উদয়ারুণ রায়: হঠাৎ অসময়ে ইন্দিরাকে দু’কাপ চা নিয়ে ওর ঘরে ঢুকতে দেখে সুচেতন একটু অসন্তুষ্টই হল। সুচেতনের এই একান্ত নিজস্ব ঘরে খুব বেশি লোকজন আসুক সেটা ও পছন্দ করে না। ঘরটা ওর একদম নিজস্ব মনের বিচরণ ক্ষেত্র। ঘরটিতে ওর পছন্দের সব জিনিসপত্র দিয়ে সাজানো।
বছর পাঁচ হল সুচেতন চাকরি থেকে অবসর নিয়েছে। অবসর নেওয়ার পর এই ঘরটি যেন ওর কাছে আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছে।
চায়ের কাপ দুটো ওর পড়ার টেবিলের উপর নামিয়ে রেখে ইন্দিরা বলল, ‘জানো, ঝিল্লির ননদের বিয়েতে গিয়ে আমার একটা দারুণ লাভ হয়েছে। বেয়ান মানে বুড়িদি, আমাকে একটা স্পেশাল উপহার দিয়েছে।’
সুচেতন মন দিয়ে সত্যজিৎ রায়ের উপর সদ্য প্রকাশিত একটা বই পড়ছিল। তার মধ্যে ইন্দিরা এসে এসব কথা তোলাতে সে একটু বিরক্তই হল।
সুচেতন অন্যমনস্ক হয়েই প্রশ্ন করল, ‘কে বেয়ান?’
‘আরে, বেয়ান বোঝ না! ঝিল্লির শাশুড়ি, বুড়িদি।’ ওর অন্যমনস্কতা কাটাতে গলায় সামান্য ঝাঁজ এনে বলল ইন্দিরা।
‘হ্যাঁ বল, বুড়ি তোমাকে কিছু প্রেজেন্ট করেছে? কী সেটা? বুড়ি শব্দটায় অন্যমনস্কতা কেটে গেল সুচেতনের।
‘উপহারটা যে খুব দামি তা কিন্তু নয়। তবে যেটি দিয়েছে, সেটার বিবাহিত জীবনের ক্ষেত্রে একটা বিশেষ তাৎপর্য আছে।’
ইন্দিরার কথা বলার ধরনে সামান্য কৌতূহল হল সুচেতনের। হাতের বইটা মুড়ে রেখে চায়ের কাপে একটা চুমুক দিয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘জিনিসটা কী? খুব ভ্যালুয়েবল হলে, সে জিনিস ও তোমাকে দিতে যাবে কেন?’
‘সে আমি কীভাবে বলব? দেওয়ার সময় আমাকে শুধু বলল, ‘বেয়ান, এটা আমার খুব পছন্দের জিনিস। মেয়ের বিয়ের উপহার হিসেবে তোমাকে দিলাম। খুব যত্নে রেখ এটা। মাঝে মাঝে পর।’
‘জিনিসটা ভীষণ সুন্দর। দেখলে তোমারও পছন্দ হবে।’
ইন্দিরা সুচেতনের স্ত্রী। গতকাল রাতে মেয়ের ননদের বিয়ে সেরে বাড়ি ফিরেছে। এই বিয়ের অনুষ্ঠানটা সুচেতন শরীরের দোহাই দিয়ে সতর্কভাবে এড়িয়ে গিয়েছে। বাড়ির অন্য সকলে যাতায়াত করেছে।
সুচেতনের এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে বড়, মেয়ে ছোট।
চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার আগেই সুচেতন ছেলের বিয়ে দিয়ে ঘরে বউমা এনেছে। আর অবসর নেওয়ার এক বছরের মধ্যে মেয়ের বিয়েটাও সেরে ফেলেছে। তবে সুচেতনকে কারওর বিয়ের জন্য খোঁজ খবর করতে হয়নি। ছেলে ও মেয়ে দু’জনেরই নিজেদের পছন্দের বিয়ে। কেবল সম্মতি দিয়ে সামাজিক রূপ দিয়েছে সুচেতন। তবে মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে অদ্ভুত এক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল সুচেতনকে।
প্রথা অনুযায়ী যতই প্রেমের বিয়ে হোক, পাত্রীপক্ষকেই ছেলের বাড়ি গিয়ে আগে বিয়ের প্রস্তাব দিতে হয়। সেই মতো হবুজামাইয়ের লেক টেরসের বাড়িতে গিয়ে জামাইয়ের মাকে দেখে চমকে উঠেছিল সুচেতন। বুড়ি তার খুব পরিচিত। এক সময়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। মায়ের সব থেকে প্রিয় বন্ধু বানু মাসির মেয়ে বুড়ি, ভালো নাম খেয়া।
পরিচয়পর্বে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে সুচতেন খুব স্বাভাবিক গলায় বলেছিল, ‘আপনি বানু মাসির মেয়ে বুড়ি না?’
