সংবাদদাতা, বনগাঁ: করোনা আবহে কড়া বিধি আরোপের কারণে বন্ধ রয়েছে বনগাঁর চিরুনি কারখানাগুলি। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৬০০ শ্রমিক। কড়া বিধিনিষেধ পর্বে সমস্ত কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আইএনটিটিইউসি পরিচালিত বনগাঁ সেলুলয়েড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন সেন বলেন, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কলকারখানা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। তার আগেই কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় মালিকপক্ষ। চিরুনি কারখানাগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন কয়েকশো শ্রমিক। বনগাঁ সেলুলয়েড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের জন্য মালিক পক্ষের কাছে অর্ধেক বেতন দেওয়ার দাবি জানানো হয়। মালিকপক্ষ তা মেনে নেয়নি। মালিকপক্ষের থেকে দাবি করা হয়েছে, করোনা আবহে কাঁচামালের অভাব ও তৈরি পণ্য বিক্রি না হওয়ায় খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর উপর সরকার কড়া বিধিনিষেধ ঘোষণা করায় কিছুদিনের জন্য কারখানা বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। ওয়েস্ট বেঙ্গল সেলুলয়েড কম্ব ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহাদেব ঘোষ বলেন, আমাদের ব্যবসার প্রায় পুরোটাই ভিন রাজ্যের উপর নির্ভরশীল। কাঁচামালও বাইরে থেকে আনতে হয়। ভিনরাজ্যে অনেক আগে থেকেই লকডাউন হওয়ায় ব্যবসা মন্দা চলছে। মালিকপক্ষ থেকে আরও দাবি করা হয়েছে, করোনার প্রথম পর্বে ব্যবসা বন্ধ থাকলেও শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের দাবি তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না। এদিকে শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একই দাবি নিয়ে আগামীতে আন্দোলন করবেন শ্রমিকরা।
উল্লেখ্য, বেশ কয়েক বছর ধরে ভুগছে বনগাঁর প্রসিদ্ধ চিরুনি শিল্প। শ্রমিক অসন্তোষ ও কাঁচামাল সঙ্কটে একপ্রকার খ্যাতি ও জৌলুস হারিয়েছে যশোর-বনগাঁর চিরুনি শিল্প। অথচ একসময় সারা দেশে খ্যাতি ছিল এখানকার চিরুনির। দিন দিন কমেছে চিরুনি কারখানার সংখ্যা। বর্তমানে বনগাঁ শহরে প্রায় ১৩০টি চিরুনি কারখানা রয়েছে। যা অতীতের তুলনায় অনেক কম। শ্রমিক অনিল পাল বলেন, পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই পেশায় যুক্ত। নানা সময়ে সমস্যা এলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে সংসার চালানোই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী দিনে মালিকরা যাতে তাঁদের পাশে দাঁড়ান, তার আবেদন জানিয়েছেন শ্রমিকরা।