শরীর-স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রে উন্নতির সম্ভাবনা। গুপ্তশত্রুতার মোকাবিলায় সতর্কতা প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষায় বিলম্বিত সাফল্য।প্রতিকার: ... বিশদ
রেনি ডে— স্কুলে গিয়েও পড়াশুনো না করার মতো অভিনব ‘অধিকার’, সর্বকালের সর্বদেশের স্কুলপড়ুয়াদের আজীবন বোধহয় দিয়ে এসেছে একমাত্র এই ‘রেনি ডে’ই! তাই ‘রেনি ডে’র একটা আলাদা মর্যাদা এবং ভূমিকা আছে আমাদের প্রত্যেকেরই জীবনে। ‘রেনি ডে’ হলে পড়াশুনোয় ফাঁকি। ‘রেনি ডে’ হলে জল ভাঙার দাবি। ‘রেনি ডে’ হলে জমা জলে কাগজের নৌকা ভাসিয়ে শুধু কল্পনার ঢেউ গোনা! আজকের স্কুল ছাত্রদের কাছে ‘রেনি ডে’ কেমন, কীভাবে তারা যাপন করে এই ‘বৃষ্টির দিন’টাকে, তা জানতে হাজির হয়েছিলাম হিন্দু স্কুলে। বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্ররা মন খুলে তাদের মতো করে জানাল তাদের ‘রেনি ডে’র কথা।
ইচ্ছে করে এক ছুটে চলে যাই বৃষ্টিতে ভিজতে!
বৃষ্টি আমার খুব ভালো লাগে। বৃষ্টি পড়ার আগে যখন খুব গরম হয়, তখন খুব অস্বস্তি হয়। তারপর যখন বৃষ্টি নামে, তখন সব অস্বস্তি চলে যায়। বৃষ্টি এই স্বস্তিটা এনে দেয় বলেই আমার খুব ভালো লাগে বৃষ্টিকে। বাড়িতে থাকলে যদি একটা ‘রেনি ডে’ পাই— সারাদিন ধরে বৃষ্টি পড়েই চলেছে, পড়েই চলেছে— তখন ছাদে উঠে খুব ভিজি। তাই স্কুলে থাকলে এমন ‘রেনি ডে’ হলে মন খারাপ হয়ে যায়। কারণ, তখন তো আর ইচ্ছেমতো বৃষ্টিতে ভিজতে পারি না! তখন খুব অন্যমনস্ক হয়ে যাই— ইচ্ছে করে এক ছুটে চলে যাই ভিজতে! তবে, পরীক্ষার আগে বৃষ্টিতে ভিজি না, পাছে অসুখ করে! আর হ্যাঁ, বাড়ির ছাদে উঠে বৃষ্টিতে ভিজলেও, সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু স্নান করে নিই, তাই আর ঠান্ডা লাগার ভয়
থাকে না।
মিতদ্রু হাটই, ষষ্ঠ শ্রেণী
বন্ধুদের সঙ্গে খুব ভিজি
বৃষ্টি আমার ভালো লাগে। তার সবচেয়ে বড় কারণ হল বৃষ্টি পড়লে খুব মজা, খুব আনন্দ করতে পারি। যেটা গ্রীষ্মকালে করা যায় না। কোনও একটানা বৃষ্টি পড়া ‘রেনি ডে’তে স্কুলে যদি আসতে হয়, তখন আসার সময় বন্ধুদের সঙ্গে খুব ভিজি। জুতোয় কাদা লেগে গেলে ধুয়ে ফেলি। স্যাররা যদি বকুনিও দেন তাও শুনি না— বৃষ্টি পড়লে আমাকে ভিজতেই হবে! আর তখন আমার মনটা খুব উড়ু উড়ু হয়ে যায়। একদম পড়তে ইচ্ছে করে না। মন খারাপ লাগে। এই অন্যমনস্কতার জন্য অনেক সময় স্যারদের কাছে শাস্তিও পাই। হয়তো ‘নিল ডাউন’ হয়েও থাকতে হয়! কিন্তু তবু শাস্তি মাথায় নিয়েও আমার ভিজতে খুব ভালো লাগে! এভাবেই আমি ‘রেনি ডে’ এনজয় করি। তবে বাড়িতে থাকলে যদি এমন একটা ‘রেনি ডে’ পাই, তখন কিন্তু আমি ছবি আঁকি।
দেবজ্যোতি লাল, সপ্তম শ্রেণী
এমন দিনে মায়ের রান্না করা খিচুড়ি খেতে দারুণ লাগে!