ভীষণ মিষ্টি হেসে খেয়া ওরফে বুড়ি উত্তর দিয়েছিল, ‘তুমি বুয়াদা তো? তোমাকে দেখেই চিনেছি। মাথার সাদা চুলটুকু বাদ দিলে, দেখতে একই রকম আছে! ঝিল্লি তাহলে তোমারই মেয়ে?’
মেয়েরা কত সহজভাবে নিতে পারে সব কিছু। সুচেতন আপনি সম্বোধনে শুরু করেছিল। কিন্তু খেয়া কেমন অবলীলায় আগের মতো তুমি দিয়েই শুরু করল।
ওর সঙ্গে আসা ইন্দিরা, ছেলে দেবতনু আর খেয়ার ডাক্তার স্বামী তিনজনেরই তখন চোখে অবাক বিস্ময়!
ডাক্তার মিত্র মানে, খেয়ার স্বামী আশ্চর্য হয়ে স্ত্রীকে জিজ্ঞাস করেছিলেন, ‘তোমরা দু’জনে দু’জনকে আগে থেকে চিনতে?
সুচেতন আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাচ্ছিল, তবে তার আগেই উচ্ছ্বাসের সঙ্গে খেয়া বলে উঠেছিল, ‘পরিচিত মানে! বুয়াদা ঋতা মাসির একমাত্র ছেলে। আমার মা আর ওর মা দু’জনে ভীষণ বন্ধু ছিল। সেই স্কুল থেকে। আমি ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে কত গিয়েছি ওদের বাড়িতে। বড় হওয়ার পরেও যেতাম। ওরাও আসত আমার বাপের বাড়িতে। তবে বড় হয়ে বুয়াদার আসা কমে গিয়েছিল। কথাগুলো বলার পর একটা ভীষণ অর্থপূর্ণ হাসি ছড়িয়ে পড়ল খেয়ার চোখে মুখে। কেউ খেয়াল না করলেও সুচেতনের তা নজর এড়াল না।
মেয়েরা কী অসম্ভব দক্ষতায় সব কিছু ম্যানেজ করতে পারে।
মেয়ের বিয়ের সমস্ত অনুষ্ঠানে বাধ্য হয়ে থাকতে হয়েছিল, কিন্তু তারপর থেকে সতর্কভাবে মেয়ের শ্বশুর বাড়িটিকে এড়িয়ে চলে সুচেতন।
ছোটবেলা থেকেই সুচেতনের খেয়ার প্রতি আলাদা একটা ভালোলাগা ছিল। খেয়ারও সেরকম কিছু ছিল কি না, তা ঠিক বুঝতে পারত না সুচেতন।
