পেশা ও ব্যবসায় অর্থাগমের যোগটি অনুকূল। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ... বিশদ
সৈনিক স্কুলগুলি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবেই সমাদৃত। ২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুসারে, দেশের প্রতি পাঁচজন সেনা অফিসারের একজন কোনও না কোনও সৈনিক স্কুলের প্রাক্তনী। এই তথ্য থেকেই জাতীয় ক্ষেত্রে সৈনিক স্কুলগুলির গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে যায়। শুধু শিক্ষাই নয়, তার পাশাপাশি দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মজবুত রাখার ব্যাপারেও এই প্রতিষ্ঠানগুলির ভূমিকা অনবদ্য। একটি গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে শিক্ষা এবং প্রতিরক্ষা বিভাগের কাছে সব মানুষের বিরাট প্রত্যাশা: প্রথমত, তারা সকলের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক সুশিক্ষার ব্যবস্থা করবে। সেই শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তিই হবে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদ এবং নিরপেক্ষ ইতিহাস ও সমাজ চেতনা। তার ভিতরে কোনওরকম কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িক ভাবনা, বৈষম্য প্রভৃতির ন্যূনতম ঠাঁই হবে না। এমন আধুনিক ও মুক্ত চিন্তাধারায় বেড়ে ওঠা ছেলেমেয়েরাই পারবে দেশের নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে। শুধু বাইরের শত্রুর মোকাবিলাই নয়, অভ্যন্তরের নানা বিপদেও তারা সব নাগরিকের স্বার্থ রক্ষায় নিজেদের সঁপে দিতে সাহসী হবে। কিছু রাজনৈতিক দল ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক বিভাজনে ইন্ধন দিলেও সেই বজ্জাতি জব্দ হতে পারে আধুনিক চেতনার হাতে।
কিন্তু উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের আদর্শে পরিচালিত বিজেপি সরকার যে সেই পথের পথিক নয়, তার নয়া নমুনা পেশ করল তারা সৈনিক স্কুল নিয়ে। রিপোর্টার্স কালেকটিভের আরটিআই-তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, এবার বহু সৈনিক স্কুল পরিচালনার দায়িত্ব আরএসএস এবং তাদের সহযোগী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের হাতে তুলে দিচ্ছে মোদি সরকার। ২০২২ সালের আগে পর্যন্ত কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি যৌথভাবে ৩৩টি সৈনিক স্কুল চালাত। পরিচালনার মূল দায়িত্ব সেখানে ছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীন স্বশাসিত সংস্থা সৈনিক স্কুল সোসাইটির (এসএসএস) উপর। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবরে মোদি সরকার স্কুলগুলি পিপিপি মডেলে চালাবার সিদ্ধান্ত নেয়। তার জন্য এসএসএস-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন। ফলে স্কুলগুলি তারাই চালাবার অধিকারী হয়েছে। এই ফর্মুলায় ২০২২-২৩ সালের মধ্যে অন্তত ৪০টি সৈনিক স্কুলকে সঙ্ঘ ও বিজেপি নেতা এবং তাদের সহযোগীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এই বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস হতেই শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। এই অন্যায় ব্যবস্থা প্রাক্তন সেনা কর্তাদেরও চোখে ‘প্রতিরক্ষায় প্রত্যক্ষ গেরুয়াকরণ’ বলে নিন্দিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রায় খতম হয়ে গিয়েছে। খাবি খাচ্ছে বহুদলীয় গণতন্ত্র। বাকি ছিল শিক্ষা এবং প্রতিরক্ষা। মোদির ইলেক্টোরাল অটোক্রেসির সৌজন্যে শেষোক্ত দুটিরও দফরফা হয়তো সময়ের অপেক্ষা। দেশ ইতিমধ্যেই সাধারণ নির্বাচনের আবহে প্রবেশ করেছে। ভোটযন্ত্রে পছন্দের প্রার্থীর নামে বোতাম টেপার সুযোগ অদূরেই। শান্তিপ্রিয়, গণতন্ত্রপ্রিয় দেশবাসীকেই এবার সুচিন্তিত সিদ্ধান্তটি নিতে হবে—তাঁরা আত্মরক্ষার শেষ সুযোগটি নেবেন নাকি পরীক্ষিত মোদিতন্ত্রের কাছেই আত্মসমর্পণ করবেন অসহায়ের মতো।