যে কোনও ব্যবসায় শুভ ফল লাভ। বিশেষ কোনও ভুল বোঝাবুঝিতে পারিবারিক ক্ষেত্রে চাপ। অর্থপ্রাপ্তি হবে। ... বিশদ
ঘটনা-১: পূর্বাশা এবং সুপর্ণ দীর্ঘদিনের বন্ধু। সেই কলেজজীবনের শুরু থেকেই বন্ধুত্বের সূত্রপাত। পরে সেই ঘনিষ্ঠতা বাড়তে বাড়তে একে অপরের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে ওঠে তারা। আচমকা ছন্দপতন। একদিন বাড়ি ফেরার পথে সুপর্ণকে তাঁদের এক সহপাঠীর সঙ্গে রাস্তায় হেসে হেসে গল্প করতে দেখে কী যে হল পূর্বাশার। আগুন জ্বলে উঠল মাথায়। রাগের চোটে সুপর্ণকে ‘ব্রেক আপ’মেসেজ করে বসল সে। তারপর সুপর্ণ বহুবার ফোন করলেও তোলেনি পূর্বাশা। সম্পর্কে ইতি পড়ে গিয়েছিল সেদিনই। পরে পূর্বাশা জানতে পারে, তার ভাবনার সঙ্গে আদৌ সেই ঘটনার কোনও মিলই ছিল না। এখন সেকথা ভাবলেই কান্না পায় তার।
ঘটনা-২: মাধ্যমিক পাশ করার পর আর পড়াশোনা এগয়নি রজতের। টানাটানির সংসারে পাঁচতারা মলে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ নিয়েছিল। ভগবান মুখ তুলে চেয়েছেন ভেবে খুশি হয়েছিলেন মা। তাঁকে নাইট ডিউটি দেওয়া শুরু হয়। ঘুমকাতুরে রজতের যা ছিল না-পসন্দ। নতুন চাকরি ভেবে প্রথম প্রথম অতটা আমল দেয়নি। কিন্তু টানা ২ মাস নাইট ডিউটি করার পর একদিন ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল। রাগের মাথায় সিকিউরিটি অফিসারের ঘরে ঢুকে যা নয় তাই বলে বসল। ফলে বরখাস্তের চিঠি জুটল।
উপরের দু’টি উদাহরণ থেকেই স্পষ্ট, রাগ বড় বিষম বস্তু!
রাগ কেন হয়?
জানতে গেলে ডুব দিতে সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মনোবিজ্ঞান রহস্যের অতলে। আমাদের ষড়রিপুর দ্বিতীয় রিপু হল এই ক্রোধ বা রাগ। ফ্রয়েডের ভাষায়, কোনও মানুষের মধ্যে যখন রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে, তখন বুঝতে হবে তিনি ভিতরে ভিতরে চূড়ান্ত হতাশা বা অবসাদে ভুগছেন। এই হতাশা বা অবসাদ যে তাৎক্ষণিকভাবে সৃষ্টি হয়, এমন নয়। দীর্ঘদিন ধরে এই পরিস্থিতি চলতে চলতে একসময় বিশেষ কোন ঘটনা বা কারণে মানুষের সেই ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আমরা যখন কাঙ্খিত বস্তুটি পাই না, তখনই এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। কখনও তা প্রেম, কখনও তা অর্থ, কখনও বেকারত্ব—এরকম নানা বিষয়ে জীবনে অবসাদ আসতে পারে।
নেশাও বাড়ায় রাগ
প্রচণ্ড রাগ বা ক্রোধ শুধু মন নয়, মানবদেহেও বেশকিছু পরিবর্তন ঘটায়। রাগের শুরু থেকেই আমাদের মধ্যে একটা হার না মানার মানসিকতা যুক্ত হয়। ধীরে ধীরে চরমে পৌঁছায় এই রাগ। স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়াতেও এবিষয়টি কাজ করে। আর হার মানতে না পারার চূড়ান্ত ফলশ্রুতি বিবাহবিচ্ছেদের মতো ঘটনা। এছাড়া আজকালকার জীবনযাত্রা, নেশাগ্রস্ততাও রাগের অন্যতম কারণ। মূলত মদ-গাঁজার মতো নেশা রাগকে খুব দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। ভাঙচুর-মারপিটের মতো ঘটনাও ঘটে। নিয়মিত মদ-গাঁজা সেবনে সঙ্গীর উপর সন্দেহপ্রবণতা বাড়তে থাকে। বিশ্বাসভঙ্গের মতো ঘটনা ঘটে। মনোবিজ্ঞানে একেই ‘মরবিড জেলাসি’ বলা হয়।
পুরুষ না মহিলা, কারা বেশি রেগে যান?
পুরুষদের তুলনায় মহিলারা দ্রুত রেগে যান। দেহে ইস্ট্রোজেন-প্রোজেস্টেরন হরমোনের অনুপাতের হেরফেরে এই ঘটনা ঘটে। ইস্ট্রোজেনের আধিক্যে মহিলারা যেমন হাসিখুশি থাকেন, ঠিক তেমনই দেহে প্রোজেস্টেরন বাড়তে শুরু করলে হাসিখুশি মানুষটি রাগে ফেটে পড়েন। মূলত ঋতুস্রাবের আগে এধরনের ঘটনা বেশি দেখা যায়। এবিষয়ে কিন্তু শিশুরাও পিছিয়ে নেই। বিভিন্ন ভিডিও গেম, কার্টুনে দেখানো হিংস্রতাও শিশুমনে প্রভাব ফেলছে।
রাগ কমানোর সহজ উপায়
‘এবিসি মডেল’-এ রাগ কমানো যেতে পারে। প্রথমেই বুঝতে হবে, রাগের মূল কারণ কী ছিল। এর পাশাপাশি ব্যবহারে পরিবর্তন এবং সম্ভাব্য পরিণতির কথাও মাথাও রাখতে হবে। রাগের ফলে যাতে কোনওভাবেই কোনও অনিষ্ট না ঘটে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। এই রাগ কমানোর কিছু পদ্ধতি রয়েছে।
১. ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ—প্রথমেই ‘ডিপ ব্রিদিং এক্সসারসাইজ’ করতে হবে। রাগের পূর্ব মুহূর্তেই লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করে ধীরে ধীরে ছাড়তে হবে। এছাড়া রয়েছে ‘ট্র্যাফিক কন্ট্রোল মেথড’।
২. থ্রি ডি মেথড—‘থ্রি-ডি মেথড’ও বেশ কার্যকরী। এই ‘থ্রি-ডি’ হল ডিপ ব্রিদিং-ডিলে-ডিঙ্ক। অর্থাৎ, যখন রাগে ফেটে পড়তে ইচ্ছে হবে, তখন মুখে কুলুপ আঁটতে হবে। রাগের মাথায় চটজলদি কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩. বেশি করে জল খান—রাগ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বেশি করে জল খেলে কাজ দিতে পারে।
৪. ব্যাক কাউন্টিং মেথড—মাথা গরম হলে ধীরে ধীরে ১০০ থেকে উল্টোদিকে গোনা শুরু করতে হবে।
লিখেছেন যুবনাশ্ব ভট্টাচার্য