সঞ্জয় সরকার, ভুবনেশ্বর: চোখ ধাঁধানো স্টেডিয়াম। সবুজ গালিচায় মোড়া মাঠ। ঝাঁ চকচকে স্পোর্টস কমপ্লেক্স। মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের হাত ধরে ক্রীড়াক্ষেত্রে ক্রমশ এগিয়ে চলেছে ওড়িশা। থুড়ি, হকির রাজ্য ওড়িশা। জাতীয় দলের মূল স্পনসর তারাই। শহর হোক বা গ্রাম— ব্যানার, পোস্টার, ফ্লেক্সে হকির প্রচার তুঙ্গে। প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত পাচ্ছে আর্থিক অনুদান। পরিকল্পিত পথে তা খরচ হচ্ছে কি না সেদিকে প্রশাসনের নজর রয়েছে। কিন্তু এই রাজ্যে ফুটবল দুয়োরানি। আইএসএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্লাব ওড়িশা এফসি’র সৌজন্যে ক্রীড়াপ্রেমীদের একাংশ প্রতি ম্যাচে গ্যালারিতে এলেও তা সাড়া ফেলার মতো নয়। কয়েক মাস আগেই কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে আয়োজিত হয়েছে সুপার কাপ। মঙ্গলবার আইএসএল সেমি-ফাইনালের প্রথম লেগে মোহন বাগান সুপার জায়ান্টের মুখোমুখি হবে ওড়িশা এফসি। অথচ তার ২৪ ঘণ্টা আগেও এই মহাম্যাচ নিয়ে তেমন উৎসাহ চোখে পড়ল না। প্রচার নেই, নেই রয় কৃষ্ণা-ডিয়েগো মরিসিওদের ফ্লেক্স কিংবা ফেস্টুন। তাই ম্যাচের ফল যাই হোক না কেন, উন্মাদনার নিরিখে ওড়িশাকে বলে বলে গোল দেবে বাংলা। 
সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ ভুবনেশ্বর স্টেশনে পা রাখা মাত্রই সাদর আমন্ত্রণ জানাল আগুনে হাওয়া। মুহূর্তে ঝলসে যাওয়ার উপক্রম। আশপাশের স্থানীয় মানুষের মুখ ভেজা কাপড়ে ঢাকা। বাইরে বেরিয়েই প্রখর রোদের মুখোমুখি হওয়া। ওভারব্রিজ পেরিয়ে অটো স্ট্যান্ডে হাজির হতেই শুরু ‘টাগ অব ওয়ার’। এই ব্যাপারে কলকাতার সঙ্গে বিন্দুমাত্র অমিল নেই। হোটেল পৌঁছতে মিনিট ১৫ লাগল। পথে অটোচালককে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও তেমন উত্তর এল না। তবে মঙ্গলবার ম্যাচের কথা উঠতেই পাল্টা প্রশ্ন ভেসে এল, ‘কলকাতা থেকে কত সমর্থক আসছে?’ একটু থেমে তাঁর বিশ্লেষণ, ‘আসলে প্রবল গরমে সকালের দিকে প্যাসেঞ্জার প্রায় নেই। তাই বড় ইভেন্ট হলে আমাদের লাভ সামান্য বেশি হয়। সেজন্যই জিগ্যেস করলাম। মাস তিনেক আগে স্টেডিয়ামে এক টুর্নামেন্ট হয়েছিল। কলকাতা থেকে প্রচুর লোক আসায় টু পাইস পকেটে ঢোকে। এবার তেমনটা হলে মন্দ হয় না।’ লাগেজ নামিয়ে ভাড়া দেওয়ার পর জয় জগন্নাথ বলে অটোচালক রওনা দিলেন ফের স্টেশনের দিকে। যত প্যাসেঞ্জার তত লাভ। তাই হকির শহরে আইএসএল সেমি-ফাইনাল শুধুই ফুটবলপ্রেমীদের নয়, খেটে খাওয়া মানুষগুলির কাছেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।