পেশা ও ব্যবসায় অর্থাগমের যোগটি অনুকূল। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ... বিশদ
স্বভাবতই, জাতীয় নির্বাচন কমিশন ভারতের ভোটে খরচে রাশ টানতে উদ্যোগী হয়েছে। এইরূপ নিয়ন্ত্রণ জারির আরও একটি উদ্দেশ্য হল, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নে লাগাম পরানো। কারণ ভোটে খোলামকুচির মতো খরচের টাকা কখনোই স্বচ্ছ পথে আসা সম্ভব নয়। সেগুলি কিছু রাজনৈতিক দল দুর্বৃত্তির মাধ্যমেই আত্মসাৎ করে। এই কালো টাকার একাংশ ব্যয় হয় নির্বাচনে সরাসরি কারচুপি করতে এবং বাকিটা ভোটারদের একটি অংশকে ‘কিনতে’। এখানেই চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়েছে ইলেক্টোরাল বন্ড। আমরা জানি, ভোটে কালো টাকার ওড়াউড়ি বন্ধ করার অজুহাতে মোদি সরকারই নির্বাচনী বন্ড চালু করেছিল। এই আজগুবি ‘স্বচ্ছ’ সরকারি ব্যবস্থা চালুর পর দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে অনেকগুলি নির্বাচন। মোদি সরকারের অন্ধ সমর্থকরাও দাবি করতে পারবেন না, উক্ত নির্বাচনের একটিতেও কালো টাকার ছড়াছড়ি হয়নি। ঠিক যেমন কোনও নাগরিক দেখেননি—নোটবন্দি কিংবা জিএসটি চালুর পর কালো টাকার কারবারিরা দমেছে বলে। মোদি সরকারের ওয়ান পয়েন্ট এজেন্ডা হল ‘ভ্রষ্টাচার’ দমন। বিজেপির অভিযোগ, সরকারের এই ‘মহৎ’ উদ্দেশ্য সাধনের প্রধান অন্তরায় বিরোধী দলের বা সিঙ্গল ইঞ্জিন রাজ্য সরকারগুলি। এজন্য তারা চায় দেশের সর্বত্র ডাবল ইঞ্জিন সরকার। কিন্তু ভোটের লাইনে দাঁড়াবার আগেই জাতীয় নির্বাচন কমিশন প্রমাণ দিল, নির্বাচনকে সামনে রেখে কালো টাকার কারবারে আসল ‘চ্যাম্পিয়ন’ ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলিই!
সোমবার কমিশন জানিয়েছে, ১ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে বাজেয়াপ্ত হওয়া নগদ ও অন্যান্য সামগ্রীর সর্বমোট অর্থমূল্য ৪,৬৫৮ কোটি টাকা। ৩৯৫ কোটি টাকা নগদের পাশাপাশি উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ উপহার, মূল্যবান অলংকার, মাদক দ্রব্য, মদ প্রভৃতি। এসব যে জায়গা বুঝে ভোটার এবং ‘ভোট-শিল্পীদের’ মধ্যে বণ্টনের উদ্দেশ্যেই জড়ো করা হয় তা নিয়ে সংশয় কিংবা বিতর্কের অবকাশ নেই। কমিশন জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যেই যা বাজেয়াপ্ত করেছে তাতে ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার ইতিহাসের যাবতীয় কালো রেকর্ড! আরও মজার খবর হল, ভোটকে প্রহসনে পরিণত করার এই মতলবি খেলায় সবচেয়ে ‘এগিয়ে’ তিন রাজ্যের নাম রাজস্থান, গুজরাত ও মহারাষ্ট্র! বলা বাহুল্য, এই তিন রাজ্যেই গড়গড়িয়ে চলছে মোদিজির সাধের ডাবল ইঞ্জিন সরকার এবং তার মধ্যে স্বয়ং মোদি-শাহ জুটি হলেন গুজরাতের ভূমিপুত্র। মানুষের কাছে এখান থেকেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে, মোদিজিরা মানুষের মন জয়ের জন্য উন্নয়নে কোনও আস্থা রাখেননি, কেবল ভ্রষ্ট বাঁকাপথেই তাঁরা স্বচ্ছন্দ। গেরুয়া শিবির একইসঙ্গে বেছে নিয়েছে গরিবের সঙ্গে শত্রুতার লাইন। যেমন—বাংলার গরিব মানুষকে মনরেগায় কাজ ও টাকা প্রদান বন্ধ করেছে কেন্দ্র এবং আটকে দিয়েছে পাকা বাড়ি তৈরির আবাস যোজনা। বাংলার গরিব মহিলাদের আর্থিক স্বনির্ভরতার পরিসর বৃদ্ধির জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার চালু করেছে। মাথাপিছু অনুদানের পরিমাণটি দ্বিগুণও করা হয়েছে সম্প্রতি। এ নিয়েও গাত্রদাহ বিজেপির। তাদের এক নেতা ও নেত্রী রীতিমতো নির্বাচনী মঞ্চ থেকে ঘোষণা করে দিয়েছেন, বাংলায় তাঁদের শক্তিবৃদ্ধি হলে তাঁরা সটান বন্ধ করে দেবেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার এবং ফেলে দেবেন গরিব-দরদি তৃণমূল রাজ্য সরকারকেও! বস্তুত বঙ্গ বিজেপি ‘সিলমোহর’ দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশঙ্কাতেই। এসবই যে দলের রেকর্ড এবং রাজনৈতিক ভাবনা ও দর্শন—বাংলার মানুষ ভোটযন্ত্রে তাকে কী ‘ট্রিটমেন্ট’ দেবে, তা এখন থেকেই ভাবতে থাকুক বিজেপি।