সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
ওই এক্সপেরিমেন্টের পর ১০০ দিনেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত। সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন নোল্যান্ড। বিশেষ হুইলচেয়ারে বসে কিংবা বিছানায় শুয়ে দুনিয়াকে চমকে দিয়েছেন একটিমাত্র কারণে—টেলিপ্যাথির জোর! হ্যাঁ, শুধু চিন্তাশক্তি দিয়েই অপারেশনের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তিনি শুয়ে-বসে চিপের সাহায্যে ল্যাপটপ চালাতে শেখেন। তারপর একে একে ইন্টারনেট ঘাঁটা, লাইভ স্ট্রিম। এমনকী এখন অনলাইনে দাবা, সিভিলাইজেশন সিক্স গেমে তিনি রীতিমতো হারিয়ে দিচ্ছেন বন্ধুদের। বিশেষ কনসোলের সাহায্যে মারিও কার্টের মতো রেসিং গেমেও এখন তিনি সড়গড়। তবে সেজন্য দিনে ৮-১০ ঘণ্টার বেশি সময় কঠোর অনুশীলন করতে হচ্ছে তাঁকে।
কিন্তু টেলিপ্যাথি কি সত্যিই সম্ভব? মার্কিন ধনকুবের মাস্ক জবাব দেবেন, হ্যাঁ! তিনি যখন প্রথম এই প্রজেক্টের ঘোষণা করেন, কেউ ভাবেনি এটা সফল হবে। কারণ, মানব মস্তিষ্ক এতটা রহস্যময় যে বিজ্ঞানীরাও তার কূল পাননি। লাখ লাখ নিউরোনে সঞ্চারিত এনার্জির কিনারা করতে না পারলেও, তা অনুকরণে সক্ষম হয়েছেন গবেষকরা। তাঁদের অ্যাডভেঞ্চার সফল।
এনওয়ান চিপটির আকার একটি ছোট কয়েনের মতো। তাতে লাগানো ৬৪টি অতি সুক্ষ্ম সুতো আকৃতির তার। সেগুলির মাথায় থাকা ১০২৪টি ইলেক্ট্রোড মস্তিষ্কের কর্মপদ্ধতির সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে কম্পিউটারকে। লোহিত রক্তকণিকার চেয়ে সামান্য বড় এই ইলেক্ট্রোড ইমপ্ল্যান্ট করা মোটেও সহজ কাজ নয়! রোবটের সাহায্যে চলা সেই ক্লিনিকাল ট্রায়ালের নাম ‘প্রাইম’ বা ‘প্রিসাইজ রোবটিক্যালি ইমপ্লান্টেড ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস’। মস্তিষ্কের ঠিক মাঝ বরাবর অংশটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পরিচালনা করে। সেখানে মাত্র কয়েক মিলিমিটার গভীরে বসানো হয়েছে চিপটি। আর তার সাহায্যে ইন্টারনেট এখন নোল্যান্ডের চিন্তার মুঠোয়।
কম্পিউটারে মাউসের ব্যবহারে কেউ কতটা দ্রুত এবং কতটা নির্ভুল, তার পরিমাপের একক বিপিএস (বিটস পার সেকেন্ড)। সাধারণ মানুষ ১০ বিপিএস পর্যন্ত দক্ষতা অর্জন করতে পারে। নোল্যান্ড ইতিমধ্যে ৮ বিপিএসের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছেন। বিষয়টি নিজে এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘নিউরালিঙ্ক আমাকে এত কিছু দিয়েছে যে বলার নয়। এখন আমি বন্ধুদের বিভিন্ন গেমে হারাতে পারছি, গত আট বছরে যা কল্পনাও করতে পারিনি!’
যদিও এই এক্সপেরিমেন্টটি ১০০ শতাংশ সফল নয়। ইতিমধ্যে নোল্যান্ডের মস্তিষ্কে এনওয়ান চিপের দু’টি তার নিজের জায়গা থেকে সরে এসেছে। সেটা অপারেশনের সময় স্নায়ুকোষের মধ্যে ঢুকে যাওয়া সামান্য বায়ু বা এয়ার বাবলের চাপে। সেটিকে জায়গামতো প্রবেশ করানো প্রায় অসম্ভব! তবে বিজ্ঞানীরা সফ্টওয়্যারের সাহায্যে বাকি ইলেক্ট্রোডগুলির সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে আগের কর্মক্ষমতার কাছাকাছি পৌঁছে দিয়েছেন চিপটিকে। যদিও এই কারণে একসময় নোল্যান্ডের মস্তিষ্ক থেকে সেটি খুলে ফেলতে হবে।
নিউরালিঙ্কের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বেঞ্জামিন রেপোপোর্টের অবশ্য ধারণা, এতে মস্তিষ্কের ক্ষতি হবে। এই নিউরোসার্জন সম্প্রতি ইস্তফা দিয়েছেন মাস্কের কোম্পানি থেকে। এই বিতর্ক হয়তো থাকবেই। কিন্তু এটা পরিষ্কার যে, ক্রমশ মানুষের একটি নতুন প্রজাতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। মানবজাতি এবং প্রযুক্তির মধ্যে সূক্ষ্ম রেখাটি ক্রমশই ঝাপসা হয়ে আসছে। নোল্যান্ডের অবিশ্বাস্য গল্প এর প্রমাণ!