শরীর ও স্বাস্থ্য

বেরিয়াট্রিকে ভ্যানিশ ভুঁড়ি! 

কেন মোটা হয় মানুষ? কোন অপারেশনে ওজন ও ভুঁড়ির ঝামেলা থেকে মুক্তি মিলবে? পরামর্শে বিশিষ্ট বেরিয়াট্রিক সার্জেন ডাঃ সরফরাজ বেগ। লিখেছেন মনীষা মুখোপাধ্যায়।

বুফে রেস্তরাঁ হোক কিংবা বিয়েবাড়ির বুফে লাইন, সর্বত্রই সকাল সকাল পৌঁছে যেতে ভালোবাসেন বিভূতিবাবু। পাছে লাইনে পিছিয়ে পড়ে খাবারের ভাগ কম পড়ে যায়! এক একটি খাবার বার কয়েক নিতে হবে, মাটনের নল্লি-পিসগুলো আলাদা করে বাছতে হবে, ওই বৃহৎ গামলা থেকে কয়েক টুকরো মেটেও নিজের জন্য খুঁজে বের করতে হবে। মাছের বড় টুকরো বাছতে হবে, তার উপর যদি বিরিয়ানি থাকে, বেছে বেছে একটু ছোট কিন্তু ভালো সেদ্ধ হওয়া মাংসের টুকরো নিতে হবে। চিংড়িও নিতে হবে বার কয়েক। ফিশফ্রাই যেন বড় হয়— এত কিছু খেয়াল করা কি চাড্ডিখানি কাজ! তাই হাতে সময় রাখাতেই বিশ্বাসী তিনি। বিভূতিবাবু ভাবেন, ‘আগে গেলে বাঘে খায়’-এর তত্ত্ব এখানে খাটে না, বরং ‘আগে গেলে বাঘের মতো খায়’-তেই বিশ্বাসী তিনি। প্রতিবারই খাওয়াদাওয়ার শেষে ‘চোখের খিদে’-য় আরও কয়েক টুকরো রসগোল্লা বেশি খাওয়া হয়ে যায়। তবে তা নিয়ে অপরাধবোধ তেমন নেই! 
চোখ খুলল গত মাসের লিপিড প্রোফাইল রিপোর্টে। ট্রাইগ্লিসারাইড ও কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেক বেশি। ওজনদাঁড়িতে ওজন দাঁড়িয়েছে ১০৫ কেজি! ভুঁড়ির চাপে শ্বাসকষ্ট, হাঁটুর ব্যথা, ডায়াবেটিস সবই জীবনে ধেয়ে এসেছে অনাহূতের মতো। 
এ গল্প একা বিভূতিবাবুর নয়। হয়তো ওজন ১০০ পেরিয়ে যায় না সবসময়, তবে ওবেসিটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা আকছার ঘটছে।

‘আক্রান্ত’ লিখলাম কেন? তাহলে কি ওবেসিটি কোনও ‘অসুখ’? 
ভারতীয় উপমহাদেশে ওবেসিটির মতো সমস্যাকে সাধারণ নাগরিক ও সরকার ‘অসুখ’ বলে না মানলেও চিকিৎসাশাস্ত্রে একে ‘অসুখ’ বলেই দেগে দেওয়া হয়। আমাদের চারপাশে ওবেসিটি বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হল এই অসুখ সম্পর্কে সচেতনতা না থাকা। আর এর হাত ধরেই প্রয়োজন হয়ে পড়ে বেরিয়াট্রিক সার্জারির। সাধারণ মানুষের কাছে যা ‘ভুঁড়ি কমানোর অপারেশন’ বলেই পরিচিত। সেই বিষয়ে আলোচনা করার আগে, জেনে নেওয়া যাক, ওবেসিটি কী।

কে কে মোটা
ওবেসিটির সবচেয়ে সরলতম সংজ্ঞা লুকিয়ে আছে ইংরেজির এক প্রবচনে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘One who looks fat, is fat’. অর্থাৎ যাকে দেখতে মোটা লাগে, সে-ই মোটা। এবার আসি বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞায়। কোনও ব্যক্তির বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) ৩০-এর বেশি হলে সে-ই ব্যক্তিই ওবেসিটিতে আক্রান্ত। আবার দক্ষিণ এশীয়দের জন্য শুধু বিএমআই দেখেই  ওবেসিটি মাপা হয় না। সম্প্রতি এঁদের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি নিয়ম জারি করেছে। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ইত্যাদি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলির ক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তির বিএমআই ২৫ পেরিয়ে গেলেই তিনি ওবেসিটিতে আক্রান্ত বলে ধরা হবে। এই অঞ্চলের মহিলাদের কোমরের মাপ ৮০ সেমির বেশি ও পুরুষদের কোমরের মাপ ৯০ সেমির বেশি হলে বুঝতে হবে তিনি ওবেসিটির রোগী। শিশুদের বেলায় বুঝতে হবে ঘাড়ের মাপ দেখে। 

বিএমআই-এর হিসেব
বিএমআই = (কেজিতে দৈহিক ওজন) ÷(মিটারে দৈহিক উচ্চতা) ২ কেজিতে কোনও ব্যক্তির দৈহিক ওজনকে, দৈহিক উচ্চতার (মিটারে) বর্গমূল দিয়ে ভাগ করলে তবেই বেরবে বিএমআই। ধরা যাক একজন ব্যক্তির ওজন ৯০ কেজি, উচ্চতা ৫ফিট ১০ ইঞ্চি। সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির মিটারে উচ্চতা হবে ১.৭৭৮ মিটার। অতএব ওই ব্যক্তির বিএমআই = (৯০) ÷(১.৭৭৮)২ = ২৮.৪৬। 
বিএমআই স্কোর ২০ থেকে ২৫-এর মধ্যে থাকলে সেই ব্যক্তির ওজন স্বাভাবিক। ৩০-এর বেশি স্কোর হলে তিনি ওবেসিটি বা স্থূলত্ব রোগে আক্রান্ত। বিএমআই স্কোর ৪০-এর উপরে চলে গিয়ে থাকলে তাকে বলে মরবিড ওবেসিটি বা সাংঘাতিক স্থূলত্ব।
ওবেসিটি ধরা পড়লে শরীরের যে কোনও অংশে চর্বি জমার তুলনায় সবচেয়ে বেশি চর্বি জমে পেটে। বাইরে থেকে পেটে চর্বিকে নিতান্তই সাধারণ ‘ভুঁড়ি’ বলে মনে হলেও আসলে পেটের ভিতরের লিভার, যকৃত, খাদ্যনালী, প্যাংক্রিয়াস ইত্যাদি অঙ্গে মেদ জমে। 
এসব জায়গায় মেদ জমা খুব ক্ষতিকর। তাই ভুঁড়ি থাকলে স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, লিভার সিরোসিস, হার্টের রোগ সহ নানা অসুখে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা বহু গুণ বাড়ে। সেই ভয় থেকেই অত্যধিক মেদ জমলে বেরিয়াট্রিকের কথা ভাবা হয়।

মোটা হওয়ার কারণ
সহজ কথায়, যে ক্যালোরি খাচ্ছে তা খরচ করতে পারছে না বলেই একজন মোটা হয়ে যাচ্ছে। মানুষের মোটা হওয়ার নেপথ্যে তার জিন যেমন দায়ী, তেমনই দায় তার জীবন সংগ্রামেরও। পশুদের মতো দৌড়-ঝাঁপ করে শিকার জোগাড় করতে হয় না মানুষকে। দিনের বেশিরভাগ সময়ই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে বা বসে পেশা নির্বাহ করে মানুষ। খিদের চোটে বেশি খেয়ে ফেলা, ভুল খাবার খেয়ে ফেলা ও ক্রয়ক্ষম হওয়ার কারণে ঘন ঘন খাবার অর্ডার করে ফাস্ট ফুড খাওয়া— এসবই মানুষের স্বভাববৈশিষ্ট্য। পশুদের মতো আত্মরক্ষার্থে দৌড়োদৌড়ি করার প্রয়োজনও পড়ে না। বরং অফিস সেরে বাড়ি ফিরে টুকটাক কাজ মিটিয়েই হয় ফুড চেন থেকে খাবার অর্ডার করে ওটিটি, খেলা বা খবর শুনছে। শরীরচর্চার বিনোদনের চেয়ে আপন করে নিচ্ছে চ্যাট বা গেমিংকে। দিনের বড় মিলগুলোয় ভাত-রুটি বেশি খেয়ে তরকারি ও প্রোটিন কম পাতে নিচ্ছে। অফিসে বা পথ চলতে খিদে পেলেই দোসর হচ্ছে রোল, মোমো, ফুচকা। এমন ভুল জীবনযাপনে মোটা হওয়াটাই স্বাভাবিক। এর সঙ্গে রয়েছে মানুষের চোখের খিদে। পেট ভরে যাওয়ার পর কিন্তু পশুরা আর খাবার খায় না। কিন্তু মানুষ খায়। সমাজতত্ত্ববিদদের মতে, যত বেশি প্রযুক্তিনির্ভর হয়েছে, ততই সে স্থূলত্বের দিকে এগিয়েছে। এছাড়া আধুনিক জীবনে তার সঙ্গী হয়েছে অবসাদ। নানা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অবসাদে একাংশের খাওয়া কমে যায়। তবে একাংশ আবার এই অবসাদের শিকার হয়েই অতিরিক্ত খেয়ে ফেলে। বিশেষ করে, ওজন কমানোর জন্য খুব কড়া ডায়েট করলে ও খুব কঠিন নিয়মে বাঁধা শরীরচর্চা করলে একটা সময়ের পর মানুষের মন বিদ্রোহ করে ওঠে। ফলে যা যা খাবার খাওয়া এতদিন বারণ ছিল, সেগুলো সে খাওয়া শুরু করে দেয়। এছাড়া মানুষের আর একটি দোষ, টিভি বা খেলা দেখতে দেখতে খাবার খাওয়া। এতে মানুষ কী খাচ্ছি, কেন খাচ্ছি সেসবের হিসেব রাখে না। ফলে মোটা হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

বাড়ির গিন্নির জ্বালা! 
অনেক বাড়িতে দেখা যায়, বাড়ির মাথা যে গৃহিণী, তিনি হয়তো একটা সময়ের পর মোটা হতে শুরু করলেন। একে তো তাঁরা খেতে বসেন সকলের খাওয়া শেষ হলে, একপ্রকার অবেলায়। অসময়ে খাওয়া তাই ওবেসিটি ডেকে আনে। এর সঙ্গে যোগ হয়, ‘এটুকু আর কোথায় ফেলব’-র মতো সমস্যা! প্রতিদিনের খাবারে অল্প কিছু বাঁচলে তা ফেলে দেওয়াকে ‘অপচয়’ বলে মনে করেন গৃহিণীরা। তা ফ্রিজে তোলারও নানা ঝক্কি থাকে। তাই সেই অতিরিক্ত খাবারটুকু বাধ্য হয়েই খেয়ে ফেলেন তাঁরা। দিনের পর দিন একাধিক তরিতরকারির ক্ষেত্রে এই নিয়ম চালু থাকলে বাড়ির গৃহিণীর অনিচ্ছাকৃত বেশি খাওয়া হবে ও তাঁর ওজন বাড়বে।

