উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
প্রসঙ্গত, গত তিনদিন ধরে বাঁকুড়ায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির জেরে আলু, তৈলবীজ, ডাল জাতীয় শস্যের এবং সব্জির ক্ষতি হয়। পাত্রসায়র ব্লকে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় বলে কৃষি দপ্তর জানিয়েছে। বৃষ্টির জেরে আলু চাষিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অকাল বর্ষণ কার্যত আলুর ক্ষেত্রে ‘পাকা ধানে মই’ দিয়েছে বলে চাষিদের অভিমত।
বাঁকুড়ার উপকৃষি অধিকর্তা সুশান্ত মহাপাত্র বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য আলুতে নাবিধসা রোগের প্রকোপ দেখা দিতে পারে। তবে এবার ফসল প্রায় ওঠার মুখে রয়েছে। ফলে রোগের কারণে ফলনের কোনও প্রভাব পড়বে না। তবে রোগের জীবাণু আলুতে সুপ্ত অবস্থায় একবছর ধরে থেকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে আগামী বছরে বীজ আলুর মাধ্যমে গাছে ওই রোগ সংক্রামিত হবে। রোগ এক খেত থেকে অন্য খেতে ছড়িয়ে পড়লে চাষিদের মাথায় হাত পড়বে। তাই এবছর ফসল ওঠার আগে সাইমক্সিনিল এবং ম্যাংকোজেবের মিশ্রণ প্রতি লিটার জলে আড়াই গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। সেইসঙ্গে এক ব্যারেল(১৬ লিটার) জলে দেড় গ্রাম স্ট্রেপটোসাইক্লিন গুলে আলু গাছে স্প্রে করা যেতে পারে। সাইমক্সিলিনের পরিবর্তে ফেনামিডন অথবা মেটাল্যাক্সিল গোত্রের ওষুধও স্প্রে করা যাবে। এই আগাম ব্যবস্থা নিলে নাবিধসা রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, ফসল এবং ঘরবাড়ি মিলিয়ে বাঁকুড়ায় মোট ৩ কোটি ১৮ লক্ষ ২০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়জলে জেলার মোট ৯৯টি কাঁচা বাড়ি আংশিক এবং পুরোপুরি ভেঙেছে। জেলার তিনটি ব্লক এলাকার ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১২৮টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্গত মানুষের সংখ্যা ৩০৫।
এদিন আরামবাগ মহকুমায় বৃষ্টির জেরে আলু চাষে আরও বেশি পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মঙ্গলবারের পর থেকে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে আরও বহু জমির আলু জলে ডুবে গিয়েছে। এরফলে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছেন মহকুমার চাষিরা। বুধবারও বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে মনে করছে কৃষিদপ্তরও।
কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমায় এবার ৩০হাজার ৬২হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। এদিন পর্যন্ত ১৮হাজার ৩৭২হেক্টর জমির আলু জলের নীচে রয়েছে। এক্ষেত্রে আরামবাগ ব্লকে ৮হাজার ২২৭হেক্টর জমিতে চাষিরা আলু চাষ করেছিলেন। এখানে ৩হাজার ৪৬০হেক্টর জমির আলু ক্ষতির মুখে পড়েছে। গোঘাট-১ ব্লকে ৩হাজার ২০হেক্টর জমির মধ্যে ১৬২০হেক্টরের আলু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোঘাট-২ ব্লকেও ৫০১০হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। সেখানে ১৬২০হেক্টর জমির আলু লোকসান হয়েছে। পুরশুড়ায় ৬৪৯৫হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। সেখানে ইতিমধ্যে ৫৮০০হেক্টর জমির আলু জলে থইথই করছে। খানাকুল-১ ব্লকে ৫৯১০ হেক্টর জমিতে চাষ হওয়া আলুর মধ্যে ৫৮৪০ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খানাকুল-২ ব্লকেও ১৪০০ হেক্টরের মধ্যে ২১৭হেক্টর জমির আলু নষ্ট হতে বসেছে।
চাষিদের দাবি, বৃষ্টির জল জমিগুলিতে দাঁড়িয়ে যাওয়ায় সমস্যা হয়েছে। সেই জল জমি থেকে বের করার ক্ষেত্রে প্রবল অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। অনেকেই পাম্প চালিয়ে জমি থেকে জল বের করার চেষ্টা করছেন।
কৃষি দপ্তরের দাবি, আলুতে ক্ষতি হওয়ায় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের চালু করা বিভিন্ন বিমা প্রকল্পে চাষিদের নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য ইতিমধ্যে ফর্ম বিলি করা হচ্ছে। আরামবাগের মহকুমা কৃষি দপ্তরের আধিকারিক সজল ঘোষ বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আরামবাগে ৫৫মিলি মিটার বৃষ্টি হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। ক্ষয়ক্ষতির হিসেব জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে।