সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
মানালি মনীষা দে, বাসবদত্তা চট্টোপাধ্যায়, স্নেহা চট্টোপাধ্যায়, ঋতা দত্ত চক্রবর্তীর মতো অভিনেত্রীরা এতদিন এই ধারাবাহিকে দর্শকের মনোরঞ্জন করেছেন। মহিলাকেন্দ্রিক ধারাবাহিকে পুরুষ অভিনেতারাও জনপ্রিয় হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম দ্রোণ মুখোপাধ্যায়। শ্যুটিং ফ্লোর থেকেই তিনি বললেন, ‘আমাদের প্রতিদিনই দুটো, তিনটে সিন থাকত। শেষদিনও সেটাই ছিল। কিন্তু নিঃসন্দেহে সেটের পরিবেশ কিছুটা বদলে গিয়েছে। ধারাবাহিকের ক্ষেত্রে পুরো টিমের সঙ্গে পরিবারের মতো সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। প্রতিদিন আর দেখা হবে না ভেবে খারাপ লাগছে। ভারাক্রান্ত মন নিয়েই আমরা কাজ করলাম।’
এক বছর মতো চলল এই ধারাবাহিক। এক সময় টেলিভিশনে দু-তিন বছরও টানা চলেছে কোনও কোনও প্রোজেক্ট। পাশাপাশি তিন মাসের মধ্যে ধারাবাহিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার উদাহরণও সত্যি। অভিনেতা হিসেবে বিষয়টি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? দ্রোণের কথায়, ‘ধারাবাহিক শেষ হওয়ার জন্য অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে। শুধুমাত্র দর্শকের ভালো লাগছে না বা টিআরপি কম বলেই ধারাবাহিক বন্ধ হচ্ছে, তা হয়তো নয়। বাকি কারণগুলো হয়তো আমরা জানতে পারি না। প্রযোজক, চ্যানেল কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই সেটা ভেবেছেন। কত দিন চালালে দর্শকের মধ ধারাবাহিকের প্রভাব থাকবে, এই সব পরিকল্পনা তাঁদের থাকেই। তবে যতদিন প্রোজেক্ট চলেছে, দর্শক কোনওদিন আমাদের পাশ থেকে সরে গিয়েছেন বলে আমার মনে হয় না। দর্শক এখনও আমাদের ভালোবাসেন। আজও প্রথম দিনের মতোই ফিডব্যাক পাই। দর্শক আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বলে ধারাবাহিক বন্ধ হচ্ছে, এমন মনে করার কোনও কারণ নেই। সাম্প্রতিক অতীতেই এর কম সময়ের মধ্যেও ধারাবাহিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার নজির রয়েছে।’
মঙ্গলবার শ্যুটিংয়ে পৌঁছে ধারাবাহিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছেন বলে দাবি করলেন বাসবদত্তা। তাঁর কথায়, ‘অনেকদিন ধরে আমরা অনুমান করছিলাম যে ধারাবাহিক শেষ হবে। কিন্তু শ্যুটিংয়ে পৌঁছে জানতে পারব, সেদিনই শেষ শ্যুটিং এটা একেবারেই আশা করিনি। সব শুরুরই তো শেষ থাকে। ফলে এটা অজানা তা তো নয়। কিন্তু আমার কেরিয়ারে এটা প্রথমবার হল, শ্যুটিংয়ে গিয়ে ধারাবাহিক শেষ হওয়ার খবর পেলাম। অন্যগুলোর ক্ষেত্রে এক সপ্তাহ আগে বা চারদিন আগে জানতে পেরেছিলাম। সেটাই খারাপ লাগছে, আর একটু আগে কি জানানো যেত না?’ চরিত্র নিয়ে নিজস্ব কিছু ভাবনা ছিল অভিনেত্রীর। তা আর বাস্তবায়িত করা সম্ভব হল না বলে জানালেন। এ প্রসঙ্গে বাসবদত্তা বলেন, ‘গল্পে আমার স্বামীর বন্ধুর সঙ্গে আমার একটা সম্পর্কের দিক তৈরি হচ্ছিল। আশা করেছিলাম নতুন ওই চরিত্রটির সঙ্গে ভালো কিছু দৃশ্য করতে পারব। সেটা হল না বলে খারাপ লাগছে।’
ধারাবাহিকের গল্পের ধরন এখন বদলেছে অনেকটাই। বদলেছে দর্শকের পছন্দও। তবে এই ধারাবাহিকের হাত ধরে বন্ধুত্বের যে গল্প শুরু হয়েছিল, তার রেশ থেকে যাবে অভিনেতাদের জীবনে। এই ধারাবাহিক থেকেই তৈরি হওয়া কিছু বন্ধুত্ব হয়তো আজীবন লালন করবেন তাঁরা, এমনটাই মনে করেন স্নেহা। তাঁর কথায়, ‘পাঁচটি মেয়ের গল্প ছিল। আমরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কাজ করলাম। তার মধ্যে মানালি আমার খুব ভালো বন্ধু। আমাদের অনেকদিনের পরিচয়। একসঙ্গে মেকআপ রুম শেয়ার করা, ভালো কিছু দৃশ্যে একসঙ্গে অভিনয়, খুব ভালো লেগেছিল। সেটা তো মিস করবই।’
বর্তমান পরিস্থিতিতে ধারাবাহিকের আয়ু যে এক বছর অন্তত হল, এটাই বড় পাওনা বলে মনে করছেন স্নেহা। তাঁর মতে, ‘এখনকার দিনে এক বছর ধারাবাহিক চলেছে, সেটা বড় ব্যাপার। আগে ধারাবাহিক দুই-আড়াই বছরের কম চলবে, সেটা আমরা ভাবতেই পারতাম না। তাছাড়া এই ধরনের গল্প খুব কম হয়। এটা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। ফলে একটু অন্যরকম গল্পে সুযোগ পাওয়াটাও বড় বিষয়। এটা যে শেষ হবে, সেটা আমরা বুঝতে পারছিলাম, কিন্তু কবে শেষ হবে সেটা জানা ছিল না।’
ফ্লোর জুড়ে শেষ হয়েও না শেষ হওয়ার গল্প। আবার নতুন ফ্লোরে দেখা হওয়ার অপেক্ষায় রইলেন অভিনেতারা। অপেক্ষায় থাকবেন দর্শকও।