হস্তশিল্পীরা তাদের কাজের সাফল্যের জন্য সুনাম পেতে পারেন। সঙ্গীতাদি চারুকলার ক্ষেত্রে বিশেষ সম্মান লাভের যোগ। ... বিশদ
সালটা ২০২২। প্রতিদিনের মতো ১১ অক্টোবর সকালেও অপরাধমূলক মামলা সংক্রান্ত নথিপত্র নিয়ে বাড়ি থেকে বেরন পার্থবাবু। শিয়ালদহ আদালতে নিয়মিত প্র্যাকটিস তাঁর। কিন্তু, ওইদিন বাড়ি ফেরেননি। নামী উকিল। মোবাইল ফোনটাও বন্ধ। আইনজীবীর নর্দার্ন অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে চিন্তায় পড়ে যান বিধবা মা, স্ত্রী ও ছেলে। কোথায় গেলেন পার্থবাবু? একের পর এক ফোন আত্মীয়, বন্ধুবান্ধবদের বাড়িতে। না, সদুত্তর মেলেনি। রাতেই চিৎপুর থানার দ্বারস্থ হলেন রূপাদেবী। নিখোঁজ ডায়েরি রুজু করল থানা। খাতায়-কলমে শুরুও হল তদন্ত। কিন্তু বাস্তবে? নৈব নৈব চ।
একদিন.. দু’দিন, একমাস.. দু’মাস করে পেরিয়ে গেল আটমাস। সাল পেরিয়ে কাটল আরও ৬ মাস। ১৮ জুন, ২০২৩। এলাকার কয়েকজন মাদকাসক্ত যুবকের মাধ্যমে ফোন যায় চিৎপুর থানায়। ‘স্যার.. স্যার..! শ্রীনাথ মুখার্জি লেনের পরিত্যক্ত বাড়িটায় হাড়গোড়, খুলি পড়ে রয়েছে। জামা কাপড় রয়েছে গায়ে।’ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিস। হাড়গোড়ের পাশেই পড়ে ব্যাগ, রুদ্রাক্ষের মালা, জুতো। ব্যাগের ভিতর থেকে মিলল কিছু লিফলেট। ঘটনাস্থলে ডাকা হল ‘নিখোঁজ’ আইনজীবীর স্ত্রীকে। ব্যাগ, রুদ্রাক্ষের মালা, জুতো দেখে তিনি চিহ্নিত করলেন, সেগুলি তাঁর স্বামীরই। কিন্তু, উদ্ধার হওয়া হাড়গোড় কার? তা জানতে এবং প্রমাণ করতে প্রয়োজন অকাট্য প্রমাণ। ভরসা একমাত্র ডিএনএ রিপোর্ট। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্তে নামল চিৎপুর থানা।
কাট টু ২০২৫। ৫ ফেব্রুয়ারি। টানা আড়াই বছরের দীর্ঘ শুনানির পর বুধবারও স্পষ্ট হল না— উদ্ধার হওয়া হাড়গোড় পার্থবাবুরই কি না! রূপাদেবীর প্রশ্ন, ‘আড়াই বছর আগে শাশুড়ি ও আমার ছেলের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছিল পুলিস। ডিএনএ টেস্টের জন্য উদ্ধার হওয়া হাড় ও দাঁতের সঙ্গে দু’জনের রক্তের নমুনা পাঠানো হয় স্টেট ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে। তাও কিছু জানাতে পারছে না কেন পুলিস?’ এই বিতর্ক উস্কে দিয়েছে পুলিসের রিপোর্টই। পার্থবাবুর পরিবারের তরফে দুই কৌঁসুলি জয়ন্ত দত্ত ও অতনু মণ্ডল বলেন, ‘পুলিস ডিএনএ টেস্টের যে রিপোর্ট আদালতে পেশ করেছে, তাতে লেখা রয়েছে— হাড় ও দাঁতের যে নমুনা দেওয়া হয়েছে, তাতে পরিচয় সংক্রান্ত কোনও মতামত দেওয়া সম্ভবপর নয়।’ এতেই ক্ষুব্ধ রূপাদেবী। তাঁর প্রশ্ন, ‘তাহলে কেন ঢাক‑ঢোল পিটিয়ে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তাঁর ছেলে ও বৃদ্ধা শাশুড়ির রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল?’
চিৎপুর থানা সম্প্রতি এই মামলাকে কেন্দ্র করে একটি রিপোর্ট শিয়ালদহ কোর্টে পেশ করে। তার ভিত্তিতে বক্তব্য পেশের জন্য আদালত একটি নোটিস পাঠায় রূপাদেবীকে। পরবর্তী শুনানি ১৪ ফেব্রুয়ারি। স্বামী কোথায়? কী অবস্থায়? আরও এক সপ্তাহ অপেক্ষার প্রহর রূপাদেবীর।