সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
বয়সকালে সন্তানরাই বাবা-মায়ের যষ্টি। শিশুকালে সন্তানদের দেখভালের দায়িত্ব যেমন বাবা-মায়ের, তেমন বয়স বাড়লে তাঁদের ভরণপোষণের ভার সন্তানকে নিতে হয়। ভারতীয় আইনে এই ধারণা স্পষ্ট করা আছে। যদিও বাস্তব সবসময় এমন থাকে না। বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, সন্তান বাবা-মায়ের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে। বাবা-মা সন্তানের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেন না অপত্যস্নেহ থেকে। তবে ইদানীং ছেলে-মেয়ের অত্যাচার ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার মাত্রা এতটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে যে বাবা-মা বাধ্য হচ্ছেন আইনের সাহায্য নিতে।
আইন কী কী
ভারতীয় কার্যবিধি ১২৫: এই ধারা অনুসারে তাঁরা ‘মেনটেন্যান্স ক্লেম’ বা ভরণপোষণের দাবি জানাতে পারেন। আদালত তা নিশ্চিত করবে। এক্ষেত্রে দেখা হয়, ছেলে বা মেয়ের ক্ষমতা আছে অথচ সে বাবা-মায়ের দেখভাল করে না। তখন আদালত কঠোর নির্দেশ দেয় যে সন্তানকে এই ভরণপোষণের ভার নিতেই হবে। এরপর থেকে সন্তানের স্যালারি অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরাসরি কেটে বাবা-মায়ের অ্যাকাউন্টে পাঠানোর উপায় থাকে বা সন্তান নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকাটি আদালতে এসে জমা করবে (জুডিশিয়াল ক্যাশ) এমনও হতে পারে। প্রতি মাসে বাবা-মাকে সেই টাকা পাঠিয়ে রিসিট নিজের সংগ্রহে রাখতে পারে সন্তান। আইন অনুসারে, যদি দেখা যায় সন্তান বেকার, তাদের আর্থিক সঙ্গতি নেই। সেক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের আইন রয়েছে— সন্তান শারীরিকভাবে সুস্থ ও পূর্ণবয়স্ক হলেই বাবা-মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব তাকে নিতেই হবে।
এই নির্দেশ না মানলে: ১২৫ (৩) ধারা অনুসারে আদালত সন্তানের স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করে স্থানীয় ডিএম-কে দেবে, তিনি তা নিলামে বিক্রি করে বাবা-মায়ের প্রাপ্য মিটিয়ে দেবেন। ধরা যাক, বাবা-মা প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে পান। সেখানে সন্তান গত ১ বছর ধরে টাকাটা দিচ্ছে না। তাহলে প্রাপ্য দাঁড়ায় ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। এই পরিমাণ টাকার সমান স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে ওই টাকা আদালত মিটিয়ে দেবে এবং নির্দেশ দেবে এর পর থেকে প্রতি মাসে যেন সন্তান ওই টাকা বাবা-মাকে দেয়। না দিলে ফের প্রতি মাসেই বাবা-মায়ের প্রাপ্য অনুসারে সন্তানের স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে দেবে আদালত। আরও একটি শাস্তির নিদান রয়েছে। আদালত অভিযোগের উপর ভিত্তি করে ও খতিয়ে দেখে সন্তানের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করে গ্রেপ্তারও করতে পারে।
গার্হস্থ্য হিংসা আইন: ভারতীয় কার্যবিধির সেকশন ১২-র মধ্যে এটি পড়ে। এই আবেদন একমাত্র মা করতে পারেন। বাবা পারবেন না। ছেলে, ছেলের বউ, মেয়ে ও জামাইয়ের বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ জানাতে পারেন মা। সন্তান ভরণপোষণের ভার না নিলে বা শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করলে মা আদালতকে জানাতে পারেন। গার্হস্থ্য হিংসা আইনে মায়ের প্রতি অত্যাচার বন্ধ করতে ও মাকে আর্থিক সাহায্য করতে সন্তান বাধ্য। বাড়ি থেকে বের করে দিতে চাইলেও মা এই আইনের সাহায্য নিতে পারেন। এতে উল্টে সন্তানকেই বাড়ি ছাড়তে হতে পারে। এমনকী, সন্তান আদালতের নির্দেশ মানছে কি না, তা দেখতে স্থানীয় থানা বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উপর দায়িত্ব ন্যস্ত থাকবে। তারা আকস্মিকভাবে বাড়িতে উপস্থিত হবে ও রিপোর্ট জমা দেবে আদালতকে।
এই নির্দেশ না মানলে: বাড়াবাড়ি দেখেলে আদালত ছেলে-ছেলের বউ বা মেয়ে-জামাইকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে পারে অথবা সরাসরি ওয়ারেন্ট ইস্যু করে গ্রেপ্তার করতে পারে।
সিনিয়র সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট: এতে এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে মা-বাবা দু’জনেই আবেদন করতে পারেন। যে কোনও গার্হস্থ্য হিংসা এর অন্তর্ভুক্ত। সন্তানের অত্যাচার, ভরণপোষণের দায়িত্ব না নেওয়া সবই পড়ে। অভিযোগের ভিত্তিতে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয় ও কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচ্য হয়। এতেও গ্রেপ্তার হতে পারে সন্তান।
অবহেলিত হলে প্রথমেই কী করবেন
সন্তান ভরণপোষণের ভার না নিলে অনেক সময় বাবা-মায়ের আর্থিক অসুবিধা তৈরি হয়। এমন হলে প্রথমেই তাঁরা যে থানা এলাকায় থাকেন, সেই থানা কোন ডিভিশনাল আদালতের অন্তর্গত তা জেনে, সেই ডিভিশনাল আদালতে দ্বারস্থ হতে হবে। আইনে বলা আছে, তিনদিনের মধ্যে এই মামলার প্রথম শুনানি হবে। তিন মাসের মধ্যে মামলা শেষ করতে হবে। বাস্তবে এত দ্রুত সবসময় হয় না। তবে প্রাথমিক অন্তর্বতী নির্দেশ তিন-চার মাসেই বেরিয়ে যায়।
খরচ কেমন
কোনও খরচ নেই। দেশের প্রতি আদালতেই ডিএলএসএ (ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটি) বা সরকারি আইনি সহায়তা কেন্দ্র রয়েছে। তারা বিনামূল্যে এই মামলা করে। তারাই উকিল দেবে, তারাই মামলার দায়িত্ব পালন করবে।