বর্ষাকাল আমার খুব ভালো লাগে। খালি মনে হয় বৃষ্টি আসুক আর এমন একটা ‘রেনি ডে’তে জল ভেঙে স্কুলে যাই। যদি এর জন্য জুতো, মোজা সব ভিজেও যায়, তাহলেও এই ভেজাটা আমি খুব উপভোগ করি। খুব ভালো লাগে বাইরে মুষলধারায় বৃষ্টি পড়ছে, আর ক্লাসে স্যাররা সাহিত্যের কোনও চ্যাপ্টার— মানে গল্প বা কবিতা পড়াচ্ছেন। বাইরে বৃষ্টির আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে এই পড়াটা শুনতে আমার খুব ভালো লাগে! শুকনো দিনে এই পড়াটা শুনতে কিন্তু অতটা ভালো লাগে না। বৃষ্টির শব্দটা যেন পড়ানোটার একটা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হয়ে যায়! তবে বাড়িতে থাকলে এমন ‘রেনি ডে’ পেলে দিদির সঙ্গে লুডো খেলতে খুব ভালো লাগে। আর তারপর মায়ের রান্না খিচুড়ি খেতে দারুণ লাগে!
অনিলকুমার দে, অষ্টম শ্রেণী
রেনি ডে’তে একদমই
স্কুল যেতে ইচ্ছে করে না
একটানা বৃষ্টির ‘রেনি ডে’তে আমার একদম স্কুলে যেতে ইচ্ছে করে না। তখন মনে হয় বাড়িতে বসে শুধু প্রকৃতি দেখি। কিংবা ডায়েরিতে গল্প লিখি। বৃষ্টির দাপটে গাছের ডাল কেমন দুলছে দেখতে খুব ভালো লাগে। আমি কবিতা লিখতে খুব ভালোবাসি। কাগজে ছাপাও হয়েছে। বৃষ্টি যেন আমাকে কবিতা লিখতে আরও ইন্সপায়ার করে। স্কুলে থেকে যদি এমন ‘রেনি ডে’ পাই, তখন কিন্তু কেমন যেন বদ্ধ লাগে। বাইরে বৃষ্টি, ভেতরে আমি। ইচ্ছে করলেও বৃষ্টির কাছে যেতে পারছি না— এটা আমার একদম ভালো লাগে না। তবে এমন একটা ‘রেনি ডে’ হলে জনকোলাহল থমকে যায় যখন, তখন মনে হয় যেন বৃষ্টি হলে সবাই একটু অবসর পায়!
শাশ্বত দত্ত, নবম শ্রেণী
রেনি ডে’তে খিচুড়ি
আর পাঁপড় চাই-ই চাই
চারদিকের এই ভেজা ভাব, এই কাদা কাদা হয়ে থাকা আমার একটুও ভালো লাগে না। মাঠভর্তি জল, তাই ক্রিকেট খেলা যায় না, তাই ‘রেনি ডে’ ভালো লাগে না। পরীক্ষার আগে বৃষ্টি হলে অবশ্য ভিজি। কিন্তু পরীক্ষা এসে গেলে ভিজি না। বৃষ্টির মধ্যে কোনও ‘রেনি ডে’তে স্কুলে আসতে একটুও ভালো লাগে না। আমার মনে হয় অন্য সময় বৃষ্টি হোক, কিন্তু খেলার সময় যেন না হয়। আমাদের স্কুলে ‘রেনি ডে’ হলে পড়া হয় না। লাইব্রেরিতে নিয়ে যাওয়া হয়, কিংবা আমাদের ‘স্মার্ট ক্লাস’-এ নিয়ে গিয়ে তখন স্যাররা ‘মুভি’ দেখান প্রোজেক্টারে। বাইরে বৃষ্টি, ভেতরে বন্ধুদের সঙ্গে সেদিন যখন ‘সোনার কেল্লা’ দেখছিলাম সবাই মিলে, তখন আমার খুব ভালো লাগছিল! বাড়িতে থাকলে ‘রেনি ডে’তে আমার খিচুড়ি আর পাঁপড় ভাজা চাই-ই চাই!
সন্দীপন দাস, ষষ্ঠ শ্রেণী
স্কুলে রেনি ডে হলে বৃষ্টি পড়া দেখতে ভালো লাগে
‘রেনি ডে’ হলে ভালো লাগে। বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভূতি হয়। আলসেমি লাগে, স্কুলে আসতে ইচ্ছে করে না একদম। তবে, আমার জল ঘাঁটতে একটুও ভালো লাগে না। শুধু ইচ্ছে করে ঘরে বসে থাকি। আর খিচুড়ি-পাঁপড়ভাজা খাই। স্কুলে থাকলে ‘রেনি ডে’ হলে জানলা দিয়ে বাইরে বৃষ্টি পড়া দেখতে ভালো লাগে। পড়ায় যেন পুরো মন বসে না। তখন মনে হয় কেন আজ স্যাররা পড়াচ্ছেন! ছুটি দিয়ে দিন না! তাহলে বেশ নিজের ইচ্ছেমতো এই একটানা বৃষ্টি পড়াটাকে উপভোগ করতে পারি! কিন্তু তারপরই ভয় হয়— এত বৃষ্টি পড়ছে রাস্তায় তো জল জমে যাবে! তখন সেই জল ভেঙে বাড়ি ফিরতে হবে! আমাদের স্কুলের পাড়ায় খুব জল জমে। তবে, বাড়ি ফিরে যদি গরম গরম খিচুড়ি পাই তবে জল ভাঙার সব কষ্ট দূর হয়ে যায়!
দেবাংশু পালুই, অষ্টম শ্রেণী
বাড়িতে থাকলে রেনি ডে’তে শুধু বই পড়ি
‘রেনি ডে’ ভালো লাগে। তবে জল জমে যায় রাস্তায় সেটা ভালো লাগে না। খুব বৃষ্টি হলে গাড়ি-ঘোড়া বন্ধ হয়ে যায়। তখন খুব অসুবিধে হয়, একটুও ভালো লাগে না। তবে ঝিরঝিরে বৃষ্টি ভালো লাগে। বাইরে মুষলধারায় বৃষ্টি ঝরছে, স্যাররা ক্লাসে পড়াচ্ছেন, তখন একদম পড়ায় মন বসে না, বারবার আমার চোখ চলে যায় জানলার বাইরে জলের দিকে। তখন খুব ইচ্ছে করে ক্লাসে বসে টিফিন খেতে খেতে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করি। কারণ বৃষ্টি হলে তো নীচেও নামতে পারি না। মাঠে জল জমে থাকে। বাড়িতে থাকলে ‘রেনি ডে’তে শুধু
বই পড়ি আর খিচুড়ি খাই। মা যদি কোনও দিন খুব বৃষ্টি পড়ছে দেখে বলে, ‘থাক, আজ আর স্কুলে যেতে হবে না’, তখন খুব মজা হয়। তবে, আজকাল স্কুলে আমাদের ‘স্মার্ট
ক্লাস’ চালু হয়েছে। ‘রেনি ডে’ হলে স্যাররা ওখানে নিয়ে গিয়ে আমাদের মুভি
দেখান। বাইরে বৃষ্টি, আর ভেতরে ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ দেখছি— দারুণ এনজয়মেন্ট!
সৌরিত্র বিশ্বাস, দশম শ্রেণী
আমার পছন্দ ঝমঝমে বৃষ্টি
‘রেনি ডে’ কথাটা শুনলেই বৃষ্টির সোঁদা গন্ধ, খিচুড়ি আর ইলিশ মাছ ভাজার গন্ধ যেন মিলেমিশে যায়! আমার তখন খুব ইচ্ছে করে বৃষ্টির একটানা শব্দের সঙ্গে মিলিয়ে মান্না দের কণ্ঠে ‘আমি ফুল না হয়ে কাঁটা হয়েই বেশ ছিলাম’ এই গানটা বিশেষ করে শুনতে! মান্নাদের গাওয়া আরও অনেক গানই ভালো লাগে, তবে এই গানটা না শুনলে যেন আমার ‘রেনি ডে’ পুরোপুরি উপভোগ করা হয় না! ঝিরঝিরে বৃষ্টি না, আমার পছন্দ ঝমঝমে বৃষ্টি। সঙ্গে মেঘের ডাক, বিদ্যুতের ঝলকানি। আর সেই সঙ্গে খিচুড়ি, পেঁয়াজি! ‘রেনি ডে’ আমার ‘জাঙ্ক ফুড’ খাওয়ার প্রবণতাকে যেন আরও বাড়িয়ে দেয়। ‘রেনি ডে’তে সবসময় স্কুলে আসা তো সম্ভব হয় না। এলে বাড়ি ফেরার সময় জল ভাঙতে হয়। তখন অবশ্য খুব সমস্যা হয়। ‘রেনি ডে’তে যদি ক্লাসে স্যাররা ভূগোলের কোনও কঠিন চ্যাপ্টার পড়ান। তখন সত্যিই আমার খুব ঘুম পেয়ে যায়।
উজান বিশ্বাস, দশম শ্রেণী
আজকের স্কুল পড়ুয়াদের বৃষ্টি যাপনের দিন— ‘রেনি ডে’র কথা শুনতে শুনতে মনে হল, দিদি দুর্গাকে নিয়ে অপু যেমন একদিন বৃষ্টিতে ভিজেছিল, তেমনি কিন্তু আজকের কিশোররাও ভেজে, কখনও বাস্তবে, কখনও আবার মনে মনে। যুগ পাল্টে যায়, কিন্তু, সর্বকালের শিশু-কিশোরদের মন কিন্তু একই থাকে। বৃষ্টি তাদের ছুটির ডাক দেয়— বৃষ্টি তাদের মনকে ভাসিয়ে নিয়ে চলে যায় কোন সে সুদূরে—। সবসময় সে ছুটি বাস্তবে না পেলেও মন তো সে ছুটির নাগাল পেতে চায়—! তাই ‘রেনি ডে’তে পড়া থেকে মুক্তি নিয়ে তারা যখন ‘স্মার্ট ক্লাস’-এ বসে বসে বন্ধুদের সঙ্গে ‘মুভি’ দেখে, তখন যে মনে মনে তারা প্রত্যেকেই হয়ে ওঠে এক একজন ‘অপু’ সে বিষয়ে কিন্তু কোনও সন্দেহই নেই।
সংকলন: চকিতা চট্টোপাধ্যায়