সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
নতুন বাড়ি কিনেছে অনন্যা। গৃহপ্রবেশের পুজোর পর জমাটি খাওয়াদাওয়ার দাবি তুলেছে আত্মীয়, বন্ধু সকলেই। ঋষভের ছেলের জন্মদিন। দশ বছর, বড় মাইলস্টোন। ‘বিগ পার্টি’র চাহিদা তাই অফিস থেকে বন্ধু সব মহলেই।
রাজন্যার বহুদিনের শখ পূর্ণ হয়েছে অবশেষে। একটা বুটিক খুলতে চলেছে সে। এদিকে জোগাড়যন্ত্র করতে গিয়ে হিমশিম দশা।
এই ধরনের যে কোনও কাজেই নিজে হাতে অনুষ্ঠানের সাতসতেরো সামলানো বেশ কঠিন। সেক্ষেত্রে ইভেন্ট ম্যানেজারের সাহায্য নেওয়াই ভালো। যুগের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এখন পেশায় রূপান্তরিত। এই পেশাভুক্তরা সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। এই বিষয়ে প্রশ্ন রেখেছিলাম কেরিয়ার কাউন্সেলর চন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তিনি জানালেন, ‘অনেক ছাত্রছাত্রী গতানুগতিক বিষয়ে পড়াশোনা করতে চায় না। তাদের জন্য যে ধরনের সুযোগ রয়েছে তারই একটা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট।’ এই বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্সের পর এমবিএ ডিগ্রির সহায়তায় আরও বিশদে পড়াশোনা করা যায়।
প্রথম থেকেই খেয়াল রাখুন
তবে বিষয়টিতে পেশাগতভাবে সফল হতে চাইলে কয়েকটা জিনিস মাথায় রাখা দরকার, জানালেন চন্দ্রাণী।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট নানারকমের হয়। কেউ পার্টি অ্যারেঞ্জ করেন, কেউ বা ফ্যাশন শো অর্গানাইজ করেন। কেউ ট্রেড ফেয়ার, বিজনেস ফেয়ার সামলে দেন দক্ষভাবে, কেউ আবার বিয়ের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে দড়। আপনি কোন দিকে পারদর্শী সেটা ঠিক করতে হবে।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোর্স করার সময় কয়েকটা বিভাগ রয়েছে, যা এই দিক নির্ণয় করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। তার মধ্যে আছে ইভেন্ট সার্টিফায়েড কোর্স, ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর্স, প্রোগ্রাম ডিজাইন অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি কোর্স, প্রফেশনাল মিটিং কোর্স ইত্যাদি।
নিজের দক্ষতা বুঝে গেলে কোর্সটা করতে করতেই চাকরির দিশা খুঁজে বের করা সম্ভব। পাড়ায় ছোটখাট অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। সেগুলোতে কাজ করলে হাতেকলমে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ট্রেনিং নেওয়া যায়। যেমন পাড়ায় রবীন্দ্রজয়ন্তী অনুষ্ঠানের আয়োজন, পাশের বাড়ির বাচ্চার জন্মদিনের অনুষ্ঠানের খুঁটিনাটি দেখভাল— ইত্যাদি করতে করতেই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে হাত পাকানো সম্ভব।
কীভাবে গড়বেন কেরিয়ার
এই ক্ষেত্রে কেরিয়ার গড়তে চাইলে প্রথম দরকার নিজের একটা পোর্টফোলিও তৈরি করা। যেসব কাজে হাত পাকিয়েছেন সেগুলোর ছবি, তার জন্য তৈরি করা স্ক্রিপ্ট, যদি সে বিষয়ে কোনও সোশ্যাল মিডিয়া বা প্রেস কাটিং থাকে তাহলে সেগুলো মিলিয়ে একটা ফাইল বানান।
পোর্টফোলিওতে কিছু হাইলাইটার রাখুন। তার মধ্যে থাকবে: কোনও বিশিষ্ট ব্যক্তির প্রশংসা, কোনও অনুষ্ঠানের ফিন্যান্স দক্ষভাবে সামলে থাকলে সেটার আলাদা দলিল, কোনও খবরের কাগজে আপনার কাজের প্রশংসা প্রকাশিত হলে সেই কাটিং ইত্যাদি।
সহজাত দক্ষতা
