করেন। কারও আবার হাল ফ্যাশনের দিকে নজর। রুচি অনুযায়ী সেই পছন্দ-অপছন্দের দিকে নজর দিন। নতুন সদস্যদের রুটিনের সঙ্গে এবার আপনার অভ্যেসের ভারসাম্য বজায় রাখাই কাজ।
স্পেস দেওয়া যে কোনও সম্পর্কের ক্ষেত্রেই অত্যন্ত জরুরি। সে আপনার স্বামীই হোন বা নতুন পরিবারের অন্য কোনও সদস্য। কেউ আবার ইন্ট্রোভার্ট হন, সম্পূর্ণ প্রাইভেট পার্সন। ফলে তাঁর মেজাজ বুঝে কথা বলাই শ্রেয়। কেউ যদি আপনার উপস্থিতি অপছন্দ করেন, তাঁকে জোর করবেন না। সময় দিন, ঠিক হয়ে যেতে পারে।
মানিয়ে নেওয়া এবং মেনে
নেওয়ার মধ্যে বিস্তর ফারাক। আপনার কাছে এই পরিবার যেমন নতুন। আপনিও তাঁদের কাছে আদরের। অপমানজনক কোনও ঘটনা ঘটলে, আত্মসম্মানে আঘাত লাগলে প্রতিবাদ করা জরুরি। সবটা মেনে নিয়ে কিন্তু ভালো থাকা যায় না। প্রয়োজনে মুখ খুলতে হবে। কিন্তু তা কাউকে অসম্মান করে নয়।