যে কোনও ব্যবসায় শুভ ফল লাভ। বিশেষ কোনও ভুল বোঝাবুঝিতে পারিবারিক ক্ষেত্রে চাপ। অর্থপ্রাপ্তি হবে। ... বিশদ
আমাদের দেহের সমস্ত বিপাকীয় কাজের হেড অফিস হল আমাদের লিভার এবং দেহের সবথেকে বড় অঙ্গ এটি। ওজনে প্রায় দেড় কিলোগ্রামের মত এই গ্ল্যান্ডটি থাকে আমাদের পেটের প্রধানত ডান দিক জুড়ে ডায়াফ্রামের ঠিক নীচে। একজন পূর্ণবয়স্কের দেহের মোট ওজনের ২ শতাংশ হল লিভারের ওজন, শিশুদের বেলায় যা ৫ শতাংশ।
কত রকম যে কাজ করে লিভার, আমাদের এই দেহটাকে সচল রাখার জন্য! খাবার রান্না করা, জমিয়ে রাখা, সময়মতো বিলিয়ে দেওয়া— বিপাকীয় কাজের প্রায় সবটাই করতে হয় লিভারকে। লিভার থেকেই ক্ষরিত হয় সবুজ রঙের জলীয় পদার্থ পিত্তরস, যাতে থেকে বিলিরুবিন এবং বিলিভারডিন কণিকা বা বাইল লবণ। পিত্তনালী হয়ে লিভারের পিত্তথলি বা গলব্লাডার থেকে পিত্তরস অন্ত্রনালিতে এসে পড়ে এবং হজমে সাহায্য করে। বিপদে দেহকে রক্ষা করার জন্য লিভার কত কিছুই যে সঞ্চয় রাখে। গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে পরিবর্তিত করে রাখে, ফ্যাটে দ্রবণীয় ভিটামিন এ এবং ডি, আয়রন ও কপার সল্ট সঞ্চিত থাকে লিভারেই। আপৎকালীন প্রয়োজন মেটাতে লিভার গ্লাইকোজেন, এমনকি প্রোটিন ও ফ্যাটকেও গ্লুকোজে পরিবর্তিত করতে পারে।
ক্ষতিকর নানা পদার্থকে দেহ থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে লিভার। অ্যামোনিয়া এবং অতিরিক্ত প্রোটিন ভেঙে ইউরিয়া হয়ে কিডনি দিয়ে বার হয়ে যায়। পিত্তের মাধ্যমেও অনেক কিছু দেহ থেকে বার হয়ে যায়। আরবিসি বা লাল রক্ত কণা লিভারেই তৈরি হয়, আবার লিভারেই ধ্বংস হয়ে যায়। ফিব্রিনোজেন, প্রোথম্বিন-সহ নানা ধরনের প্লাজমা প্রোটিন লিভারেই তৈরি হয়, যারা রক্তকে জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। আবার রক্তকে তরল রাখতে প্রয়োজনীয় হেপারিন লিভারেই তৈরি হয়। দেহের তাপমাত্রাকে ঠিকঠাক রাখতে লিভার সাহায্য করে। বিপাকীয় নানা কাজের ফলে লিভারে যে তাপ উৎপন্ন হয়, তা সারা দেহেই ছড়িয়ে পড়ে। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাকে ঠিক রাখতে লিভার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ওষুধের কার্যকারিতা বাড়াতে, প্রয়োজনে কমাতেও পারে লিভার। দেহকে রোগ সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে লিভারের কুফার্স কোষ সাহায্য করে।
এবার আসা যাক ব্রণর কথায়। আমাদের ত্বকের তৈল গ্রন্থির নাম সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড। এর থেকে নির্গত তেলের নাম সিবাম। এই সিবাম ত্বকের বিভিন্ন স্তর ভেদ করে ত্বকের উপরের ছোট ছোট ছিদ্রের সাহায্যে বাইরে আসে। কোনও কারণে এই ছিদ্র বন্ধ হয়ে গেলে ত্বকের উপরে ফুসকুড়ির মত দেখা যায়। এরাই হল ব্রণ।
ব্রণের নেপথ্যে অ্যান্ড্রোজেন নামক একটি হরমোনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, যেটি বয়ঃসন্ধিক্ষণে পুরুষের টেস্টিস এবং মহিলাদের ওভারি থেকে বেশি পরিমাণে ক্ষরিত হয়, যে জন্য কিশোর-কিশোরীদের ব্রণ বেশি হয়। এছাড়া বংশগত প্রভাব, মানসিক দুশ্চিন্তা, প্রসাধন সামগ্রীর বিরূপ প্রতিক্রিয়া-সহ নানা ফ্যাক্টরও থাকে ব্রণের পিছনে। কিন্তু লিভারের এ ব্যাপারে কোনও ভূমিকা নেই। তেল ঝাল টক খেলে ব্রণ বাড়েও না, কমেও না। চকলেট, আইসক্রিম, মিষ্টির সঙ্গে ব্রণর কোনও সম্পর্ক নেই। কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্যও ব্রণ হয় না। কাজেই কারণে-অকারণে দেহের জন্য এত প্রয়োজনীয় একটি গ্ল্যান্ড লিভারকে ভিলেন বানানোর কোনও অর্থ হয় না।