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টকে পেশা হিসেবে নিতে গেলে কিছু সহজাত ক্ষমতা থাকা দরকার। এই কাজের ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে জরুরি।
প্রথমত আপনি কতটা মিশুকে সেটা নিজে বুঝে নিন। এই কাজে ‘কমিউনিকেশন স্কিল’ বা যোগাযোগ তৈরির ক্ষমতা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
স্পট ডিসিশন নেওয়ার ক্ষমতা থাকা চাই। আর চাই সুসম্পর্ক রাখার ক্ষমতা। একই কাজের জন্য বিভিন্ন ভেন্ডরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা দরকার। শেষ মুহূর্তেও যদি কোনও ভেন্ডর কাজ উতরে দিতে না পারে তাহলে অন্যজনকে সঙ্গে সঙ্গে কাজে লাগাতে হবে।
খুব সৃষ্টিশীল হওয়াও প্রয়োজন। কাজের ফ্লায়ার বানাতে, বিজ্ঞাপন করতেও এই সৃষ্টিশীলতা কাজে লাগে।
চাপের মুখে মাথা ঠান্ডা রাখার ক্ষমতা থাকা চাই। হঠাৎ কোনও বিপর্যয় ঘটতে পারে, শেষ মুহূর্তে কোনও ভেন্ডর হাত তুলে দিতে পারে, প্রাকৃতিক বিপর্যয় হতে পারে এই জিনিসগুলো মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে।
যে কোনও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষমতাও থাকা চাই। সবসময়ই ক্লায়েন্টকে ভরসা দিতে পারতে হবে। সেটা তখনই সম্ভব যখন নিজের কাজে আপনি একশোভাগ নিশ্চিত থাকবেন।
মাল্টিটাস্কিংও খুবই দরকার। একইসঙ্গে অনেকগুলো কাজ সামলাতে পারতে হবে। বিভিন্ন ভেন্ডরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, একাধিক কাজ একইসঙ্গে করার ক্ষমতা রাখা, এগুলোই মাল্টিটাস্কিং। একই দিনে হয়তো বই লঞ্চ, জন্মদিনের পার্টি পড়ল। দুটো কাজেই আপনাকে নিজের সম্পূর্ণটা দিতে হবে। সেটা ভালোভাবে উতরে দেওয়ার ক্ষমতা থাকা চাই।
‘ক্লায়েন্ট ডিলিং’ এক্ষেত্রে খুবই জরুরি। একটা পার্টি বা অন্য কোনও অনুষ্ঠান আপনার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ক্লায়েন্টকে বোঝাতে হবে। নাহলে ক্লায়েন্ট যা চাইছে শুধুই যদি সেই মতো কাজ করেন, তাহলে কাজে সাফল্য আসবে না। অনুষ্ঠানকে মনোগ্রাহী করে তোলার ক্ষমতা আপনাকেই রাখতে হবে। সেজন্য নিজের সৃষ্টিশীলতার উপর নির্ভর করতে হবে। একই অনুষ্ঠানে বৈচিত্র্য আনতে হবে। জন্মদিনের পার্টি অ্যারেঞ্জ করা থেকে বুটিক খোলার আয়োজন, বুক লঞ্চ অনুষ্ঠান সবেতেই ভিন্ন ধরন রাখা চাই।
পড়ার সুযোগ
কলকাতায় বেশ কিছু ইনস্টিটিউট রয়েছে যেখানে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোর্স করানো হয়। তার মধ্যে আছে এনআইইএম ইনস্টিটিউট অব ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, আইআইএস ডব্লুবিএম, ক্যামেলিয়ন ইনস্টিটিউট অব ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব মিডিয়া অ্যান্ড ইভেন্ট সহ আরও বেশ কিছু সংস্থা।
চাকরির সন্ধান
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিংয়ের পর প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই ক্যাম্পাস ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে চাকরির সুযোগ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কোর্স চলাকালীনও ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেওয়া হয়। এছাড়া এই ধরনের কোর্স করার পর খুবই কম পুঁজি সম্বল করে নিজস্ব ব্যবসা চালু করা যায়। অনেকে চাকরি করতে করতেও নিজস্ব পথে ফ্রিলান্স ইভেন্ট ম্যানেজারের কাজ করেন।