শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহ বৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে ... বিশদ
এরকমই এক পন্থা খুঁজে নিয়েছিল নীলিমা। তাই তাঁর একমাত্র ছেলেকে সে ফাঁসির হাত থেকে বাঁচিয়ে নিজের হাতেই শেষ করে দিয়েছিল। সেই একইভাবে খুন করে তাঁর ছেলের বন্ধুকেও। নীলিমার কাছে সেটাই ছিল প্রতিরোধের একমাত্র উপায়। মা হয়ে নিজের সন্তানকে হত্যা করার যন্ত্রণা, পরোক্ষে সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধের পথ খোঁজার মধ্যে দিয়েই এগিয়ে চলে ‘গরল’ নাটকটি। সম্প্রতি যেটি মঞ্চস্থ হল অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস-এর মঞ্চে।
জমিদার পরিবারের সন্তান বিখ্যাত উকিল ভাস্কর মজুমদারের স্ত্রী নীলিমা। সে, তার স্বামী ও কাজের লোক গুপি এই তিনজন থাকে তাদের ভগ্নপ্রায় বাড়িতে। আর থাকে প্রচুর ইঁদুর। যারা দিনরাত ঘুরে ঘুরে উৎপাত করে বাড়ির আনাচকানাচে। এই প্রাচীন বাড়ির অন্দরমহলে লুকিয়ে আছে অনেক অজানা গল্প।
উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এই বাড়ি পেয়েছিলেন ভাস্কর মজুমদার। পিতৃপুরুষদের জমিদারি চলে গেলেও জমিদারি মেজাজটি এখনও যায়নি তাঁর। একদিন রাতে মদ্যপান করে গাড়ি চালিয়ে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় তিনি পঙ্গু হয়ে যান। এরপর থেকেই শয্যাশায়ী। তাঁদের একমাত্র ছেলে শুভময়। ব্যস্ত উকিল তাঁর বেশিরভাগ সময়টা কাটিয়ে দিয়েছেন ওকালতি করতেই। তাই একার হাতে নীলিমা সযত্নে মানুষ করে তোলে শুভময় ওরফে বাবাইকে। ছোটবেলার বাধ্য ছেলে বাবাই এখন বড় হয়ে গেছে। প্রায়ই সে রাত করে বাড়ি ফেরে। কখনও আবার একদিন দু’দিন বাড়ি ফেরেও না। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার বাইরের টানই বেশি। ছেলের জন্য উৎকণ্ঠায়-উদ্বেগে মজুমদার পরিবারের কোনওরকমে দিন কাটে। হঠাৎ একদিন মধ্যরাতে দরজায় কড়া নাড়া শুনে বেরিয়ে আসে কাজের লোক গুপি। খুব দ্রুত পায়ে ঘরে ঢোকে বাবাই। মাকে দেখে জড়িয়ে ধরে বলে ‘মা আমাকে তুমি বাঁচাও।’ এরপর মায়ের কাছে সব কথা খুলে বলে। বাবাইয়ের কথায় জানতে পারে নিলিমা যে, বাবাই এবং তার থেকে বয়সে কিছুটা বড় এক বন্ধু কমলেশ দু’জনে মিলে শুনশান রাস্তায় একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করে ফেলেছে। ভয়ে হতবাক বাবাইকে কমলেশ বলে, তুই দু’লক্ষ টাকা নিয়ে আয় আমি তোকে বাঁচিয়ে দেব। কিন্তু ওদের যা আর্থিক অবস্থা তাতে অত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। ধরা পড়ার ভয়ে বাড়িতে ফিরে এসেছে সে। নীলিমা ছেলের কাছে সব কিছু শুনে বলে তোর কোনও ভয় নেই, আমি তোকে আগলে রেখে দেব সকলের কাছ থেকে। তোকে কেউ খুঁজে পাবে না। এরপর বাড়িতে পুলিস আসে বাবাইয়ের খোঁজে। কিন্তু পায় না তাকে। নীলিমা তাঁর একমাত্র ছেলেকে মেরে ঘরের মধ্যে বন্ধ করে রেখে দেয়। বেশ কিছু বছর কেটে যায় এভাবে। তারপর আবার একদিন রাতে তাদের বাড়িতে অমল আসে। বাবাইয়ের বন্ধু অমল বলে তারা একসঙ্গে এক ফ্ল্যাটে থাকে দুবাইতে। শুভময় এখন খুব বড় কোম্পানিতে একটি চাকরি করে। সে-ই তাকে বাবা-মায়ের খোঁজ নিতে পাঠিয়েছে। তাই সে এসেছে। যাই হোক মা-বাবার সঙ্গে দেখা করে ফিরে যেতে চাইলে শুভময়ের মা-বাবার অনুরোধে সেই রাতে অমল থেকে যায়। খুব খাতির যত্ন করে সে রাতে বাবাইয়ের ঘরেই শুতে দেয় তাকে। নিলিমা বুঝতে পারে বাবাইয়ের বন্ধু বলে যে ছেলেটি এসেছে তাদের বাড়িতে সে-ই আসলে কমলেশ, তাই সে ঠিক যেভাবে বাবাইকে মেরে ঘরে বন্ধ করে রেখে দিয়েছিল, তাকেও সেভাবে রাতেই শেষ করে দেয়।
সায়ন্তনী পুততুণ্ডর কাহিনী অবলম্বনে ও রংরূপ-এর প্রযোজনায় মৈনাক সেনগুপ্তের থ্রিলারধর্মী এই নাটকে নীলিমার চরিত্রে অভিনয় করেছেন সীমা মুখোপাধ্যায়। পরিচালনা ও অভিনয়ের মূল দায়িত্ব একার হাতে সামলালেও তাঁর অভিনয়ে কোনও ফাঁক চোখে পড়ে না। দুটো দায়িত্বই সমান দক্ষতার সঙ্গে পালন করেছেন তিনি। ভাস্করের চরিত্ররূপী জয়ন্ত মিত্র খুব ভালো সহযোগিতা করেছেন তাঁকে। স্নেহপ্রবণ পিতার পঙ্গু হয়ে বিছানায় পড়ে থাকা আবেগ, জমিদারি ঔদ্ধত্য তাঁর অভিনয়ে স্পষ্ট ফুটে ওঠে। গুপিরূপী জগন্নাথ চক্রবর্তী ও শুভময়ের চরিত্রে অর্কপল তালুকদার এবং অমল ও কমলেশের ভূমিকায় অপূর্ব সাহা যথাযোগ্য। মঞ্চভাবনায় সন্দীপসুমন ভট্টাচার্য ও আলোয় বাদল দাস প্রশংসার দাবি রাখে।
কলি ঘোষ