যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
সহজভাবে বললে বোঝায়, এটি সৃজনশীল ক্রিয়াকলাপের এক রূপ। যা দর্শকদের সামনে সঞ্চালিত হয়। যার মধ্যে রয়েছে নাটক, সঙ্গীত ও নৃত্য।
ভারত এমন একটা দেশ যেখানে এর চর্চা চলে আসছে প্রায় তিন হাজার বছর ধরে। প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে যে, তৎকালীন রাজন্যবর্গ প্রায় সব সময়ই এ বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন এবং সমাজে তার প্রসার ঘটানোর প্রয়াস করেছেন। মজার ব্যাপার, ভারতবর্ষেই কিন্তু প্রথম শিল্পকলার জন্যে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল!
এখন ইউনিভার্সিটি পারফর্মিং আর্টসের প্রধান তিনটি শাখার জন্য তিন বছরের কোর্স অফার করছে— সঙ্গীত, নৃত্য ও নাটক।
এখানে ইউনিভার্সিটি আপনাকে একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে একটি নির্দিষ্ট আর্ট ফর্মকে বিশ্লেষণের মাধ্যমে শেখাবে এবং এই শেখার প্রক্রিয়াটি একটি সিরিজের মধ্যে দিয়ে যাবে।
যদি কোনও ছাত্র কিংবা ছাত্রী এই শেখার পদ্ধতি অনুসরণ করে! অবশ্যই সে সফলভাবে শীঘ্রই একজন সৃজনশীল ব্যক্তি হয়ে উঠবে।
আজকাল পুরনো তত্ত্ব বদলে যাচ্ছে এবং নতুন শিক্ষাবিজ্ঞান বিকশিত হচ্ছে। এছাড়াও শিল্প ধারণা সম্পাদনের ক্ষেত্রে নতুন নতুন ধারণা তৈরি হচ্ছে।
পুরনো বিশ্বাস ছিল যে, একজন ভালো পারফরমারের অবশ্যই ঐশ্বরিক প্রতিভা থাকতে হবে! যাকে বলে গড গিফটেড ট্যালেন্ট। মজার ব্যাপার আধুনিক শিক্ষণ পদ্ধতিতে এই ট্যালেন্ট তৈরি করা যায়। একজনকে শিক্ষিত মেধাবী গড়ে তোলা যায়। অতএব নির্দিষ্ট ছাত্রটি ক্রিয়েটিভিটির কয়েকটা স্তর পেরলে সহজেই একজন শৈল্পিক মানুষ হয়ে উঠছে।
এর একটা বিস্তৃত পরিসর রয়েছে। কী আছে তাতে? সামান্য কয়েকটা উদাহরণ—
রয়েছে বিভিন্ন শৈলীর নাচ, নৃত্যাভিনয় গান, অভিনয়, ডিরেকশন, সিনেমাটোগ্রাফি, স্ক্রিপ্ট রাইটিং, সেট ডিজাইনিং, স্টেজ ম্যানেজমেন্ট, কোরিওগ্রাফি, ডিজিটাল মিউজিক প্রোগ্রামিং, সাউন্ড রেকর্ডিং আরও কত কী! সঙ্গে অবশ্যই জানতে হয় শিল্পের সঙ্গে অতপ্রোতভাবে জড়িত বিষয়গুলো এবং ইতিহাসটা। একজন সফল শিল্পী হতে গেলে ন্যূনতম এই শিক্ষাগুলো দরকার। এগুলো পদ্ধতিগতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই দিতে পারে।
এবার ছাত্রটি তার আগ্রহের নির্দিষ্ট বিষয়টা বেছে নেবে। নিজের স্বার্থের জন্য সে অবশ্যই কোর্সের বর্ণনাগুলো দেখবে। আর চয়েস যদি ঠিকঠাক হয়, তবে সে অবশ্যই প্রতিযোগিতামূলক শিল্পের এক অংশ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলবে, যাতে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। ক্রমে ক্রমে সুবিশাল আর্ট ইন্ডাস্ট্রির এক অংশীদার হবে।
কিন্তু তারপর? আপনারা কী মনে করেন?
এটা কি আদৌ কাজের? আপনাদের প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়— হ্যাঁ, অবশ্যই! আমি একজন একশো শতাংশ শিল্পের লোক, আমি কিন্তু পরম্পরায় এই ধাপগুলো পেরিয়েই আমার কেরিয়ার তৈরি করেছি। আর প্রথাগত ব্যাকরণ ভেঙে নতুন কিছু যদি সৃষ্টি করতে চাই, তবে গ্রামারটা তো জানতে হবে! আন্দাজে কিছু তো হয় না!
তাই পারফর্মিং আর্টস নিয়ে পড়াটা জরুরি এবং আবশ্যিক। আমি মনে করি কেরিয়ার তৈরি করতে হলে অবশ্যই পারফর্মিং আর্টস নিয়েই ভবিষ্যৎ তৈরি করা উচিত।
আধুনিক বিশ্বের দিকে তাকালে বোঝা যাবে, সবকিছুর যেন দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। কিছুদিন আগে যা কিছু শুধুমাত্র বাড়ির বিনোদনের জন্য আজ কিন্তু তা একটি চাহিদা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একটি দুধের শিশুও মায়ের হাত থেকে মোবাইলটা কেড়ে নিয়ে গানে নিবিষ্ট হয়ে যাচ্ছে!
পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়— বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষায় শিক্ষিত বেশিরভাগ সঙ্গীত স্নাতক একজন অনন্য গুণী শিল্পী হয়ে ওঠেন আর এই শিক্ষা অবশ্যই তাঁকে দক্ষ ও যুক্তিবোধসম্পন্ন করে তোলে এবং যা তুলনামূলকভাবে বেশি আয়ের সঙ্গে স্থিতিশীল কাজে নিশ্চিত করে।
ভালো শিল্পীরা সবসময় ভালো কাজ পাবেন তা ঠিক, তুলনায় পারফর্মিং আর্টসের ডিগ্রিধারী একজন ব্যক্তি? তিনি কিন্তু নিজেকে আর্ট ইন্ডাস্ট্রির একজন অপরিহার্য শিল্পী করে তুলছেন। এটা কিন্তু প্রমাণিত যে পারফর্মিং আর্টসের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা মন, আবেগ ও দেহকে এমনভাবে যুক্ত করতে সক্ষম হয়, যা তাদের সহানুভূতি, বোঝাপড়া, মানসিক বুদ্ধি ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন প্রতিপক্ষের সঙ্গে বাস্তব জীবনের পরিস্থিতিগুলোর মাধ্যমে সঠিকভাবে প্রবাহিত হতে দেয়।
অতএব দেখা যাচ্ছে যে সঙ্গীত, নৃত্য, নাটক মানুষকে সামাজিক করে তোলে। তাই এর মাধ্যমে একজন প্রাণবন্ত এবং গতিশীল মানুষ হওয়ার সুযোগ নেওয়া উচিত।