মেয়াদি সঞ্চয় থেকে অর্থাগম যোগ আছে। সন্তানের আবদার মেটাতে অর্থ ব্যয়। ধর্মকর্মে মন আকৃষ্ট হবে। ... বিশদ
ঘুমের সঙ্গে আপস করে কাজ। সপ্তাহে কয়েক দিন রাত জাগতে বাধ্য। কেউ আবার টানা এক সপ্তাহ দিনেরবেলা কাজ সারেন, পরের সপ্তাহেই কাজের সময় বদলে হয়ে যায় ‘নাইট ডিউটি’। গোটা রাজ্যে এমন পেশার অভাব নেই যেখানে কাজের জন্য ছাড়তে হয় রাতের ঘুম। বরাদ্দ ঘুমে টান পড়ে প্রায়শই। ভাবেন হয়তো, অন্য সময় ঘুমিয়ে ‘ম্যানেজ’ করে নেব। কিন্তু তা কি আদৌ সম্ভব?
প্রতিটি মানুষের শরীরে একটি নির্দিষ্ট ‘বায়োরিদম’ আছে। জীববিদ্যার এই রিদম মেনেই আমাদের অভ্যন্তরীণ শারীরিক ক্রিয়াকলাপ চলতে থাকে। দিনের আলোয় কাজ করব ও আলো নিভে এলে অর্থাৎ রাত গড়ালে বিশ্রাম করতে হবে— এই চক্রকে বলে সার্কাডিয়ান রিদম। পশু-পাখি সকলের শরীরেই এই সার্কাডিয়ান রিদম আছে। পাখিরাও ভোরবেলা বাসা ছাড়ে, সন্ধেয় কাজ সেরে বাসায় ফেরে। অতএব, এই সার্কাডিয়ান রিদম প্রাকৃতিক। যা প্রকৃতি নির্দিষ্ট, তা ব্যাহত হওয়া আমাদের শরীর ও মনের জন্য একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয়। আজ সেই কুফল হাতেনাতে না পেলেও, মন ও শরীর একসময় বিদ্রোহ করবেই। যাঁরা একটানা নাইট করেন, তাঁদের সার্কাডিয়ান রিদম পাল্টে যায়। তাঁদের সকালে ঘুম ও রাতে কাজে অভ্যস্ত হয়ে যায় শরীর। সেখানে ক্ষতিও সেভাবে হয় না। কিন্তু নাইট ও ডে মিলিয়ে মিশিয়ে কাজ হলেই কিন্তু বিপদ!
কী কী বিপদ
• সকলের আগে সমস্যায় পড়ে হজমশক্তি। রাতে জেগে থাকার জন্য অনেকেই ব্ল্যাক কফি, চিপস, চকোলেট এসব মুখরোচক স্ন্যাক্স খান। এতে ঘুম কাটিয়ে কাজে লেগে থাকা যায়। নৈশাহার তো আগেই সারা হয়েছে। এদিকে জেগে থাকার কারণে শরীর কোনওরূপ বিশ্রাম পায়নি। ফলে রাতের খাবারটুকু হজম করতেও তাঁকে নাজেহাল হতে হয়েছে। তাই হজমের গোলমাল হবেই। ফলে কোষ্ঠবদ্ধতা, আইবিএস নানাবিধ অসুখ হানা দেয়।
• শিফটিং ডিউটিতে শরীর তার বায়োলজিক্যাল ক্লককে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। যখনই সে রাতের কাজের সঙ্গে মানিয়ে নিতে চাইছে, তখনই রুটিন বদলে দিনের কাজে ফেরত যাচ্ছেন আপনি। আবার শরীরঘড়ি যখন আপনার দিনের কর্মসূচি মেনে নিয়ে তার রুটিন সাজাতে শুরু করল, তখনই আবার আপনি রাতের ডিউটিতে যোগ দিলেন। এতে শরীর তার অভ্যন্তরীণ কাজগুলো গুছিয়ে করে উঠতে পারে না। ফলে বাড়ে রক্তচাপ, সুগার, ওবেসিটি, অনিদ্রা। শরীর ভেঙে যায়। শিফটিং ডিউটির ফলে ধৈর্য কমে যাওয়া, বিরক্তি বেড়ে যাওয়া, ডিপ্রেশনের শিকার হওয়াও আকছার ঘটছে।
তাহলে কী করব?
প্রথমেই একটা কথা স্পষ্ট করে দেওয়া ভালো। রাতের ঘুমের বিকল্প কিছু হয় না। তাই কাজের ধরন অন্যরকম হলে শরীরের ক্ষতি সম্পূর্ণভাবে রুখে দেওয়া অসম্ভব। এদিকে চাকরি ছাড়তে পারব না কেউই। সংস্থা আমার শরীর ও ঘুম নিয়ে মাথা ঘামাতে বাধ্য নয়। বেশিরভাগ জায়গায় দেখা যায়, ‘নাইট করতে পারছে না’— বিরাট দোষের পর্যায়ে পড়ে। বহু কর্মীর চাকরিও যায়। তা তিনি যতই দক্ষ হোক না কেন! সুতরাং শিফটিং ডিউটিতে কিছু নিয়ম মেনে চলুন।
• দিনের যে কোনও সময় একটানা অন্তত সাত ঘণ্টা ঘুমোতেই হবে। অনেকেই সাংসারিক কাজের ফাঁকে ঘণ্টা দুই-তিন ঘুমিয়ে নেন। তাতে ক্লান্তি হয়তো কমে। বাকি কোনও ক্ষতিপূরণ হয় না। বরং ক্ষতির পাল্লা ভারী হয়।
• নিয়মিত কাজে যাওয়ার আগে, বিকেলের দিকে মিনিট ১৫-২০ যোগাভ্যাস করুন। শরীরের ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে যাবে।
• ‘মি টাইম’ খুব জরুরি। সেই সময়টা প্রিয় গল্পের বই পড়ুন, গান শুনুন, খেলাধুলো করুন। চুপ করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকুন। কেউ মেডিটেশনও করতে পারেন। সময়ে না ঘুমাতে পারার খানিকটা ক্ষতি এতে পূরণ হবে। এরপরেও বলব, রাতে ঘুম আর দিনে কাজের নিয়মের কোনও বিকল্প হয় না।