পেশা ও ব্যবসায় অর্থাগমের যোগটি অনুকূল। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ... বিশদ
পরবর্তীকালে এক সাক্ষাৎকারে ইন্দিরা এসব নিয়ে খুবই আপশোস করেন। তিনি বলেন, ওইসব নিরপরাধ কংগ্রস কর্মীকে কারামুক্ত করতে তাঁকে অনেক বেগ পেতে হয়। আরও একটি ব্যাপার লক্ষণীয় যে, এই মওকায় বহু বদমাশ শ্রেণির লোক জার্মানি প্রভৃতি পশ্চিমা দেশে বাগিয়ে নেয় ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’। জরুরি অবস্থার চূড়ান্ত অপব্যবহার করে পুলিসও। রীতিমতো গুছিয়ে নেওয়া একাধিক নেতা পরে দাবি করেন, তার সঙ্গে জরুরি অবস্থার কোনও সম্পর্ক নেই। জরুরি অবস্থা জারির প্রয়োজন কেন অনুভব করেছিলেন ইন্দিরা? দেশ দীর্ঘকালের পরাধীনতা থেকে মুক্ত হলেও দেশবাসী বোঝেনি ‘স্বাধীনতা’ বলতে ঠিক কী বোঝায়? অনেকের কাছে স্বাধীনতা মানে যা-খুশি করে বেড়ানো। তারা শুধু সুবিধা ভোগ করতে চায়, কিন্তু তার বিপরীতে যে দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ বলে একটা জিনিস আছে সেটা তারা স্বীকার করে না। এর জন্যই সৃষ্টি হয়েছিল অভ্যন্তরীণ গোলযোগ। পরবর্তীকালে ইন্দিরা দাবি করেন, কিন্তু সেসব থামানোর জন্য তিনি সরাসরি ‘ইমারজেন্সি’ ঘোষণা করতে চাননি। তাঁর দুই দায়িত্বশীল এবং আইনজ্ঞ মন্ত্রীর পরামর্শেই তিনি ওই সিদ্ধান্ত নেন। ওই দুই আইনবিশারদের বক্তব্য ছিল, ইমারজেন্সি হবে সংবিধানসম্মত! অতএব সংবিধান লঙ্ঘনের চিন্তা তাঁর মাথাতেই ছিল না। ইন্দিরার আক্ষেপ, পরবর্তীকালে একজন আইনি কুপরামর্শদাতা অবশ্য ওই দায়িত্বের কথা বেমালুম অস্বীকার করেন। ২১ মাসের ইমারজেন্সিতে নাগরিক অধিকার, ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং মানবাধিকার হরণের জন্য ইন্দিরাকে চরম রাজনৈতিক মূল্য চোকাতে হয়। সাতাত্তরের সাধারণ নির্বাচনে দেশবাসী ইন্দিরার পার্টিকে ছুড়ে ফেলে দেয়, স্বাধীনতার পর প্রথমবার ক্ষমতাচ্যুত হয় কংগ্রেস। এমনকী, রায়বেরিলিও ফিরিয়ে দেয় ইন্দিরাকে, সেবার গোহারা হন তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষী পুত্র সঞ্জয়ও!
উত্তরকালের রাজনীতির সামনে ঘরের এত বড় পাঠ থেকে কতটুকু শিক্ষা নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি? ২০১৪ সালের ভোট প্রচার থেকে তিনি লাগাতার ‘ভ্রষ্টাচারের’ বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হুংকার দিয়ে চলেছেন। কিন্তু তাঁর দশ বছরের শাসনকালে দেশ থেকে দুর্নীতি যে কিছুমাত্র দূর হয়নি, এই উপলব্ধি তাঁর চেয়ে বেশি কারও হওয়ার কথা নয়। একইসঙ্গে তিনি আরও জানেন, দুর্বৃত্তায়নের ফাঁসে আরও বেশি করে লটকে যাচ্ছে দলীয় রাজনীতি। তার জন্য একক কৃতিত্ব ‘অপারেশন লোটাস’ ছাড়া কেই-বা দাবি করতে পারে? মোদির ঘোষিত লক্ষ্য ছিল ‘কংগ্রেস-মুক্ত’ ভারত, অঘোষিত লক্ষ্যের নাম ‘বিরোধী-মুক্ত’ ভারত। কিন্তু সেই অন্যায় পথে হাঁটতে গিয়ে গোটা দেশটাই পদ্ম-বিরোধী হয়ে উঠছে, এই বোধ হচ্ছে না তাঁর! বিরোধীদের শায়েস্তা করে পাকানো হাত জায়গায় জায়গায় প্রকৃত গেরুয়া ভক্তদের গায়েও পড়ছে না কি? ঘোলা জলের ফায়দা লুটছে না কি কিছু ধান্দাবাজ বিজেপি নেতা এবং কেন্দ্রীয় এজেন্সির মাতব্বর? এখানেই মস্ত প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছে মোদির রাজনৈতিক প্রজ্ঞা। এর মাশুল কি ইন্দিরা গান্ধীর মতোই গুনে দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন তিনি? যেসব পণ্ডিতজনের পরামর্শে তাঁর এই ভয়ানক দাপাদাপি, পরে তাঁদের টিকিও খুঁজে পাবেন তো? গ্যারান্টি দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি?