নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: মামণি, ব্রততী, টুসিদের তৈরি পাটালি গুড় থেকে শুরু করে সুন্দরবনের মধু পৌঁছে যাচ্ছে উত্তর ও মধ্য ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে! অভিনব কোনও সরকারি উদ্যোগ নয়, সাগরমেলায় আসা ভিন রাজ্যের পুণ্যার্থীরা বাংলার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের কাছ থেকে এসব সংগ্রহ করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। মামণি, ব্রততীরা সাগরমেলায় স্বনির্ভর গোষ্ঠী পরিচালিত একাধিক স্টল দিয়েছিলেন। ফলত উল্লেখযোগ্য সাফল্যও পেয়েছেন তাঁরা। তাঁদের হাতে তৈরি বিভিন্ন কারুকাজ ও সামগ্রী বিক্রি হয়েছে ‘সৃষ্টিশ্রী’ স্টল থেকে। আর রাজ্য সরকারের পঞ্চায়েত দপ্তরের ‘আনন্দধারা’ প্রকল্পের অধীনে দেওয়া হয়েছিল ‘খাদ্যছায়া’ স্টল। এখান থেকে বিক্রি করা হয় হাতে তৈরি বিভিন্ন খাদ্য। যেমন, রুটি, পিঠে, লিট্টি-চোখা, ছাতুর পরোটা ইত্যাদি। গঙ্গাসাগরে ভিন রাজ্যের পুণ্যার্থীদের সংখ্যই বেশি থাকে। সেই কথা মাথায় রেখে এবার ওই রাজ্যগুলির জনপ্রিয় খাবার তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল কিছু মহিলাকে। সেই শিক্ষা কাজে লাগিয়েই মেলার ক’দিনে ২ লক্ষের বেশি টাকা উপার্জন করেছে ‘খাদ্যছায়া’র পাঁচটি স্টল। ‘সৃষ্টিশ্রী’র স্টল হয়েছিল তিনটি। মধু, ঘি ইত্যাদি পণ্য রাখা হয়েছিল ওই স্টলগুলিতে। 
সাগরমেলায় এসে নিজেদের রাজ্যের খাবার চেখে দেখার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি অনেকে। ফলে প্রতিটি স্টলেই কমবেশি ভিড় জমেছিল সারাক্ষণ। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার গঙ্গাসাগর মেলায় ‘সৃষ্টিশ্রী’র স্টলগুলিতে মোট ১ লক্ষ ৪৯ হাজার ৮২৮ টাকার সামগ্রী বিক্রি হয়েছে। আর ‘খাদ্যছায়া’র স্টলে বিক্রি হয়েছে মোট ২ লক্ষ ৩ হাজার ১০৭ টাকার খাবারদাবার। স্টলের কর্মী তথা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, সব ধরনের খাবারের চাহিদা থাকলেও ইডলি, রুটি ও লিট্টি বিক্রি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ‘সৃষ্টিশ্রী’তে বেশি বিক্রি হয়েছে মধু, ঘি ও হাতে তৈরি ঘর সাজানোর নানা জিনিসপত্র। 
বিহার থেকে সপরিবারে সাগরে এসেছিলেন সীতানাথ ঝা। মঙ্গলবার ‘খাদ্যছায়া’ স্টলে দাঁড়িয়ে লিট্টি-চোখা খাচ্ছিলেন। তাঁর পরিবারের এক অন্য এক সদস্যকে পাশেই ইডলি খেতে দেখা গেল। সীতানাথ বলেন, ‘কলকাতায় লিট্টি পাওয়া যায়, জানি। আগে এসে খেয়েছিও। গঙ্গাসাগর মেলায়ও আমি আগে বার তিনেক এসেছি। কোনওদিন ভাবিনি, সাগর মেলায়ও জুটে যাবে লিট্টি।’ ‘সৃষ্টিশ্রী’ থেকে মধু কিনেছেন মধ্যপ্রদেশের বিভু রাই। তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনের মধুর কথা আগে শুনেছিলাম। হাতের কাছে এভাবে পাওয়া যাচ্ছে দেখে নিয়ে ফেলেছি। আশা করি, ভালোই হবে মধুটা।’