দক্ষিণবঙ্গ

মহালয়ার আগে নাওয়া খাওয়া ভুলেছেন রেডিও কাকা সুরাত

সংবাদদাতা, কাটোয়া: নীল আকাশের পটভূমিতে সাদা কাশফুলের মাথা নাড়া, শিউলির গন্ধ আর পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘের আনাগোনা জানান দেয় শরত এসেছে। বাড়ির আলমারি সেজে উঠছে পুরনো ধুলো ঝেড়ে। সারা বছর অবহেলায় ঘরের এক কোণে পড়ে থাকা পুরনো রেডিওটার দিকে নজর পড়ে সবার। ব্যস্ততা বাড়ে ‘রেডিও কাকা’ সুরাত আলির। এই ডিজিটাল যুগেও রেডিও কাকার দোকানে একগাদা পুরনো রেডিও। কারণ ভোরে মহালয়ার ভোরে রেডিওতে বীরেন ভদ্রের কণ্ঠ মাধুর্যে বাঙালির ঘুম না ভাঙলে পুজোর শুরুটাই হয়ে যায় ম্যাড়ম্যাড়ে। 
সারা বছর হোমেও লাগে না, যজ্ঞেও লাগে না ভেবে অযত্নেই থাকে পুরানো দিনের রেডিওটি। তাই সেটির পরিচর্যা ঠিকমতো হয় না। কিন্তু মহালয়ার ভোরে আলো ফোটার আগে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে সেই কালজয়ী স্তোস্ত্র  ‘আশ্বিনের শারদ প্রাতে…’ বা সুপ্রীতি ঘোষের গাওয়া ‘বাজলো আলোর বেণু’ শুনতে রেডিওর জুড়ি মেলা ভার। এর এক নস্টালজিয়া রয়েছে। পুজো চলে এসেছে। পূর্বস্থলীর হাটসিউরির বাসিন্দা বৃদ্ধ সুরাত আলি শেখ চল্লিশ বছর ধরে কাটোয়া শহরে একটি দোকানে রেডিও সারান। শহরের বাসিন্দা পল্লবকুমার মণ্ডলের প্রায় ষাট বছরের ইলেকট্রনিকসের দোকানে সুরাত আলি কাজ করেন। তাঁকে শহরের বেশির ভাগ লোক ‘রেডিও কাকা’ নামেই বেশি চেনে। বৃদ্ধ সুরাত আলি রেডিওর একাল সেকাল দেখেছেন। তাঁর এখন নাওয়া খাওয়ার সময় নেই। মহালয়া যে চলে এল। সবাই দোকানে সারানো হল কিনা জানতে ঢুঁ মারছেন দু’ বেলা। কার কাছে রেডিও সারানোর বিদ্যেটি যে সুরাত আলি রপ্ত করেছিলেন জানা নেই। তবে সেই বিদ্যেই এখনও তাঁর দু’ বেলা অন্ন জোগাচ্ছে। 
সুরাত আলির কথায়, আগে মহালয়ার অন্তত একমাস আগে থেকে রেডিও সারানোর বরাত নেওয়া বন্ধ করে দিতাম। রাত জেগে সারানো হতো শ’য়ে শ’য়ে রেডিও। দোকানে ভিড় লেগেই থাকত। আর এখন! বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন সুরাত আলি। বলেন, মোবাইলে সব নাকি বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র মহাশয়ের কণ্ঠস্বর শোনা যায়। কিন্তু রেডিওর মতো সেই আবেগটা পাবে কোথায়। তাই এখন আবার পুরনো রেডিও সারানোর হিড়িক পড়ে গিয়েছে। আগে রেডিও সারাই শেখানোর স্কুল ছিল কত। আর এখন শহরে হাতে গোনা কয়েকজন পুরনো লোক রেডিও সারান। এবার অনেকেই আবার সেই নতুন করে রেডিও কিনছেন। এই যন্ত্র যে বড় আবেগের। 
এফএমের নতুন মোড়কে বেতারের পুনর্জন্ম হয়েছে ঠিকই, তবে শহরে বা গ্রামাঞ্চলে প্রবীণ ব্যক্তিদের বেতার প্রেম এখনও সবাইকে অবাক করে। এখন রেডিওর জায়গা নিয়েছে স্মার্ট ফোন। তবে মহালয়ার সময় শুধু এখন হাতে গোনা কয়েকজন মহিষাসুরমর্দিনীর বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠ শোনার জন্য রেডিওর খোঁজ করেন। রেডিও সারাইয়ের দোকানও প্রায় উঠে গিয়েছে। আশি, নব্বইয়ের দশকেও চায়ের দোকান, সেলুনে রেডিওর শব্দ ভেসে আসত। কেতুগ্রামের নিরোলের বাসিন্দা সাগর চুনারি বলেন, আমাদের পাড়ার এক বয়স্ক দাদুর কানে সর্বদা রেডিও থাকে৷ তিনি  একটা কানে ভালো শুনতে পান না। তবুও তাঁর রেডিও প্রতি ভালোবাসা আমাদের মুগ্ধ করে। আমরাও তাঁর কাছে রেডিওর খবর শুনতে আসি। পূর্বস্থলীর মাজিদার বাসিন্দা শুভঙ্কর হাজরা পুরানো রেডিও নিয়ে কাটোয়া শহরে এসেছেন সারাতে। তিনি বলেন, মহালয়ার ভোর মানে রেডিও চাই-ই চাই। তা না হলে বাবা খেপে যাবেন। আমারও ভালো লাগে না। মহালয়ার রেডিও মানেই তো নষ্টালজিয়া। 
             রেডিও সারাতে মগ্ন সুরাত আলি। নিজস্ব চিত্র
 
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে মানসিক চিন্তা। সব কাজকর্মে অগ্রগতি ও অর্থকড়ি প্রাপ্তির যোগ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার ৮১.৮৭ টাকা৮৫.৩১ টাকা
পাউন্ড১০৭.৪৯ টাকা১১৪.২২ টাকা
ইউরো৯১.২৬ টাকা৯৫.৪৬ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা