শরীর-স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রে উন্নতির সম্ভাবনা। গুপ্তশত্রুতার মোকাবিলায় সতর্কতা প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষায় বিলম্বিত সাফল্য।প্রতিকার: ... বিশদ
স্মিলোডন
এদের একবার দেখলে তুমি ভয় পেতে বাধ্য। প্রথম দেখায় বাঘের মতো লাগতে পারে। তবে তফাত পাবে মুখে। এই প্রাণীর উপরের চোয়ালে বেশ লম্বা দু’টি দাঁত ছিল। এই শক্তিশালী প্রাণীকে সাবের টুথেড ক্যাট বা সাবের টুথেড টাইগার বলেও ডাকা হয়। উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকা ছিল স্মিলোডনের বাস। জানা যায়, সবথেকে বৃহত্তম প্রজাতির স্মিলোডন দৈর্ঘ্যে ৩ মিটার, লম্বায় প্রায় ১.৪ মিটার এবং ওজন হতো প্রায় ৪০০ কিলো। এদের শক্তপোক্ত শরীর বড় বড় জীবজন্তুদের শিকার করতে সাহায্য করত। বাইসন, হরিণ, ছোট ছোট ম্যামথ শিকার করে এরা নিজেদের পেট ভরত। এই প্রাণী ১২০ ডিগ্রি পর্যন্ত হাঁ করতে পারত। তবে দুঃখের বিষয় হল, এত শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও এরা আজ থেকে প্রায় ১০ হাজার বছর আগেই পৃথিবীর বুক থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। বিজ্ঞানীদের একাংশ বলেন, অপর্যাপ্ত শিকারের জন্যই এরা পৃথিবী থেকে মুছে গিয়েছে।
আইরিশ ইলক
তোমাদের মধ্যে অনেকেই নিশ্চয়ই হরিণ দেখেছ। আইরিশ ইলককে দেখতেও ছিল আজকের হরিণের মতো। তবে এই হরিণ ছিল অনেক বড় মাপের। তাই এদের ‘জায়ান্ট ডিয়ার’ নামেও ডাকা হয়। এরা প্রায় ৭ ফুট লম্বা হতো। ওজন হতো প্রায় ৭০০ কেজির কাছাকাছি। যে কোনও হরিণের থেকে এদের শিং-এর আকার ছিল বড়। শিং প্রস্থে প্রায় ১২ ফিট পর্যন্ত হতে পারত। মূলত ইউরোপের উত্তর দিকে ছিল এই প্রাণীর বাস। প্রায় ৫ হাজার বছর আগে এই প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটে। বলা হয়, মানুষের হাতে শিকার হতে হতেই আইরিশ ইলক অবলুপ্তির পথে চলে যায়।
উলি ম্যামোথ
অবিকল হাতি! তবে হাতির শরীরে যেমন চামড়া দেখ, তার বদলে এদের শরীর ছিল উলের মতো পশম দিয়ে ঢাকা। পশমের রং হতো কালো, বাদামি, ধূসর ইত্যাদি। আজকের আফ্রিকার হাতির মতোই এই দীর্ঘকায় প্রাণীর উচ্চতা হতো প্রায় ১১ ফুট এবং ওজন প্রায় ৬ টনের কাছাকাছি। এদের লেজ ছিল ছোট। তবে শারীরিক বৈশিষ্ট্যে আফ্রিকার হাতির সঙ্গে মিল থাকলেও উলি ম্যামোথ আদতে এশিয়ার হাতির নিকট আত্মীয়। বিজ্ঞানীরা বলেন, বেশিরভাগ উলি ম্যামোথ ১০ হাজার বছর আগে পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যায়। তবে কিছু সংখ্যক উলি ম্যামোথ অবশ্য ৪ হাজার বছর আগেও বেঁচে ছিল। একদল বিশেষজ্ঞের মতে, মানুষের হাতে শিকার হওয়াই এই প্রাণীর নিশ্চিহ্ন হওয়ার অন্যতম কারণ। পাশাপাশি আবহাওয়ার পরিবর্তনও উলি ম্যামোথ বিলুপ্তিতে অনুঘটকের কাজ করেছে বলেও মত রয়েছে।
মোয়া
একটা বড় আকারের পাখি। লম্বা গলা। অদ্ভুত আওয়াজ করতে করতে এগিয়ে আসছে তোমাদের ক্রিকেট মাঠের দিকে। আর তোমরা ভয় পেয়ে ব্যাট, বল, উইকেট মাঠে ফেলে একছুটে বাড়ি। এমনই একটি পাখি হল মোয়া। তবে ভয়ের কিছু নেই, আজকের জগতে এই প্রাণীর দেখা তুমি পাবে না। এই বৃহৎ আকারের পাখির বাস ছিল নিউজিল্যান্ডে। এদের উচ্চতা প্রায় ৪ ফুট হতে পারত। ওজন হতো ২৩০ কিলোর কাছাকাছি। তাহলে বুঝতেই পারছ ঠিক কতটা বড় ছিল এই পাখি। তবে মানুষের হাত থেকে মুক্তি পায়নি এই বিশাল আকারের পাখিও। অকাতরে মানুষের হাতে বলি হতে হতে একদিন পৃথিবীর কোল থেকে চিরদিনের জন্য মুছে গিয়েছে মোয়া।
গ্রেট অক
তোমরা পেঙ্গুইন দেখেছ নিশ্চয়ই। গ্রেট অক নামের পাখিটিকে দেখতেও ছিল অবিকল পেঙ্গুইনের মতো। এরা উড়তে পারত না। অসম্ভব ভালো সাঁতারু ছিল এই পাখি। উত্তাল সমুদ্রেও এরা অনায়াসে সাঁতার কেটে বেড়াত। জলে সাঁতরে বেড়ালেও, ডাঙাতেই ছিল এদের বাস। এরা একসঙ্গে অনেকে মিলে বাস করত। মূলত উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরীয় অঞ্চলে এদের দেখা পাওয়া যেত। এই পাখির উচ্চতা ছিল প্রায় ৩ ফুট। শোনা যায়, গ্রেট অকের পালক দিয়ে খুব ভালো বালিশ বানানো যেত। তাই ষোড়শ শতকে ইউরোপের মানুষজন অসংখ্য গ্রেট অকের শিকার করতে থাকে। অন্যদিকে উত্তর আমেরিকা অঞ্চলে মাছের টোপ হিসেবে ব্যবহারের জন্য এই পাখির শিকার করা হতো। যেহেতু এই পাখি উড়তে পারত না, ফলে এদের শিকার করাও ছিল বেশ সহজ। এসব কারণেই ১৮৫২ সালে এই পাখি বিলুপ্ত হয়ে যায়।
কুয়াগা
এই প্রাণীর অর্ধেক শরীর জেবরার মতো কালোসাদা দাগে ঢাকা। বাকি অর্ধেক শরীরে কোনও দাগ নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এই প্রাণীর দেখা মিলত।
বরাবরই এই প্রাণীর মাংস এবং চামড়া মানুষের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্র ছিল। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। খুব বেশি সংখ্যায় শিকার হতে হতে সবার অলক্ষ্যেই উনিশ শতকে এই প্রাণী বিলুপ্তির পথে চলে যায়।
জাপানের হংশু নেকড়ে
সবথেকে ছোট প্রজাতির নেকড়ে ছিল জাপানের দ্য হংশু উলফ। উচ্চতায় ৩ ফিট এবং কাঁধের মাপ ছিল মাত্র ১২ ইঞ্চি। জাপানের শিকোকু, কৌশু এবং হংশু অঞ্চলে এই প্রাণীর দেখা মিলত। বিজ্ঞানীরা বলেন, ১৭৩২ সালে হংশু উলফের মধ্যে র্যাবিস অসুখটি ছড়িয়ে পড়ে। র্যাবিসে আক্রান্ত হয়ে অনেক সংখ্যায় হংশু উলফ প্রাণ হারায়। এছাড়া এই ঘটনার পর থেকেই মানুষের উপর এই প্রাণী বেশি পরিমাণে আক্রমণ হানতে থাকে। ফলে মানুষও আত্মরক্ষার দোহাই দিয়ে অবশিষ্ট হংশু উলফের শিকার করতে শুরু করে দেয়। শিকারের কারণে অন্যান্য অনেক প্রাণীর মতো হংশু উলফও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
তাসমানিয়ান টাইগার
এই প্রাণীর ছবির দিকে তাকালে আর যাই হোক বাঘ বলে মনে হবে না। এক ঝলক দেখলে নেকড়ের সঙ্গে মিল পেতে পারো। এরা লম্বায় প্রায় ২ মিটারের মতো ছিল। তাসমানিয়ান টাইগারের স্বভাব ছিল হিংস্র। শিকারে পটু এই প্রাণী ১২০ ডিগ্রি পর্যন্ত হাঁ করতে পারত। ক্যাঙারু, পাখি এবং ছোট ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী শিকার করেই এরা নিজেদের পেট ভরত। তাসমানিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউ গুয়েনিয়াতে দেখা পাওয়া যেত এই প্রাণীর। বিজ্ঞানীরা বলেন, খাওয়ারের অভাব, থাকার জায়গার অভাব, মানুষের হাতে শিকার হওয়ার মতো কারণে গত শতাব্দীর ২০-র দশকে তাসমানিয়ান টাইগার বিলুপ্ত হয়ে যায়।
ওয়েস্টার্ন ব্ল্যাক রাইনোসেরস
কেনিয়া, রোয়ান্ডা, জাম্বিয়ার মতো আফ্রিকার দেশগুলিতে এই বিশালাকায় গন্ডারের দেখা মিলত। ওয়েস্টার্ন ব্ল্যাক রাইনোসেরসের উচ্চতা ১.৪ থেকে ১.৮ মিটারের মধ্যে থাকত। এদের ওজন হতো ৮০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ কিলোর মধ্যে। এই প্রাণীর মাথায় দু’টি শিং থাকত। শক্তপোক্ত শরীরের এই গন্ডার ঘণ্টায় প্রায় ৫৫ কিমি গতিতে দৌড়াতে পারত। বিভিন্ন কারণে এই গন্ডার মানুষের শিকারের কারণ হয়ে ওঠে। ২০১১ সালে সরকারিভাবে এই গন্ডারকে অবলুপ্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সায়ন নস্কর ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে