মানসিক অস্থিরতা দেখা দেবে। বন্ধু-বান্ধবদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা দরকার। কর্মে একাধিক শুভ যোগাযোগ আসবে। ... বিশদ
মানসী নাথ
প্রথমবার ওয়েব প্ল্যাটফর্মে কাজ করলেন তাও বাংলায়। হঠাৎ রাজি হয়ে গেলেন?
আসলে আমরা যে কোনও কাজই, সেটা সিনেমা হোক বা অন্য কিছু একটা বিশ্বাস নিয়ে করি। হয় সেটা খুব ভালো হবে, নয়তো ভয়ঙ্কর খারাপ ফল হবে। আশা, বিশ্বাস এগুলো তো রাখতেই হয়।তাছাড়া জিনিসটা যতক্ষণ না তৈরি হচ্ছে তার আগে সেটা বিচার করব কীভাবে? চিত্রনাট্য ও চরিত্র দুটোই পছন্দ হল। সেটা দেখেই কাজটা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। তবে এটা রিস্কও বটে। পরিচালক ভালো-খারাপের উপর সবটা নির্ভর করে। পরিচালক ভালো হলে ফল ভালো হবে না হলে খারাপ।
এক্ষেত্রে কাজটা করতে কেমন লাগল?
খুবই আনন্দ পেয়েছি। সিরিজটা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার। আমি একজন লেখকের চরিত্রে রয়েছি। থ্রিলারের সাসপেন্সটা রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।
পরিচালক সৌরভ চক্রবর্তীকে নতুনই বলা চলে। তাঁর সঙ্গে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা কী রকম?
সৌরভকে ভালোই লাগল। কাজের প্যাশন আছে। তবে অনেকেরই নতুন অবস্থায় যে প্যাশনটা থাকে, পরে সেটা থাকে না। নতুনদের উচ্চাকাঙ্খা থাকে। তখন তাদের সঙ্গে কাজ করে আমি বেশ আনন্দ পাই।
আপনি নিজে একজন পরিচালক। অন্য পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করতে কখনও সমস্যা হয় না?
কখনওই না। যখন আমি অভিনয় করি, তখন পরিচালক সত্তাটা ভুলে যাই। সেটা না হলে কারওর পরিচালনাতেই কাজ করতে পারব না। তখন তো মনে হবে, আরে আমি পরিচালনা করলেই ভালো হতো। (হাসি)
এরকম পরিস্থিতি কখনও হয়েছে?
হ্যাঁ, তা তো হয়েইছে। সেক্ষেত্রে আমি পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করি। কেউ গুরুত্ব দেন কেউ দেন না। পরিচালক সেটা গ্রহণ করবেন কিনা তাঁর সিদ্ধান্ত।
ছবির কাজে না হলেও নিজের নাটকের দল নিয়ে তো প্রায়ই কলকাতায় আসেন?
হ্যাঁ, প্রায়ই আসা হয়। কলামন্দিরে শো করি। তবে এখনও পর্যন্ত অ্যাকাডেমিতে শো করা হয়নি।
কলকাতার দর্শকদের থেকে কেমন সাড়া পান?
এখন ভালোই সাড়া পাই। আগে পেতাম না। আসলে আগে যেখানে শো করতাম সেখানে দর্শক ভালো পেতাম না। গত দু’তিন বছর ধরে কলামন্দিরে শো শুরু করার পর দেখলাম, কলকাতার মানুষ নাটকের বিষয়ভাবনা নিয়ে যথেষ্ট সচেতন।
সারা বছর নাটকে যত কাজ করেন, ছবিতে তত নয়। এর কী কারণ?
কোনওদিনই খুব বেশি ছবিতে কাজ করিনি। কারণ ভালো চরিত্র পাই না। আমাদের সময় বেকার কাজই বেশি হতো। আর আমি বেকার কাজ করতে চাই না। ‘দৃশ্যম’, ‘পরী’, ‘মুলক’, ‘কাপুর অ্যান্ড সন্স’-এর কাজগুলো ভালো ছিল তাই করেছি।
তাহলে কি বলবেন এখন ভালো ছবি তৈরি হচ্ছে?
কারা বলছে ভালো ছবি হচ্ছে? একদম মিথ্যে কথা। পঞ্চাশ বছর আগে যা তৈরি হতো, এখনও বেশিরভাগ বাজে ছবিই তৈরি হয়। কিছুই বদলায়নি। এখনও তো ‘ওয়ার’, ‘হাউজফুল ফোর’-এর মতো ছবি হিট হয়। কোথায় আর কী বদলেছে?
একটা সময় টেলিভিশনে কাজ করেছেন। এখন সেটাও করেন না। কেন?
ওই একই বিষয়। ভালো কাজ নেই। টেলিভিশনে এখন যেসব কাজ হয় সেগুলো খুবই নিম্নমানের। আমি নিজে না দেখলেও খবর তো পাই।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ বেশি। এটাই কি ভবিষ্যৎ?
সবক্ষেত্রেই ভালো কাজ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ রয়েছে। ইচ্ছাটাই আসল কথা। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মই ভবিষ্যৎ, এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ বেশি— এটা আমি মানি না। এটাও ভবিষ্যৎ হতে পারে। তবে, সিনেমা কোনওদিন বন্ধ হবে না। বহু যুগ আগে যখন টেলিভিশন এসেছিল, তখন এইরকম একটা গেল গেল রব উঠেছিল। কিন্তু সিনেমা রয়ে গিয়েছে। সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখার মজাই আলাদা। সেটা চিরকাল থাকবে। মোবাইলে সেই মজাটা কোথায়? তবে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে একটা নতুন পথ বলা যায়।
নতুন কী কী কাজ করছেন?
‘কড়ক’ বলে একটা ছবি তৈরি করেছি। সেটা মুক্তি পাবে। এখন ‘আর কে’ নামে একটা ক্রাউড ফান্ডেড ছবি তৈরি করছি। এছাড়া কয়েকটা ইন্ডিপেনডেন্ট ছবিতে কাজ করেছি। সেগুলো কবে মুক্তি পাবে, আদৌ প্রেক্ষাগৃহ পাবে কিনা কিছুই জানি না। আর বালাজির সঙ্গে ‘কোড এম’ নামে একটা ওয়েব সিরিজ করছি।
মুম্বইতে ইন্ডিপেনডেন্ট ছবি মুক্তি কতটা সমস্যার?
অনেক সমস্যার। সিনেমা হল পাওয়াটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। এটুকু বলতে পারি, কলকাতার থেকে সমস্যা অনেক বেশি।
ক্রাউড ফান্ডেড বা ইন্ডিপেনডেন্ট ছবি তৈরি কি আগের থেকে কিছুটা হলেও সহজ হয়েছে?
কিছুই বদলায়নি। আমি নিজে একজন ইন্ডিপেনডেন্ট ছবি করিয়ে। বিশ বছর আগে চিত্রটা যেমন ছিল, আজও একইরকম। এখনও আমাকে প্রতিটি ছবি তৈরির জন্য একইরকম স্ট্রাগল করতে হয়। অর্থের জন্য লোকের দরজায় ঘুরতে হয়। ক্রাউড ফান্ডিংয়ে কাজ করতে হয়। ২০১২য় ‘আখোঁ দেখি’ তৈরি করেছিলাম। ছবিটা কত পুরস্কার, প্রশংসা পেল। কিন্তু তারপর পাঁচ বছর আমি কারওর থেকে ছবি তৈরির জন্য একটা টাকাও পাইনি। ‘কড়ক’ আমার ঘরের টাকায় তৈরি।
চলচ্চিত্র উৎসবের সময় কলকাতায় রইলেন। যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন?
শ্যুটিংয়ের চাপে যাওয়া হয়নি। ২০০৪-এ আমার অভিনীত ছবি ‘রঘু রোমিও’ নিয়ে এসেছিলাম। সে বছর উৎসব দারুণ লেগেছিল।
আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব একটা সক্রিয় নন। এর কি বিশেষ কোন কারণ আছে?
সোশ্যাল মিডিয়া একদম ভালো জিনিস নয়। ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতা থেকে আমি এই শিক্ষা নিয়েছি। অযথা জীবনে অশান্তি ডেকে আনে। আমি সেটা চাই না।
ভবিষ্যতে বাংলা ছবিতে অভিনয়ের পরিকল্পনা আছে?
ভালো কাজ হলে নিশ্চয়ই করব।এখনকার কোনও ভালো পরিচালক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তবে এর মধ্যে একজন যোগাযোগ করেছিলেন। বিষয় বা চরিত্র না জানিয়েই আমার কাছে ডেট চাইছিলেন। আমি রাজি হইনি।
‘দৃশ্যম’-এর সিক্যুয়েলের কথা শোনা যাচ্ছিল?
না না, এরকম কিছু হচ্ছে না।