পেশা ও ব্যবসায় অর্থাগমের যোগটি অনুকূল। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ... বিশদ
কোনও শাসকগোষ্ঠীর ইস্তাহার মানে, গত পাঁচ বছরের শাসনে কী হয়েছে এবং আগামী পাঁচ বছরে কী কাজ করার পরিকল্পনা তা সবিস্তারে বলা। এ নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই যে মোদির দশ বছর রাজত্বের পর দেশের সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারত্ব। অথচ মূল্যবৃদ্ধি মোকাবিলায় কালোবাজারি ও মজুতদারি বন্ধে কড়া পদক্ষেপ করার প্রতিশ্রুতি ছিল আগের ইস্তাহারে। আগে প্রতিশ্রুতি ছিল, কর্মসংস্থানের বাজার তৈরি করে বছরে ২ কোটি বেকারকে চাকরি দেওয়া হবে। বলা হয়েছিল, বিদেশ থেকে কালো টাকা উদ্ধার করে প্রত্যেক নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা জমা দেওয়া হবে। আরও প্রতিশ্রুতি ছিল, কৃষকের আয় দ্বিগুণ হবে। এসবের কোনওটাই যে পূরণ করা হয়নি তা ভুক্তভোগী আম জনতা জানে। এসব প্রতিশ্রুতিভঙ্গ নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য নেই ‘মোদির গ্যারান্টি’তে। তাই এবার মোদির গ্যারান্টি লেখা ইস্তাহার বা সংকল্প পত্রে চাকরির কোনও গ্যারান্টি নেই। গরহাজির বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি—শব্দ দুটোই। ভোটের আগে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে ফের যুব-মহিলা-কৃষকদের স্বার্থরক্ষার কথা বলা হলেও আগের প্রতিশ্রুতিগুলি যে রক্ষা করা হয়নি, তা নিয়ে কোনও শব্দ খরচ করা হয়নি এবারের ইস্তাহারে। শব্দ চয়নের মারপ্যাঁচে মানুষের মন ভেজানোর চেষ্টা করে ২০৪৭ সালে কী হতে চলেছে সেই স্বপ্ন ফেরি করা হয়েছে! আগামী পাঁচ বছরে বিজেপি কী করবে তা যতটা না গুরুত্ব পেয়েছে তার থেকে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে বাস্তব নির্মম সত্যকে আড়াল করার প্রচেষ্টা। নয়া মোড়কে এমন সব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে যা প্রমাণ করে দিচ্ছে অতীতের প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি মোদি সরকার। যেমন বলা হয়েছিল ২০২২ সালের মধ্যে সবার মাথার উপরে থাকবে পাকা ছাদ। তা যে হয়নি তা বলে দিচ্ছে এবারের গ্যারান্টি, যেমন তিন কোটি পাকা বাড়ির প্রতিশ্রুতি। কত মানুষ এখনও ফুটপাতে দিন গুজরান করেন সেই সত্যটা আড়ালে থেকে গেল! এমন অনেক উদাহরণই আছে।
‘মোদি কি গ্যারান্টি’ আসলে প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের ইস্যুগুলি নিয়েই ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার। এর মধ্যে রয়েছে সিএএ, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, এক দেশ এক ভোট ইত্যাদি বিষয়। ইস্তাহারে তাৎপর্যপূর্ণভাবে উল্লেখ আছে রামমন্দিরের কথা। অথচ কৃষকের স্বার্থরক্ষার্থে নেই ফসলের ন্যূনতম সহায়কমূল্য অর্থাৎ এমএসপি আইনের প্রসঙ্গ। মোদির ‘গ্যারান্টির’ ইস্তাহারটি আসলে অতীতের মতোই বিজেপি-আরএসএস-এর এজেন্ডা পূরণের ‘গ্যারান্টি’, যে প্রতিশ্রুতিতে আম-আদমির জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের দিশা নেই। মোদির দশ বছরের রাজত্বে সাধারণ মানুষকে যে দুর্বিষহ জীবন সংগ্রাম চালাতে হচ্ছে তা অতীতের কোনও প্রধানমন্ত্রীর আমলেই হয়নি। তাঁর আধুনিক শক্তিশালী ভারত গঠনের চমকপদ প্রচারে কিন্তু ঢাকা পড়ছে না বাস্তব প্রশ্নগুলি। ২০১৪ এবং ২০১৯-এর ভোটের আগে গেরুয়া শিবির যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার কতটা পালন করেছে সে প্রশ্ন উঠবেই। এই অপ্রিয় প্রশ্নের মুখোমুখি না হয়ে প্রকৃত সমস্যা থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা হয়েছে এবারের সংকল্প পত্রে। ’২৪-এ দাঁড়িয়ে ‘মোদি কি গ্যারান্টি’র প্রচারের আলোকে ’৪৭-এর কথা! তখন আজকের বিজেপি নেতারা কোথায় থাকবেন বা আদৌ দল ক্ষমতায় থাকবে কি না, এ ‘গ্যারান্টি’ কে দেবেন? ঈশ্বরের ‘বরপুত্র’ ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা ‘নমো’ কি সেই ‘গ্যারান্টি’টাও দেবেন আম জনতাকে?