পেশা ও ব্যবসায় অর্থাগমের যোগটি অনুকূল। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ... বিশদ
রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন ভারতীয় গণতন্ত্রের মস্ত সমস্যা। নাগরিক সমাজ যখন এর থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজছে মরিয়া হয়ে, ঠিক তখনই বিপরীত বুদ্ধি দ্বারা চালিত হচ্ছে বিজেপি। একজন শিশুও বোঝে, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন ও অর্থায়ন ছাড়া অপারেশন লোটাসের মতো জঘন্য সংস্কৃতি ডালপালা মেলতে পারে না। কিন্তু এই বেহিসেবি টাকার উৎস কী? কিছু অসৎ ব্যবসায়ী এবং একাধিক শিল্প গোষ্ঠীকে নানাবিধ সরকারি সুবিধা পাইয়ে দেওয়া। যেমন ব্যাঙ্কঋণ খেলাপিদের একাংশের মোটা অঙ্কের দেনা মকুব করে দেওয়া হয়েছে। তাতে জনসাধারণের ব্যাঙ্ক ধুঁকলেও চিন্তা নেই। গত একদশকে ধনবৈষম্য ভয়াবহ আকার নেওয়ার নেপথ্যে রয়েছে এই কারসাজি। এর পরেই উল্লেখ করতে হয় মোদি সরকারের আজগুবি স্বচ্ছতার পাঠ ইলেক্টোরাল বন্ডের কথা। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলিকে যে যত খুশি টাকা দাও কাকপক্ষীও টের পাবে না! তবে শেষমেশ শীর্ষ আদালত এই ভণ্ডামি বরদাস্ত করেনি। আদালতের উপর্যুপরি গুঁতুনির ঠেলায় সরকার দমে যেতে বাধ্য হয়েছে এবং স্টেট ব্যাঙ্কও অসহায়ের মতো ফাঁস করেছে আসল রহস্য। তার ফলে এটাই সামনে এসে গিয়েছে যে, কেন্দ্রীয় শাসক দলই দু’হাতে কুড়িয়েছে ‘বন্ডফল’। এমনকী, কোনও কোনও সংস্থা তার লাভের প্রায় ১০০ গুণ বেশি টাকার বন্ড কিনে দিয়েছে বিজেপিকে! বিজেপিকে দু’হাত ভরে চাঁদা দেওয়া কোনও কোনও কোম্পানি সরকারকে কানাকড়িও কর দেয় না কিংবা তারা বিপুল পরিমাণ কর মকুবের সুবিধা পেয়েছে। সরকারি কাজের বরাত বণ্টনের তালিকাতেও ‘উজ্জ্বল’ নাকি বিজেপির প্রতি দরাজহস্ত একাধিক কোম্পানি। স্টেট ব্যাঙ্কের তালিকা অনুযায়ী, এরকম পাঁচটি বিতর্কিত সংস্থা মিলেই শাসককে দিয়েছে ৬০০ কোটি টাকা।
বন্ডের জাদু-তথ্যাদি সাজিয়ে সোমবার রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ)। জামিনে মুক্ত হওয়ার পর থেকেই একের পর এক আঘাত হেনে আপ এমপি সঞ্জয় সিং এই ‘সীমাহীন দুর্নীতি’র জবাব চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীরই কাছে। আমরা জানি, আপের প্রধান নেতাদের ফাটকে ভরা হয়েছে। কেন্দ্রীয় এজেন্সি হাতা গোটাচ্ছে তাদের বাকি গুরুত্বপূর্ণ নেতাদেরও সবক শেখাবার জন্য। আপের অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়ার নয় যে, তারা মোদির কাছে নত হয়নি বলেই তাদের উপর এমন খাঁড়া নেমে এসেছে। মোদির অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের অর্থনীতিবিদ স্বামী পরকাল প্রভাকর আগেই মন্তব্য করেছিলেন, ‘মোদি সরকারের আবিষ্কার নির্বাচনী বন্ডই হল বিশ্বের বৃহত্তম দুর্নীতি!’ ‘স্বাধীনতার পর সর্ববৃহৎ দুর্নীতিবাজ দলের নাম বিজেপি’—সঞ্জয় সিংয়ের বিস্ফোরক দাবিটি তার সঙ্গেই সাযুজ্যপূর্ণ। সত্যিই তো, দেশের অর্থনীতিকে ডুবিয়ে মেরে ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে গেরুয়া অর্থভাণ্ডার কানায় কানায় ভরাবার অনাচার হয়েছে এই আমলে! পশ্চিমবঙ্গসহ ‘সিঙ্গল ইঞ্জিন’ রাজ্যগুলির গরিব মানুষের একাধিক প্রকল্পের টাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ এনে। শত চেষ্টাতেও সেই বহু চর্চিত দুর্নীতির প্রমাণ দিতে পারেনি নয়াদিল্লি। উল্টে কয়েকটি বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রী, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, একাধিক বিভাগীয় মন্ত্রী এবং নানা ধরনের পদাধিকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে নির্বিচারে। ভোট যত এগিয়ে আসছে বিরোধীদের এই কায়দায় দুরমুশ করার তৎপরতা বেপরোয়া হয়ে উঠছে ততই। রাজনৈতিক মহলের খবর—দিল্লি, বাংলা, বিহার, ঝাড়খণ্ড, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক প্রভৃতি বহু জায়গায় গোহারা হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছে বিজেপি। তাহলে ‘আব কি বার ৪০০ পার’-এর কী হবে? তাই কি দেশজুড়ে বুথ ফাঁকা করার ‘মহান’ অভিযানে নেমেছে পদ্মপার্টি? মাঠ ফাঁকা না-হলে কি গেরুয়া প্লেয়ারদের পায়ের বল গোল পোস্ট পর্যন্ত পৌঁছবে না!