যে কোনও ব্যবসায় শুভ ফল লাভ। বিশেষ কোনও ভুল বোঝাবুঝিতে পারিবারিক ক্ষেত্রে চাপ। অর্থপ্রাপ্তি হবে। ... বিশদ
আমাদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ও হল সেইরকমই এক মন্ত্রশক্তি। সম্ভবত এই শক্তির বলেই লাঠি খেলায় ঈশ্বরকে কেউ হারাতে পারত না।
বলছিলেন ডাঃ মণ্ডল। গল্পের শেষে লেখকের ব্যাখ্যার দিকেও নজর দিন—‘সাহিত্যের খেলাতে, পলিটিক্সের খেলাতে তিনিই দিগ্বিজয়ী হন যাঁর শরীরে এই দৈবশক্তি ভর করে। এ শক্তি যে কি, যাদের শরীরে তা নেই, তাঁরা জানেন না। আর যাঁদের শরীরে আছে, তাঁরাও জানেন না।’
মানে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কি জাগ্রত করা যায়? প্রবীণ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বললেন, ভারতীয় সংস্কৃতিতে আধ্যাত্মিকতার প্রভাব যথেষ্ট। ভারতীয় মাত্র সকলেই ধারণা পোষণ করেন, ঋষি-মুনিদের ষষ্ঠেন্দ্রিয় জাগ্রত ছিল। তবে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে বলা যায়, এই মন্ত্রশক্তি বা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় হল গভীরভাবে জানার আগ্রহ থেকে তৈরি হওয়া এক জ্ঞান। অর্থাৎ যাঁরা যে পেশার সঙ্গে জড়িত, সেই কর্মে পূর্ণ মনোনিবেশ করলে, ওই কাজ সংক্রান্ত বিষয়গুলিতে তাঁর অন্তর্দৃষ্টি জাগ্রত হয়।
এই অন্তর্দৃষ্টি কোনও ম্যাজিক নয়। আয়ত্তের বিষয়। অর্থাৎ কোনও ব্যক্তি যদি একটি বিষয় নিয়ে দীর্ঘ অনুশীলন শুরু করেন, তাহলে ওই বিষয়ে তাঁর ইনটিউশন কাজে আসতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে নিরন্তর অধ্যবসায়ের কারণে বহু চিকিৎসকের মধ্যে এমন অন্তর্দৃষ্টি তৈরি হওয়ার উদাহরণ মেলে। সেই কারণেই কোনও রোগী সুশিক্ষিত, অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গেলে, দু’চার কথার পরেই চিকিৎসকের মনে অনুভূতি কাজ করে যে রোগীর অমুক ধরনের বিশেষ অসুখটি হয়েছে! এরপর চিকিৎসক নিজের আহরিত জ্ঞানের সঙ্গে রোগীর সমস্যাগুলি মিলিয়ে ওষুধ দেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগী সেরে ওঠেন। অর্থাৎ ব্রেন বিশেষভাবে তৈরি হয়ে যায়। তবে হ্যাঁ প্রকৃতিগতভাবে মহিলাদের মধ্যে এই অনুভূতি বা অন্তর্দৃষ্টিগত ক্ষমতা বেশি থাকে। না হলে স্বামীর অধোগতির সন্দেহ তাঁরা অনেক আগেই করতে পারেন কী করে! আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের সন্দেহ সঠিক প্রমাণিত হয়ই বা কীভাবে?
সত্যিই কি মহিলাদের অন্তর্দৃষ্টি পুরুষদের থেকে বেশি শক্তিশালী হয়? পাভলভ হাসপাতালের সাইকিয়াট্রিস্ট ডাঃ শর্মিলা সরকার জানালেন, ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের ব্রেনের স্নায়ুর সজ্জা খানিক আলাদা এবং জটিল। ফলে তাঁদের অন্তর্দৃষ্টি বেশি শক্তিশালী হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। নারীর একসঙ্গে একাধিক কাজ করার ক্ষমতা থাকে। মহিলাদের আবেগ দিয়ে ভাবনার ক্ষমতাও অনেক বেশি। এমনকী পূর্ব অভিজ্ঞতার খুঁটিনাটি বিষয় মস্তিষ্কে ধারণ করার ক্ষমতা বেশি থাকার কারণে তাঁরা বর্তমান সময়ে কোনও ঘটনা ঘটতে যাওয়ার অনেক আগে থেকেই অনুধাবন করতে পারেন। আসলে আদিম কাল থেকেই সন্তানকে গার্হস্থ্য এবং বহিরাগত নানা আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য মেয়েদের অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হতো। ফলে বিবর্তনের হাত ধরেই নারীর মস্তিষ্কের স্নায়ুর সজ্জাও যে কোনও ধরনের সূক্ষ্ম পরিবর্তন ধরার জন্যই সজাগ হয়ে থাকে। সেই কারণেই মেয়েদের ইনটিউশন পাওয়ার বেশি হয়।
এখন যে প্রশ্নটি না করলেই নয়, তা হল এই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের অবস্থান আমাদের শরীরের ঠিক কোন অংশে? বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সস-এর নিউরোমেডিসিনের অধ্যাপক ডাঃ বিমানকান্তি রায় জানালেন, আমাদের দেহের পাঁচটি ইন্দ্রিয় মারফত পাঠানো তথ্য গ্রহণের জন্য ব্রেনে রিসেপটর আছে। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের জন্য এমন কোনও নির্দিষ্ট রিসেপটর আছে কি না তা এখনই বলা যাচ্ছে না। সুতরাং ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়কে একটা ধারণা হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে। বরং কৌতূহল হওয়া জরুরি, যে ইনটিউশন একজনের ক্ষেত্রে কাজ করে, অন্য ব্যক্তির ক্ষেত্রে কাজ করে না কেন?
কারণ, পার্থক্য গড়ে দেয় একজন ব্যক্তির বিশ্লেষণ ক্ষমতা। সম্ভবত এই কারণেই জটায়ু আর ফেলুদা দুজনের কাছেই একই ধরনের তথ্য থাকা সত্ত্বেও ফেলুদা অনেক আগেই রহস্যের সমাধান করে ফেলতেন। তাই না!’
লিখেছেন সুপ্রিয় নায়েক