শরীর-স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রে উন্নতির সম্ভাবনা। গুপ্তশত্রুতার মোকাবিলায় সতর্কতা প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষায় বিলম্বিত সাফল্য।প্রতিকার: ... বিশদ
এই বিভাগে কাজ করার জন্য সম্প্রতি একটি চাকরির বিজ্ঞপ্তি জারি করে নাসা কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তিতে বেশ উচ্চতর ডিগ্রিধারী ও যোগ্যতাসম্পন্ন লোকদের আহ্বান করা হয়। বিশেষ করে পৃথিবী সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে গবেষণা ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে তাঁদের। বেতন পাবেন বছরে ১ লক্ষ ২৪ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৮৭ হাজার ডলারের মধ্যে। এতটুকু পর্যন্ত সবকিছু স্বাভাবিকই ছিল। অবাক করা ব্যাপার ঘটল তখন, যখন কর্তৃপক্ষ দেখল সেই বিজ্ঞপ্তিতে সাড়া দিয়ে চাকরির আবেদন করেছে নয় বছরের একটি ছেলে! নাম জ্যাক ডেভিস। চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। আনাড়ি হাতে জ্যাক নাসাকে যে চিঠিটি লিখে পাঠায় সেটি অনেকটা এরকম:
প্রিয় নাসা,
আমার নাম জ্যাক ডেভিস এবং আমি ‘প্ল্যানেটারি প্রোটেকশন অফিসার’ পদে আবেদন করতে চাই। যদিও আমার বয়স মাত্র নয়। কিন্তু আমি মনে করি আমি এই কাজের জন্য উপযুক্ত। উপযুক্ত হওয়ার পিছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে একটি হল, আমার বোন সবসময় বলে আমি একটা এলিয়েন। তাছাড়াও আমি এলিয়েন ও মহাকাশ সম্বন্ধীয় প্রায় সকল মুভি দেখে ফেলেছি। ‘মার্ভেল এজেন্ট অব শিল্ড’ও আমি দেখেছি এবং ‘ম্যান ইন ব্ল্যাক’ও দেখে ফেলব। ভিডিও গেমেও আমি বেশ দক্ষ। আমি অল্পবয়সি মানুষ, তাই সহজেই আমি এলিয়েনের মতো করে চিন্তাভাবনা করা শিখে ফেলতে পারব।
বিনীত,
জ্যাক ডেভিস
গার্ডিয়ান অব দ্য গ্যালাক্সি
চতুর্থ শ্রেণী
এমন চিঠি পেয়ে নাসার কর্তৃপক্ষ একে এড়িয়ে যেতে পারত। হাসির ছলে পুরো ব্যাপারটাকে উড়িয়ে দিতে পারত। একটি নয় বছরের শিশু, যে কিনা কয়েকটা মুভি দেখে আর ভিডিও গেম খেলে কী মনে করে নাসার মতো জায়গায় চিঠি পাঠিয়ে বসেছে। তার কথা আর তেমন গুরুত্বপূর্ণ কী? কিন্তু প্ল্যানেটারি প্রোটেকশন বিভাগের ডিরেক্টর জেমস গ্রিন সিদ্ধান্ত নিলেন ছেলেটির চিঠির উত্তর দেবেন। নাসার প্যাডে তিনি চিঠি টাইপ করলেন, স্বাক্ষর করলেন এবং সেটি ডাকযোগে পাঠিয়েও দিলেন জ্যাকের কাছে। জেমস গ্রিনের দেওয়া উত্তরটি ছিল অনেকটা এরকম:
প্রিয় জ্যাক,
আমি (তোমার চিঠির স্বাক্ষরে) দেখেছি তুমি এই গ্যালাক্সির একজন অভিভাবক (গার্ডিয়ান অব দ্য গ্যালাক্সি, মার্ভেল কমিকসের একটি বিশ্ববিখ্যাত মহাকাশ সায়েন্স ফিকশন চলচ্চিত্র)। তুমি নাসার প্ল্যানেটারি প্রোটেকশন অফিসার হতে চাও। এটা খুবই চমৎকার!
আমাদের প্ল্যানেটারি প্রটেকশন অফিসারের চাকরির পদটি দারুণ এবং এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। মঙ্গল গ্রহ, চাঁদ ও বিভিন্ন গ্রহাণু থেকে আমরা কিছু স্যাম্পল এনে থাকি পৃথিবীতে। এই পদের মূল কাজ হল, এসব উৎস থেকে আনা স্যাম্পলের ক্ষুদ্র অণুজীবের হাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করা। আমরা যেহেতু সৌরজগতের বিভিন্ন জায়গায় অনুসন্ধান চালাই, তাই এই পদের আরও একটি কাজ হল, পৃথিবীর জীবাণু থেকে চাঁদ সহ অন্যান্য গ্রহকে রক্ষা করা।
আমরা সবসময়ই উজ্জ্বল ভবিষ্যতের বিজ্ঞানীদের খুঁজছি, যারা আমাদেরকে সাহায্য করতে পারবে। তাই আশা করি তুমি খুব ভালোভাবে পড়াশোনা করবে আর চমৎকার রেজাল্ট করবে। আমরা আশা রাখি একদিন তোমাকে নাসার কর্মী হিসেবে পাব।
বিনীত,
ড. জেমস এল. গ্রিন
ডিরেক্টর, প্লানেটারি সায়েন্স বিভাগ
নাসার এরকম চমৎকার কর্মকাণ্ড এবারই প্রথম নয়। এরকম অনেক চিঠির জবাব তারা দিয়ে থাকে। এমনকী কেউ যদি ‘পৃথিবী সমতল’ বলে চিঠি পাঠায়, তাহলেও সুন্দর করে উত্তর দেয় তারা।
এই ঘটনা আমাদেরকে কী শিক্ষা দেয়?
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিজেকে নিয়ে ইতিবাচক ভবিষ্যদ্বাণী করলে বা অন্যকে ইতিবাচক ভবিষ্যদ্বাণী জানালে বাস্তবে তার সেই বিষয়ে প্রভূত অগ্রগতি হয়। বিজ্ঞানের প্রতি একটি ছেলে বা মেয়ের খুব আগ্রহ আছে, কেউ একজন যদি সুন্দর করে তাকে বিজ্ঞানের মাহাত্ম্য বুঝিয়ে দিতে পারে এবং বলতে পারে যে, তুমি একদিন বিজ্ঞানী হতে পারবে, তাহলে তার বিজ্ঞানী হওয়ার পথ অনেকটা এগিয়ে যায়। এদেরই কেউ কেউ হয়তো একদিন সত্যিকারের বিজ্ঞানী হয়ে উঠবে।
খুব সহজভাবে বলা যায়, কেউ যদি কোনও শিশুকে বলে যে সে মেধাবী, তাহলে ভবিষ্যৎ জীবনে সে সত্যিই মেধার পরিচায়ক কিছু করে দেখাতে চেষ্টা করবে। কেউ যদি বলে, তার ভিতরে এমন কিছু আছে যা দিয়ে ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু করা যাবে, তাহলেই তারা সেই ‘কিছু’-র পিছনে ছুটবে। ঠিক, তোমাদের মতোই।
মৃণালকান্তি দাস ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে