মানসিক অস্থিরতা দেখা দেবে। বন্ধু-বান্ধবদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা দরকার। কর্মে একাধিক শুভ যোগাযোগ আসবে। ... বিশদ
অনুষ্ঠানের শেষে যে অপার্থিব প্রহর তৈরি হল, তার খানিকটা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল গোটা অনুষ্ঠানেই। প্রেক্ষাগৃহে আসার পর মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে না উঠে দর্শকের আসরে পৌঁছলেন। সেখানে তখন দিকপাল শিল্পীরা রয়েছেন। প্রত্যেকের আসনের সামনে এগিয়ে গিয়ে নিজেই কুশল বিনিময় করলেন। ডোনা গঙ্গোপাধ্যায় ও তাঁর দলের নৃত্য পরিবেশনের পর যখন রাজ্য সরকারের তরফে সম্মান প্রদান অনুষ্ঠান শুরু হল, তখন প্রাপক শিল্পীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিতে গিয়ে নিজেই একে একে ডেকে আনলেন যশস্বী শিল্পীদের। পণ্ডিত আশিস খাঁ, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায় বা নজরুলগীতি শিল্পী দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গীত সম্মান পুরস্কার দেওয়ার পর রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী বিভা সেনগুপ্তকে পুরস্কার দেওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী ডেকে নিলেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীকে। একইভাবে তাঁরই অনুরোধে সোমলতা আচার্যকে পুরস্কার দিলেন পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার। রঞ্জন প্রসাদকে সম্মান জানালেন উস্তাদ রশিদ খান। মিতা চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গীত সম্মান জানাতে মমতার পাশে এগিয়ে এলেন হৈমন্তী শুক্লা। নাজমূল হক, মনোজমুরলি নায়ার বা চন্দন রায়চৌধুরীকে পুরস্কার দেওয়ার সময় কুমার শানু, জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বা অভিজিতের মতো ওজনদার শিল্পীরা রয়েই গেলেন মুখ্যমন্ত্রীর ঘেরাটোপে। সঙ্গীত মহাসম্মান নিতে একে একে এলেন গৌতম ঘোষ, পরীক্ষিত বালা বা কৌশিকী চক্রবর্তী, বিদূষী জয়া বিশ্বাস। বিশেষ সঙ্গীত মহা সম্মান প্রদান করা হল জিৎ, অভিজিৎ, কুমার শানু ও উষা উত্থুপকে।
এবার মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ। গান গাইতে হবে শিল্পীদের। আর সেই অনুরোধের জোরেই নজরুল মঞ্চের স্টেজে বইল অন্য হাওয়া। সটান ঢাক বাজিয়ে অভিজিৎ গাইলেন ‘ঢাকের তালে কোমর দোলে...’। গানের শুরুতেই লিরিকের খেই হারিয়ে ফেলায় মাইক হাতে উঠে আসতে হল জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। কারণ এ গানের স্রস্টা যে তিনিই। রশিদ খানের ঠুংরির পরই আসর মাতালেন কুমার শানু। ‘কত যে সাগর নদী’ গেয়েও ছুটি মিলল না তাঁর। ‘শাঁস কী জরুরত’ যখন গাইলেন, হাততালিতে ফেটে পড়ল দর্শকাসন। কৌশিকী চক্রবর্তী যখন ‘ইয়াদ পিয়া কী’ ধরলেন, তাঁর সঙ্গে গলা মেলালেন তাঁর বাবা অজয় চক্রবর্তী, রশিদ খান এবং অভিজিৎ। এমন চারজন শিল্পী যখন একই গানে মত্ত, তখন তার সঙ্গত ঠিকঠাক না হলে চলে? সুর আর তালে গোলমাল হয়ে যাচ্ছে বুঝে প্রায় লাফিয়ে নিজের আসন ছেড়ে তবলা বাদকের দিকে দৌড়লেন সরোদ বাদক দেবজ্যোতি মিশ্র। নিজেই এগিয়ে গিয়ে দখল নিলেন তবলার। সুর-তালের মিলমিশে বাঙ্ময় হল চারদিক।
গানের সেই রেশ ধরেই মঞ্চের শিল্পীদের দিকে চোখ বুলিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, এমন স্বর্ণভান্ডার আর দেখা যাবে কি না কে জানে। বাংলা গান পৃথিবীতে সেরা প্রণাম করেছে। গান তো আসলে সংহতির। বীণা, সেতার, সরোদের মতো বাদ্যযন্ত্র গানের সঙ্গে মিলে মিশে যায়। মুখ্যমন্ত্রী বোঝালেন, এ তো সেই সংহতিরই উদযাপন। শিল্পীদের বারবার আলিঙ্গনে, হাসিতে, আন্তরিকতায় তিনি বোঝালেন, বাংলা এভাবেই শ্রেষ্ঠ হবে বিশ্বসভায়।