সন্তানের কর্ম সাফল্যে মানসিক প্রফুল্লতা ও সাংসারিক সুখ বৃদ্ধি। আয়ের ক্ষেত্রটি শুভ। সামাজিক কর্মে সাফল্য ... বিশদ
শুধু শৌর্যই বা বলছি কেন? শিশুদের বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে অভিভাবকদের প্রধান যে সমস্যাগুলির মুখোমুখি হতে হয়, তার অন্যতম এই মিথ্যে বলার প্রবণতা। বয়স যত টিনএজ-এর দিকে এগতে থাকে, ততই এই প্রবণতা বাড়ে।
যদিও বিহেভিয়ারাল থেরাপিস্ট ও মনোবিদদের মতে, এই মিথ্যে বলার শুরুটাই হয় ভয় থেকে। ‘বড়রা বকবে’ এই ধারণা থেকেই শিশুরা প্রথম মিথ্যে বলা শুরু করে। কখনও বা কল্পনা থেকে অতিরঞ্জন করে আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকার মনোভাব থেকেও মিথ্যে জন্ম নেয়। ধীরে ধীরে তা-ই অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যায়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অমিতাভ মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘এমনিতেই জীবনে চলার পথে নানা সময়ে বাধ্য হয়ে বা কোনও বড় বিপদ বা ক্ষতি থেকে বাঁচতে টুকটাক মিথ্যে কখনও সখনও বলতেই হয়। অন্য বড় ক্ষতি রুখতে ছোটখাট কিছু মিথ্যে আমাদের রক্ষাকবচ হয়ে দাঁড়ায়। তবে অকারণে বাড়িয়ে বলার প্রবণতা, অহেতুক মিথ্যে বলা একটা অসুখ। ছোটদের ভালো-মন্দ বোঝার বোধ কম। তাই বড়রা প্রথম থেকেই এই বিষয়ে সচেতন থাকলে, একে নেহাতই ‘ছেলেমানুষি’ বলে না দেখলে এই মিথ্যে বলার স্বভাব অনেকটাই প্রতিহত করা যায়। এক একজন শিশু ছোট থেকে এই স্বভাবে অভ্যস্ত হতে হতে একদিন বড় মিথ্যেবাদীতে পরিণত হয়। মস্তিষ্কের বিকাশ ও বুদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অপরাধ করার বোধটিও বাড়ে। মিথ্যের আশ্রয় নেওয়া শিশু সহজেই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তাই ছোটবেলা থেকে অভিভাবকরা তার এই মিথ্যে বলাকে প্রশ্রয় দিলে বা সেই বদভ্যাসকে গুরুত্ব না দিলে ছোটরাও মিথ্যে বলাটাকে অপরাধের মধ্যে ধরতে শেখে না। তাই ছোটদের এই বদভ্যাসকে অবহেলা না করাই শ্রেয়।’
উপায় কী
অনেক মা-বাবাই সন্তান মিথ্যে বলছে দেখলে চট করে গায়ে হাত তোলেন। তবে কিছু বিষয় অন্তর থেকে ‘ভুল’ হিসেবে যদি শিশু বোঝে, তবেই সে সেই বদভ্যাসে রাশ টানতে পারবে। তাই শাসন বা মারধরে না গিয়ে তার ভুল শুধরে দিন কয়েকটি উপায়ে।
অভিভাবকরা মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে থাকেন অনেক সময়। নানা ক্ষেত্রে দেখা যায়, সন্তানের কোনও বন্ধু স্কুল যায়নি বলে ক্লাস নোটস বা কোনও খাতা চাইছে। সেখানে তার মা-বাবা বন্ধুকে সাহায্য না করতে শেখাচ্ছেন। নোটস বা খাতা না দেওয়ার ছুতোয় নানা মিথ্যে অজুহাত শেখাচ্ছেন। শিশু মনে করছে, এই ধরনের মিথ্যেগুলো হয়তো স্বাভাবিক। অনেক সময় সে তার মা কিংবা বাবাকে একে অন্যের কাছে খুব বড়সড় মিথ্যে বলতে শোনে। শিশুর বোঝার শক্তি কিন্তু সকলের চেয়ে বেশি। তাদের দেখার ক্ষমতা, বোঝার ক্ষমতাও অনেক শক্তিশালী। তাই ‘ও কিছু বুঝবে না’ ভেবে যাঁরা ওর সামনেই মিথ্যে বলেন, তাঁরাই আসলে ওর ভিতরে মিথ্যের বীজ রোপণ করে দেন। তাই সন্তানের সামনে নিছক মজার ছলে বলা মিথ্যে ছাড়া অন্য সব ধরনের মিথ্যে এড়িয়ে চলুন।
ছোট থেকেই শিশুকে নানা মনীষীদের গল্প, নীতিকথামূলক কাহিনি পড়ে শোনান। মনীষীদের জীবনীমূলক গল্প, ঈশপের গল্প ইত্যাদি শোনান। ভালোমানুষরা যে মিথ্যে বলে না এটা গোড়া থেকে বোঝাতে হবে। শিশুরা সংবেদনশীল। মিথ্যে বলাটা আসলে ঘৃণাযোগ্য অপরাধ, ও তা বললে মা বাবা কষ্ট পাবে এটা বোঝাতে পারলে
মিথ্যে বলার স্বভাবে রাশ টানা যাবে।
মানুষ তার সঙ্গ ও বন্ধুবান্ধবদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। সন্তান কাদের সঙ্গে মিশছে সেদিকে খেয়াল রাখুন। যদি তাদের মধ্যে কারও মিথ্যা বলার প্রবণতা থাকলে তা যেন আপনার শিশুকে প্রভাবিত করতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
পারিবারিক জটিলতা, অশান্তি, নানা দোষারোপ ও পরনিন্দা করার স্বভাব থাকলে সন্তানের সামনে তা এড়িয়ে চলুন। মা বাবা যার নামে আড়ালে খারাপ মন্তব্য করেন, তাঁর সঙ্গে দেখা হলেই ভালোবাসার অভিনয় করছেন— এমন দেখলে শিশুরা দ্বন্দ্বে ভোগে ও মিথ্যে আচরণ আঁকড়ে ধরে। অনেক সময় দেখা যায়, যে শিশু একটি সুস্থ শৈশব পায় না, তার মধ্যে অপরাধপ্রবণ ও মিথ্যেবাদী হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাই নিজেদের পারিবারিক সমস্যা, কলহ শিশুর থেকে যত দূরে রাখবেন, ততই ভালো থাকবে আপনার সন্তান।
কল্পনায় ভয় নেই
কোনটা মিথ্যে আর কোনটা কল্পনা করে বলছে, এটা বুঝতে হবে বাবা মাকে। ছোটদের কল্পনার মন নির্ধারিত। একটু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারাও বাস্তব বোধসম্পন্ন হয়। তাই শিশুমনের কল্পনাকে মিথ্যের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না। বরং তাকে কল্পনা করতে সাহায্য করুন, এতে তার সৃজনশীলতা বাড়বে। নিজেরা কল্পনা ও মিথ্যের ফারাক করতে না পারলে এবং কোনওভাবেই শিশুর মিথ্যে আটকাতে না পারলে মনোবিদের দ্বারস্থ হোন। কোন মিথ্যে তার চরিত্রগঠনে ক্ষতি করছে তা চিহ্নিত করে শুধরে নেওয়ার পথ প্রশস্ত করতে সাহায্য করবেন তিনি।