জিনগত সমস্যা
মোটা হওয়ার নেপথ্যে জিনেরও কিছু কারসাজি আছে।    এক একজন মানুষের শরীর শরীরচর্চা ও ডায়েটে এক  একভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়। এখানেই জিনের ভূমিকা। এককোষী প্রাণী থেকে বিবর্তিত হতে হতে মানুষ হওয়া সম্ভব হয়েছে। তাই এককোষী প্রাণীর শরীরে থাকা বেশ কিছু গাট ব্যাকটেরিয়া আজও মানুষের শরীরে বাস করে। কারও কারও শরীরে এই ব্যাকটেরিয়া বেশ সক্রিয়। এই ব্যাকটেরিয়ার প্ররোচনায় মানুষ বেশি খায়। মানুষের খাওয়া খাবার ব্যাকটেরিয়াগুলোই বেশি করে খেয়ে নেয়। ফলে অনেক বেশি খেয়ে ফেলে মানুষ।

ভুঁড়ি হচ্ছে বুঝব কী করে?
আবারও একই উত্তর। চোখে দেখে যদি মনে হয়, ভুঁড়ি আছে তাহলে সেই ব্যক্তির ভুঁড়ি আছে। সহজ একটি উপায়ে ভুঁড়ি বোঝা যায়। বলা হয়, সোজা দাঁড়িয়ে নীচের দিকে মুখ করে কেউ যদি তাঁর পায়ের বুড়ো আঙুল দেখতে না পায়, তাহলে তাঁর ভুঁড়ি আছে। এমনিতে পেটের মাপ ছেলেদের বেলায় ৯০ সেমি ও মেয়েদের বেলায় ৮০ সেমির বেশি হলে বুঝতে হবে তাদের ভুঁড়ি আছে। 

ভুঁড়ি থাকলেই বেরিয়াট্রিক?
না, শুধু ভুঁড়িই বেরিয়াট্রিকের কারণ নয়। বেরিয়াট্রিক তাঁদেরই হবে, যাঁদের ওজন ১০০ কেজির বেশি হয়েছে কিন্তু নিয়ম মেনে ডায়েট ও শরীরচর্চা করেও মেদ ঝরাতে সক্ষম হচ্ছেন না। তাঁদেরই বেরিয়াট্রিক সার্জারির পরামর্শ দেওয়া হয়। দেখা গিয়েছে, অত্যধিক ওবেসিটি যাঁদের আছে, তাঁরা প্রথম প্রথম নিয়ম মেনে ডায়েট ও এক্সারসাইজ শুরু করলেও একটা সময়ের পর আর ওজন কমাতে সক্ষম হন না। তখনই বেরিয়াট্রিক সার্জারি করার কথা ভাবা হয়। তবে সাধারণত দেখা গিয়েছে, ওজন ১০০ কেজি ছাড়ালে ভুঁড়ির ব্যাসও অনেক বেশি হয়। 

সার্জারির প্রয়োজনীয়তা
১০০ কেজির বেশি ওজনের রোগী, যাঁর বিএমআই স্কোর ৪০-এর উপর চলে গিয়েছে, ভুঁড়ির কারণে ডায়াবেটিস, স্লিপ অ্যাপনিয়া, হার্টের সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তিনি যদি কোনও চেষ্টাতেই ওজন কমাতে না পারেন, তাহলে তাঁকে সার্জারির পথেই যেতে হয়। এমনিতে ভুঁড়ি কমানোর নানা পদ্ধতি আছে। সবচেয়ে প্রথমেই রোগী যে পদ্ধতি অবলম্বন করে তা হল কম খাওয়া। কিন্তু এক্ষেত্রে একটা সমস্যা আছে। এতে ওজন প্রাথমিকভাবে ২-৩ কেজি কমেও। তখন শরীর তার সঞ্চিত ফ্যাট পুড়িয়ে দৈনন্দিন কাজ করে। ফলে ওজন কমে। যেমন, একজন ব্যক্তি আগে ১৫০০ ক্যালোরি খেলে এখন হয়তো ১২০০ ক্যালোরি খাচ্ছেন। এই অভ্যেস মাস দুয়েক চললেই শরীর তার মেটাবলিজম কমিয়ে দেয়। এবার ওই ১২০০ ক্যালোরিতেই কাজ চালিয়ে নেয় সে। তাই খাবার কমানোর পরেও ওজন কমে একটা জায়গায় স্থির হয়ে যায়। তবে রোগী প্রতি মাসে ডায়েট পরিবর্তন করলে ও নিয়ম করে শরীরচর্চা করলে অনেকটা উপকার পান। অনেকে আবার খাবার কমালেও শরীরচর্চা করতে পারেন না। শারীরিক নানা সমস্যাও থাকে। তখন অবশ্যই বিকল্প পদ্ধতির কথা ভাবতে হবে। এই বিকল্পটিই হল ভুঁড়ি কমানোর সার্জারি।

