মেয়াদি সঞ্চয় থেকে অর্থাগম যোগ আছে। সন্তানের আবদার মেটাতে অর্থ ব্যয়। ধর্মকর্মে মন আকৃষ্ট হবে। ... বিশদ
ঘাম আমাদের শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা শরীর থেকে অতিরিক্ত তাপ বের করে দিতে সাহায্য করে। এইভাবেই শরীর ঠান্ডা থাকে বা শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় থাকে। আমাদের ত্বকে থাকে ঘর্মগ্রন্থি, যা থেকে ঘাম বেরয়। ঋতু বিশেষে ঘাম বেশি বা কম বেরতে পারে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গ্রীষ্মকালে বেশি আবার শীতে কম ঘাম বের হয়। বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা বাড়লে বেশি ঘাম হয়। আবার পরীক্ষার সময় বা অন্য কোনও টেনশনে হাত এবং পায়ের তালু এবং কপাল ঘামতে শুরু করে। এক্ষেত্রে সাধারণত পুরো শরীর ঘামে না। আবার খুব তাড়াতাড়ি খাওয়ার সময় অনেকের কপাল এবং মুখমণ্ডল ঘামতে শুরু করে। এই ধরনের ঘটনা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
অতিরিক্ত বা অস্বাভাবিক ঘামের সমস্যা হচ্ছে কি না, তা বোঝার সহজ উপায় হল যখন আশপাশের লোক ঘামছেন না, অথচ আপনি ঘামছেন! এর অর্থ আপনার নার্ভ বা স্নায়ুতন্ত্র বিশেষ কোনও কারণে উত্তেজিত হয়েছে। দুই-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত ঘাম রোগের পূর্বাভাস দেয়।
কী কী কারণে অতিরিক্ত ঘাম?
১. ব্লাড প্রেশার বেড়ে গেলে হতে পারে অস্বাভাবিক ঘাম। ২. ব্লাড সুগার কমলেও ঘাম হতে পারে। ৩. রক্তে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বাড়লে। ৪. জ্বর বা জীবাণু সংক্রমণ হলে। ৫. মেনোপজ হলে ৬. মদ্যপানে ৭. হার্ট ফেলিওর হলে ৮. ক্যান্সার থাকলে ৯. স্ট্রোক হলে ১০. পারকিনসনসে ভুগলে
কীভাবে রোগ নির্ণয়?
ক. মাত্রাতিরিক্ত ঘামের সঙ্গে আনুষঙ্গিক কোনও উপসর্গ আছে কি না তা দেখা হয়। যেমন— জীবাণুর সংক্রমণ থাকলে জ্বর হয়। এক্ষেত্রে প্রতি ৪ ঘণ্টা অন্তর থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা দেখতে হবে। লিউকেমিয়া এবং লিম্ফোমাতে অনেকসময় ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নীচে জ্বর আসে। তাই থার্মোমিটার না দিলে রোগী জানতেও পারেন না তার জ্বর আছে কি না। একই কথা যক্ষ্মার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ম্যালেরিয়াতে কিন্তু বেশি জ্বর হবে এবং কাঁপুনি হবে। মহিলাদের মেনোপজের পর কান দিয়ে গরম হাওয়া বেরনোর মতো অনুভূতি হতে পারে। এক্ষেত্রে মুখমণ্ডল গরম হয়ে যায় এবং ঘাম বের হয়। একে হট ফ্ল্যাশ বলে।
খ. ব্লাড প্রেশার চেক করতে হবে। বাড়িতে সকাল, বিকেল এবং রাতে প্রেশার চেক করে দেখা দরকার যে ওই ব্যক্তি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন কি না।
গ. ব্লাড সুগার পরীক্ষাও করে দেখা দরকার। সাধারণত ডায়াবেটিসের ওষুধ খেলে বা ইনসুলিন নিলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৭০-এর নীচে নেমে গেলে অস্বাভাবিক ঘাম হতে পারে। অনেকসময় ডায়াবেটিস রোগীর জামাকাপড় রাতে ভিজে যায় এবং রোগী দুঃস্বপ্ন দেখেন। এমন পরিস্থিতি ব্লাড সুগার কমে যাওয়ার উপসর্গ।
ঘ. খিদে বেড়ে গিয়েছে অথচ ওজন কমছে কি না তাও ভালো করে খেয়াল করে দেখা প্রয়োজন। এমন উপসর্গ কিন্তু থাইরোটক্সিকোসিস বা থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত ক্ষরণের ফলে হতে পারে। আর খিদে এবং ওজন দুটোই কমতে থাকলে শরীরে ক্যান্সার বাসা বাঁধছে কি না, ভালো করে খুঁজে দেখা প্রয়োজন।
ঙ. রোগীকে ভালো করে পরীক্ষা করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কারণ খুঁজে পাওয়া যায়।
চ. পরীক্ষানিরীক্ষার মধ্যে রয়েছে কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি), সিআরপি, লিভার ফাংশন টেস্ট, ম্যালেরিয়ার প্যারাসাইট, অ্যান্টিজেন কালচার এবং সেনসিটিভিটি টেস্ট। একইভাবে মূত্রের রুটিন ও কালচার করতে হবে। বুকের এক্স রে, পেটের আলট্রাসোনোগ্রাফি এবং দরকার পড়লে পেট ও বুকের সিটি স্ক্যান করাতে হতে পারে। ইসিজি এবং ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাফি করলে বোঝা যাবে হার্ট ফেলিওর হচ্ছে কি না। রক্তের টিএসএইচ, এফটি৪-এর মাত্রা দেখে বোঝা যাবে যে থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত ক্ষরণ হচ্ছে কি না।
পরীক্ষানিরীক্ষায় কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না অথচ চিকিৎসকের সন্দেহ দূর হচ্ছে না এমন ক্ষেত্রে রোগীর অজানা জ্বর বা ক্যান্সার আছে কি না জানতে পেট সিটি স্ক্যান করানোরও দরকার হতে পারে। তাহলেই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হবে।