এক এক সময় ওদের বাড়িতে গেলে খেয়া যেচে বেশ ঘনিষ্ঠতা দেখাত। অনেক গল্প করত। আবার কখনও কখনও এমনভাবে দেখাত যে সে ওকে যেন চেনেই না। খেয়া অচেনার ভাব দেখালে, পাগলের মতো হয়ে যেত সে। পড়াশোনায় মন বসত না। খেলতে যেতে ইচ্ছা করত না। খাওয়ার সময় খিদে পেত না। আবার যখন খেয়া বেশ ভালো ব্যবহার করত, হেসে কথা বলত, ওর আঁকার খাতা দেখাত, গান গেয়ে শোনাত, তখন প্রজাপতির পাখনায় উড়তে শুরু করত সুচেতন।
দু’জনে বয়সের বিশেষ ফারাক ছিল না। সুচেতন যখন কলেজে ভর্তি হল, সে বছর খেয়া মাধ্যমিক পাশ করেছিল।
খেয়া উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে শান্তিনিকেতনে চলে গেল রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে পড়বে বলে। কিন্তু তার আগেই ওদের মধ্যে যে আড়াল ছিল, সেটা গেল ভেঙে।
একদিন নিজের বাড়িতে খেয়াকে পেয়ে সুচেতন ওকে ডেকে নিয়ে গেল ছাদে। সুচেতনদের ছাদ থেকে বহু দূর পর্যন্ত একটা ফাঁকা মাঠ দেখা যেত। কিছুটা কচুরিপানা ঢাকা জলা আর বাকিটা ধুধু প্রান্তর।
ছাদে এসে খেয়া জিজ্ঞাসা করল, ‘কী ব্যাপারে হঠাৎ ছাদে ডাকলে? কিছু গোপন কথা বলবে না কি?’
খেয়ার হঠাৎ এমন প্রশ্নে ঘাবড়ে গেল সুচেতন। যা বলতে চেয়েছিল, সব কেমন গোলমাল হয়ে গেল। ও আমতা আমতা করে বলল, ‘আসলে ওই যে দেখছ না, ওই দিগন্ত বিস্তৃত মাঠটা, ওটা আমার খুব প্রিয়। তাই তোমাকে দেখাব বলে ডেকে এনেছি।’
ওর কথা শুনে মুখে দুষ্টুমি মাখা হাসিটা রেখে, বুকে ঢেউ তোলা গভীর চোখে ওর দিকে চেয়ে রইল খেয়া।
নিজের দৃষ্টিটাকে যে কোথায় লোকাবে তাই ঠিক করে উঠতে পারছিল না সুচেতন।
ওকে বাঁচিয়ে দিল খেয়া। নিজের চোখটা ছাদের দিকে নামিয়ে আদুরে গলায় বলল, ‘বুঝেছি, তুমি বোধহয় আমার প্রেমে পড়েছ। কিন্তু কী জানো, আমিও না...’
বুকে দামামা বাজতে শুরু হল সুচেতনের। ‘আমিও না’ বলে থেমে গেছে খেয়া।
আর থাকতে পারল না সে। পাগলের মতো খেয়ার হাত দুটো চেপে ধরে বলে উঠল, ‘পুরোটা শেষ কর বুড়ি, তুমি কী করতে চাইছিলে?’
সুচেতনের হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিল না খেয়া। চোখ থেকে চোখ নামিয়ে নিল ছাদের মেঝেতে। খুব অস্পষ্ট স্বরে বলল, ‘আমিও যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি বুয়াদা, ঠিক তোমার ওই তেপান্তরের মাঠকে ভালোবাসার মতো।’
খেয়ার কথায় সুচেতনের মনে হল, একশো ঘোড়া ছুটছে ওর বুকের ভিতর।
সেই শুরু। সুচেতন বারবার ছুটে ছুটে গেছে শান্তিনিকেতনে খেয়ার আকর্ষণে।
খেয়াও যখন ছুটিতে বাড়িতে আসত তখন ওরা চষে ফেলত কলকাতা শহর।
কবিপক্ষে রবীন্দ্রসদনে গাইতে আসত খেয়া। সুচেতন শুনতে যেত ওর গান।
এর মধ্যে সুচেতন সরকারি চাকরি পেয়ে গেল। খেয়া বিশ্বভারতী থেকে এম.মিউজ করে বেরনোর পর রবীন্দ্র ভারতীতে সংঙ্গীতের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিল। এবার দু’জনে ঠিক করল, দু’জন দু’জনকে বিয়ে করতে চায়, সেই বিষয়টা যে যার বাড়িতে জানাবে।
বাড়িতে জানাবার পরেই বাঁধল গোলোযোগ। খেয়ার বাবা ছিল কলকাতার এক মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল। নামকরা ডাক্তার। তিনি মনে মনে তাঁর এক প্রাক্তন প্রিয় ছাত্রর সঙ্গে খেয়ার বিয়ে দেবেন বলে ঠিক করে রেখেছিলেন। ছেলেটিও ডাক্তার হিসাবে মেধাবি।
আর সুচেতন সামান্য এক সরকারি কর্মচারী।
বেঁকে বসলেন খেয়ার ডাক্তার বাবা। খেয়াও জিদ করে বসল, সে সুচেতনকে বাদে আর কাউকে বিয়েই করবে না। এমন পারিবারিক অশান্তি শুরু হল যে, সুচেতনের মায়ের সঙ্গে খেয়ার মায়ের এতদিনের বন্ধুত্ব ভেঙে যেতে চায়।
ঠিক এই সময় সুচেতন নিজে এই সম্পর্ক থেকে সরে দাঁড়াল। সে খেয়াকে বোঝাল, বাবা-মা কত স্বপ্ন নিয়ে, কত যত্নে, কত কষ্ট করে নিজের সন্তানকে বড় করে। কেবলমাত্র নিজেদের বিবাহিত জীবনের সুখের জন্য, সেই বাবা-মাকে কষ্ট দেওয়া এক ধরনের স্বার্থপরতা। তার উপর তোমার বাবা যখন আমাকে নিজের মেয়ের যোগ্য পাত্র বলে মনে করছেন না। সেক্ষেত্রে চিরকালীন একটা অযোগ্যতা বোঝা নিয়ে আমি এই বিয়ে করতে পারব না। ভালোবাসা মানে যাকে ভালোবাসি, তাকে যে কোনও মূল্যে নিজের করে পেতেই হবে, এই মানসিকতায় তার বিশ্বাস নেই।
এই কথাগুলো যখন সুচেতন খেয়াকে বোঝাচ্ছিল, তখন ওর নিজের মধ্যেই অসম্ভব তোলপাড় চলছিল। মনে হচ্ছিল তার হৃদয়টাকে নিয়ে কেউ গামছা নিংড়ানোর মতো নিংড়োচ্ছে। তবুও জিতেছিল সুচেতন। খেয়ার বিয়ে হয়েছিল তাঁর বাবার পছন্দের পাত্রের সঙ্গেই। বিয়ের পরে খেয়া চলে গিয়েছিল উত্তরবঙ্গে। সুচেতন স্থির করেছিল সে আর বিবাহিত জীবনের মধ্যে ঢুকবেই না।
সুচেতনের বাবা যখন মারা গেলেন, তখন মায়ের অনুরোধে বানু মাসিকে শ্রাদ্ধে নিমন্ত্রণ করতে হেদুয়ার বাড়িতে গিয়েছিল সুচেতন। গিয়ে দেখে খেয়া আছে ওই বাড়িতে। কিছুদিন আগে উত্তরবঙ্গ থেকে এসেছে বাপের বাড়িতে। বানু মাসির সামনে কোনও কথা বলার সুযোগই হয়নি ওদের। নিমন্ত্রণ করে যখন বেরিয়ে আসছে, সেই সময়ে সিঁড়িতে পিছন থেকে ডাকল খেয়া, ‘বুয়াদা, একটু দাঁড়াও। তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে।’
সুচেতন ঘুরে দাঁড়াতেই দেখল, খেয়া খুব দ্রুত নেমে আসছে সিঁড়ি দিয়ে। নেমে সুচেতনের একদম গায়ের কাছে চলে এল খেয়া। খেয়ার চোখে জল। কাছে এসে সুচেতনের দুটো হাত চেপে ধরে বাষ্প জড়ানো গলায় বলল, ‘বুয়াদা, একটা অনুরোধ করব, তুমি রাখবে?’
কতদিন পরে স্পর্শ পেল বুড়ির। সুচেতনের ভিতরে তখন কম্পন। খুব অস্ফুট স্বরে সে বলল, ‘বল, কী কথা?’
‘বুয়াদা, তুমি বিয়ে করে নাও। তুমি না বিয়ে করলে আমি কিছুতেই শান্তি পাচ্ছি না। তন্ময়ের সঙ্গে ঠিকমতো সংসার করতে পারছি না। সব সময় মনে হচ্ছে তোমাকে আমি ঠকিয়েছি। প্লিজ বুয়াদা, এটা তোমার কাছে আমার শেষ অনুরোধ। এই কথাটুকু রেখ।’
এটুকু বলে হাত দুটো ছেড়ে দিল খেয়া। তারপর ধীর পায়ে উঠে গেল সিঁড়ি দিয়ে।
‘কী গো দেখবে, কী দিয়েছে বুড়িদি?’
‘দেখাও।’ কিছুটা কৌতূহলী সুচেতন।
‘দাঁড়াও আনছি।’ শেষ হওয়া চায়ের কাপ দুটো নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ইন্দিরা।
খেয়ার অনুরোধ রেখেছে সুচেতন। সে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত পাল্টেছে। তার ভালোবাসাকে সে নিজের করে না পেলেও, দূর থেকে প্রেমিকার শান্তি, স্বাচ্ছন্দ্য চাওয়াটাও তো এক ধরনের ভালোবাসারই অঙ্গ। তাই ওর মা যখন ওকে বিয়ে করার জন্য অনুরোধ করেছে, তখন আর সে আপত্তি করেনি।
একটা ছোট জুয়েলারি দোকানের কাপড়ের ব্যাগ হাতে ঢুকল ইন্দিরা। সুচেতনের কাছে এসে সেই ব্যাগ থেকে বার করল লাল একটি গয়নার বাক্স। বাক্সটা খুলতেই চমকে উঠল সুচেতন। কী দেখছে সে এটা!
সে দিনটা ছিল খেয়ার জন্মদিন। ডায়মন্ড হারবার বেড়াতে গিয়েছিল ওরা দু’জনে অফিস ছুটি করে। লাঞ্চের পর বিশাল নদীর ধারে ভাঙা কেল্লাটার উপর দু’জন দু’জনের কাঁধ ছুঁয়ে বসেছিল ওরা। তখনই সুচেতন নিজের ব্যাগ থেকে একটা রুপো আর কালো পুঁতি দিয়ে খুব যত্নে বানানো সুন্দর একটা হার খেয়ার গলায় পরিয়ে দিতে দিতে বলেছিল, ‘বুড়ি আজ তোমার জন্মদিনে আমি এমন একটা হার তোমাকে উপহার দিলাম, যা বিয়ের আগে ছেলেরা তার বাগদত্তাকে পরিয়ে দেয়।’
‘ও মা, এটা তো মঙ্গলসূত্র!’ আহ্লাদে বলেছিল খেয়া।
‘আমরা তো আমাদের বিয়ে করার কথা বাড়িতে জানাবই। তার আগে আমি আমার বাগদত্তাকে নিজের করে বেঁধে রাখলাম, এই মঙ্গলসূত্র পরিয়ে।’—খেয়ার নাকে নিজের নাকটা ঘসতে ঘসতে বলেছিল সুচেতন।
‘দেখ, কী সুন্দর এই মঙ্গলসূত্রটা। বুড়িদির চয়েস আছে বলতে হবে। এই হারটা না কি ওর খুব প্রিয়। বেয়ান কিন্তু আমাকে বেশ পছন্দ করে। নইলে এমন সুন্দর...’ গদগদ কণ্ঠে বলেই চলেছে ইন্দিরা।
সুচেতনের কানে ঢুকেও ঢুকছে না অবান্তর কথাগুলো।