বেরিয়াট্রিক সার্জারি কীভাবে হয়
মানুষের খিদের অনুভূতি বোঝা যায় তার মস্তিষ্ক থেকে। খিদে পেলে পাকস্থলী থেকে সঙ্কেত গিয়ে পৌঁছায় তার হাইপোথ্যালামাসে। তখনই সে বোঝে তাকে এবার খেতে হবে। বেরিয়াট্রিক সার্জারি বেশ কায়দা করে মস্তিষ্কে পৌঁছানো এই সঙ্কেতকে বদলে দেয়। খাবার খাওয়ার পরিমাণও কমিয়ে দেয় এই সার্জারি। ফলে ওজন অনেকটা ঝরে যায়। প্রথমে দেখে নেওয়া হয় রোগীর কতটা ওজন কমাতে হবে। সেই অনুযায়ী কত ফ্যাট সেল ধ্বংস করতে হবে তার একটা হিসেব তৈরি হয়। এরপর ল্যাপেরোস্কোপি করে পেটে ছোট ফুটো করা হয়। তারপর এই ফুটো মারফত রোগীর পাকস্থলীর প্রায় ৭০ শতাংশ অংশকে একে অন্যের সঙ্গে স্টেপল করে দেওয়ার মতো জুড়ে দেওয়া হয়। এতে প্রচুর ফ্যাট সেল ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এই ৭০ শতাংশ অংশই অব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়। ফলে শরীরে ফ্যাট জমে কম ও খুব অল্প খেলেই রোগীর পেট ভরে যায়। আরও এক প্রকারের বেরিয়াট্রিক সার্জারি হয়। সেক্ষেত্রে পাকস্থলীর সঙ্গে খাদ্যনালীরও কিছুটা অংশ অব্যবহারযোগ্য করে দেওয়া হয়। এতে রোগী একেবারেই বেশি খাবার খেতে পারেন না। কম খাওয়ার কারণে ওজনও দ্রুত কমে। শুরুর দিকে এই অস্ত্রোপচারে ২-৩ শতাংশ ঝুঁকি থাকলেও এখন এই অস্ত্রোপচার প্রায় ঝুঁকিহীন। উন্নতমানের হাসপাতাল বা ওটি সেন্টারে দক্ষ চিকিৎসক দিয়ে সার্জারির সুযোগও এখন অনেক বেড়েছে। ইদানীং পেটে স্রেফ একটি বা দু’টি ফুটো করে এই অস্ত্রোপচার করা হয় বলে রোগীর শরীরে সংক্রমণের শঙ্কা প্রায় থাকে না, রক্তপাতের পরিমাণ ও ব্যথাবেদনা অনেক কম হয়। লোকাল অ্যানেস্থেশিয়া করেই এই সার্জারি করে ফেলা যায়, তাই ওটি টেবিলে ঝুঁকিও কম থাকে। অস্ত্রোপচারের পর ২-৩ দিনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়াও সম্ভব হয়। ফলে হাসপাতালে থাকার খরচ কমে। 

