সংবাদদাতা: কৃষিক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিবেশ সহনশীল ধানবীজের ব্যবহার আর রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে বা বন্ধ করে নতুন ভাবনায় এগিয়ে যেতে চাইছে রাজ্যের কৃষি দপ্তর ও জৈব প্রযুক্তি পরিকল্পনা বিভাগ। রাজ্যের প্রধান ফসল ধানচাষে প্রথাগত বীজ ব্যবহার হয়ে থাকত। এর ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে চাষিদের ক্ষতির মুখে পড়তে হতো। কোথাও অতিরিক্ত জলে ডুবে ধান পচে নষ্ট হতো। আবার বহুক্ষেত্রে সেচের জলের অভাবেও ধান মরে যেত। প্রথাগত যে বীজে চাষিরা ধানচাষ করে থাকতেন তা প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারত না। এজন্য রাজ্য সরকারের ধান গবেষণাগারে প্রতিকূল পরিবেশে বাঁচতে পারে, এমন কয়েকটি প্রজাতির ধানের বীজ তৈরি করেছে। এক ধরনের ধানবীজে রয়েছে লবণাক্ত জল সহ্য করে বেঁচে থাকার ক্ষমতা। সুন্দরবন ও উপকূলবর্তী এলাকায় এই ধরনের বীজ ব্যবহার করা হচ্ছে। এই জাতের ধানচাষে খরচ ও রক্ষণাবেক্ষনের ধকল কম। নিমপীঠ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের শস্য বিশেষজ্ঞ চন্দন মণ্ডল জানিয়েছেন, মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে জুন মাসের শেষ পর্যন্ত স্বর্ণ সাব ওয়ান ধানের চাষে শুরু করতে পারলে ভালো ফলন এবং ভালো লাভ পেতে পারেন চাষিরা। স্বর্ণ সাব ওয়ান ধান স্বর্ণের মতো দেখতে। ১৫০ দিনে ফসল পাওয়া যায়। তবে সাধারণ পদ্ধতির চেয়ে শ্রী পদ্ধতিতে এই ধানের চাষ করলে চাষিরা ভালো লাভ পাবেন। এই ধান বিঘা প্রতি ১৬-১৮ মণ ফলন দিচ্ছে। এছাড়া এই ধান চাষে বীজ, সার সংক্রান্ত রোগপোকার আক্রমণও কম হচ্ছে। জয়নগরের গড়দেওয়ানি, মনিরতট, চুপড়িপাড়া, দেউলবাড়ি এলাকায় এই ধানের চাষ করেছেন চাষিরা। গড়দেওয়ানির ইশাক মণ্ডল, আবু সিদ্দিকি লস্কর সহ কয়েকজন চাষি জানিয়েছেন, নিমপীঠ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র থেকে এই স্বর্ণ সাব ওয়ান জাতের ধানের বীজ সংগ্রহ করে গত বছর চাষ করে ভালো লাভ পেয়েছি। তাই এবারও এই ধানের চাষ শুরু করেছি। কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র থেকে এই চাষের ব্যাপারে গত বছর প্রশিক্ষণ দিয়েছে। চাষ সংক্রান্ত সবরকমের সাহায্য করেছে। নিচু জমিতে এই ধান চাষ করতে হয়। আয়লার পর থেকে আমাদের এলাকায় চাষের চরিত্রটাই বদলে গিয়েছে। জমিগুলো অত্যাধিক লবণাক্ত হয়ে যাওয়ায় চাষ করা যাচ্ছিল না। তবে এই স্বর্ণ সাব ওয়ান জাতের ধান লবণ সহনশীল হওয়ায় আর কোনও অসুবিধা হচ্ছে না।