নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে পুরসভার ইঞ্জিনিয়াররা কেউই মহম্মদ আলি পার্কে আগের জায়গায় এবার পুজো করার সবুজ সঙ্কেত দেননি। ফলে প্রতিবারের মতো এবারও আগের জায়গায় কলকাতার এই নামকরা পুজো হওয়ার সম্ভাবনা বাতিল হল বলেই ধরে নেওয়া যায়। মেয়র ফিরহাদ হাকিম সোমবার ওই পুজোর আয়োজক সংস্থার একদল কর্তাকে একথা জানিয়ে দিয়েছেন। মহম্মদ আলি পার্কের শতাব্দীপ্রাচীন জলাধারের সংস্কারকাজ সম্প্রতি শুরু করেছে পুরসভা। এই বিশাল জলাধার কীভাবে সংস্কার করা সম্ভব, সেই পথ খুঁজতে অনেকটা খোঁড়াখুঁড়ি করতে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মহম্মদ আলি পার্কের দুর্গাপুজোর ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্নচিহ্ন দেখা দেয়। অবশেষে মেয়র ফিরহাদ হাকিম এদিন পুজোকর্তাদের জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও তরফ থেকেই নিরাপত্তার প্রশ্নে সবুজ সঙ্কেত না আসায় এবার আগের জায়গায় পুজো করতে দেওয়া সম্ভব নয়। কেউ ‘স্টেবিলিটি সার্টিফিকেট’ দেয়নি। বিকল্প জায়গার প্রস্তাব ইতিমধ্যেই পুজো কমিটিকে দিয়েছে পুরসভা। সূত্রের খবর, মহম্মদ আলি পার্কের কাছেই পুরসভার অ্যাম্বুলেন্স রাখার একটি গ্যারাজ রয়েছে। সেই জায়গায় এবারের মতো পুজো করা যায় কি না, সেব্যাপারে আয়োজকদের চিন্তাভাবনা করতে বলেছেন মেয়র। যদিও আয়োজক সংস্থার সভাপতি পুরসভার উদ্যান বিভাগের মেয়র পরিষদ সদস্য দেবাশিস কুমারকে চিঠি দিয়ে মহম্মদ আলি পার্কের ঠিক উল্টোদিকে তারাচাঁদ দত্ত স্ট্রিটে এবার পুজো করার প্রস্তাব দিয়েছেন। সেই প্রস্তাব আবার খারিজ করে দিয়েছে আয়োজকদের অন্য একটি গোষ্ঠী। এদিন মেয়রের সামনে ওই চিঠির প্রসঙ্গ উত্থাপিত হওয়ার সময় দেবাশিসবাবুও উপস্থিত ছিলেন। তিনি পুজোকর্তাদের সাফ জানিয়েছেন, সংস্থার নিজস্ব সমস্যার মধ্যে পুরসভার কোনও ভূমিকা থাকতে পারে না। সভাপতি সংস্থার লেটারহেডেই চিঠি দিয়েছেন আমাকে। তা খারিজ করে দেওয়ার আগে তিনি যে এখন আর সভাপতি নন, সে বিষয়টি প্রমাণ করতে হবে। অতএব এই সমস্যা পুজোকর্তাদেরই মেটাতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন দেবাশিসবাবু।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত টালার ওভারহেড জলাধারে চারটি পৃথক প্রকোষ্ঠ থাকায় এক-একটি প্রকোষ্ঠ খালি করে সংস্কারের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে, তেমনটা সম্ভব নয় মহম্মদ আলি পার্কের এই সেমি-আন্ডারগ্রাউন্ড জলাধারের ক্ষেত্রে। পার্কের এক কোণের দিকে একটি অংশের নীচে জল না থাকায় সেখানে পুজো করা যেতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু এখন দেখা গিয়েছে, সেই অংশেও মাটির নীচে জলাধারে জল রয়েছে। ফলে এর উপর যেখানেই এবার পুজো করা হোক না কেন, তা ঝুঁকির হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। পার্ক সংলগ্ন যে অংশে পুজো করার জন্য পুরসভা প্রস্তাব দিয়েছে, সেই জায়গার হাল-হকিকত খতিয়ে দেখতে আজ, মঙ্গলবার সেখানে পরিদর্শনে যাচ্ছেন পুরসভার উদ্যান, জল সরবরাহ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পদস্থ কর্তারা। পুরসভা সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, এই জলাধারের প্রকোষ্ঠ ভাগ করা না থাকায় বিকল্প জলাধারের ব্যবস্থা করেই পুরোটা সংস্কার করতে হবে। সেক্ষেত্রে এই জমিতেই একটি ভূগর্ভস্থ এবং একটি ওভারহেড জলাধার তৈরি করে মহম্মদ আলি পার্কের জলাধারের আমূল সংস্কারের পথে হাঁটতে পারে পুরসভা। কারণ এতবড় জলাধার থেকে যতটা এলাকায় পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করা হয়, তা ব্যাহত হতে দেওয়া সম্ভব নয়। আর সংস্কারকাজও চলবে মাসের পর মাস।