বেরিয়াট্রিকের লাভ
বেরিয়াট্রিক অপারেশনের পর বছর খানেকের মধ্যে প্রায় ৫৫-৬০ কেজি ওজন কমিয়ে ফেলা সম্ভব। ফলে ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেশার, ইত্যাদি কমিয়ে ফেলা সহজ হয়। বহু রোগী রয়েছেন, যাঁদের আগে ইনসুলিন নিতে হতো, এই সার্জারির পর ইনসুলিন নেওয়া বন্ধ হয়েছে। এমনকী, ওবেসিটির কারণে আসা বন্ধ্যাত্ব থেকেও মুক্তি পেয়েছেন অনেকে। ব্লাড প্রেশারের ওষুধের ডোজ কমেছে। হাঁটু প্রতিস্থাপনেরও আর প্রয়োজন হয়নি। স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা চিরতরে শেষ হয়েছে। নাক ডাকার সমস্যা মিটে ভালো ঘুম হয়েছে। 

সার্জারির পরের নিয়ম
বেরিয়াট্রিক সার্জারির পর রোগীর সুস্থতার পুরোটাই নির্ভর করছে তাঁর নিয়মিত চেক-আপের উপর। এই সার্জারি করার পর নিয়ম মেনে ডায়েট না করলে, শরীরচর্চা না করলে শরীরে ফের ফ্যাট সেল বাড়বে ও ওজন বেড়ে যাবে। 
এমন অনেক সেলিব্রিটি বা শিল্পপতির ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে এই অস্ত্রোপচার করার পর আবার শিথিল জীবনযাপনের কারণে ফের আগের ওজনে ফিরে গিয়েছেন। তাই অপারেশনের পরেও ডায়েট, শরীরচর্চা অবশ্যই রুটিনে রাখতে হবে। 
এছাড়া রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চেক আপে আসতে হবে। সাধারণত ৩, ৬ ও ১২ মাসের মাথায় চেক আপ করাতে হয়। রুটিনে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে কিছু ভিটামিন ট্যাবলেট রাখতে হয়। 

সকলেই যোগ্য নয়
যে কোনও ব্যক্তির ওজন বাড়ল ও বেরিয়াট্রিকের শরণ নিলেন, বিষয়টি এত সহজ নয়। একজন রোগীর বেরিয়াট্রিক সার্জারি সম্ভব কি না তা নির্ভর করে তাঁর হার্ট ও ফুসফুসের অবস্থার উপর। এই দু’টি অঙ্গের যে কোনও একটিও যদি ভালো না থাকে তাহলে এই সার্জারি করা সম্ভব হয় না।
  এছাড়া মদ্যপান ও ধূমপানের স্বভাব থাকলে এই সার্জারি করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। তাই রোগীকে আগে এই দুই স্বভাব থেকে মুক্ত হতে বলা হয়। অস্ত্রোপচারের আগে সেসব স্বভাব আয়ত্তে আনতে হয়। নইলে অপারেশনের পর পেটে ঘা হতে পারে। ড্রাগ আসক্তি থাকলেও এই অস্ত্রোপচার সম্ভব হয় না। 
সাধারণত ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত কিশোর-কিশোরীরা বাড়তে থাকে। এই অপারেশনের পর খাওয়া কমে গেলে তাদের বৃদ্ধি কমে যায়। তাই খুব প্রয়োজন না হলে ১৮ বছরের নীচে সার্জারি করার পরামর্শ দেওয়া হয় না। 
অবসাদে ভুগছেন এমন রোগীরও বেরিয়াট্রিক সার্জারি করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে আগে অবসাদের চিকিৎসা করে তারপর এই সার্জারি করানো উচিত। 
4d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কর্মের প্রসার ও উপার্জন বৃদ্ধির যোগ। গৃহ পরিবেশে চাপা উত্তেজনা। পেশার প্রসার।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.০৭ টাকা৮৪.৮১ টাকা
পাউন্ড১০৮.৬৫ টাকা১১২.২০ টাকা
ইউরো৯১.৫৭ টাকা৯৪.৭৬ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
17th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা