বদমেজাজ ও কঠিন ব্যবহারে ঘরে-বাইরে অশান্তি ও শত্রুতা। পেট ও বুকের সংক্রমণে দেহসুখের অভাব। কর্মে ... বিশদ
রাজস্থানের এক গ্রামের মেয়ে সোনাল শর্মা। বাবা দুধ বিক্রি করেন। কিন্তু মেয়ে একেবারেই ভিন্ন পথে হাঁটলেন। পড়াশোনা শেষ করে আইনের পরীক্ষায় বসলেন সোনাল। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উকিল হওয়ার মুখে তিনি। তাই বলে যে সারা দিন শুধুই পড়াশোনা করে কাটানোর সুযোগ পেয়েছেন এমনটা ভাববেন না। সোনালের দিন শুরু হয় ভোর চারটেয়। বাবার পাশাপাশি গোরুর দুধ দোয়ানো, খাটাল পরিষ্কার করা, বাড়ির দেওয়াল গোবর জলে নিকনো, ঘুঁটে দেওয়া সব কাজই করেন তিনি। তারপর সাইকেল চড়ে বাবার সঙ্গে দুধ বিক্রি করতে বেরিয়ে পড়েন। আর পড়াশোনা? সেসব পাট সন্ধের পর কুপের আলোয়। গোয়ালে গোরুদের খাইয়ে তাদেরই পাশে কুপি জ্বলিয়ে বসে পড়েন বই খাতা নিয়ে। খালি তেলের টিন সাজিয়ে তৈরি করেন টেবিল আর নিজে বসেন মাটিতে। সেখানেই চলে পড়াশোনা। এইভাবে পড়াশোনা করেই বিএ পরীক্ষায় প্রথম হন। তারপর শুধুমাত্র নিজের ইচ্ছের জোরে আইন পড়তে শুরু করেন। এলএলবি ও এলএলএম পরীক্ষা দুটোতেই একইরকম সাফল্য পান। এখন আর তাঁকে আটকে রাখে কার সাধ্য? আইনজীবী হওয়ার পথে তিনি অবিচল। রাজস্থানের দায়রা আদালতে ফার্স্ট ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেট পোস্টে তাঁর চাকরি হতে আর বিশেষ দেরি নেই। ইতিমধ্যেই ডাক পেয়ে গিয়েছেন সোনাল। এখন শুধু যোগদানের অপেক্ষা। মেয়ের সাফল্যে ভীষণ খুশি দুধওয়ালা শর্মাজি। তিনি অশ্রুসজল চোখে বলেন, ‘সোনালের যাবতীয় পড়াশোনা, রেজাল্ট সাফল্য সবই তার নিজের কৃতিত্ব। আমি বাবা হিসেবে কিছুই করতে পারিনি। কিন্তু ও মেয়ের সব কর্তব্য পালন করেছে। আমার পাশে থেকেছে, সব কাজে সাহায্য করেছে। এখন নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আমার মুখ উজ্জ্বল করছে। পিতা হয়ে এর চেয়ে বেশি আর কী-ই বা চাইতে পারি।’
লন্ডনে নজরুলের গানে দুর্গা বরণ
‘প্রবাসী’ শব্দটির মধ্যে কি দূরত্বের আভাস স্পষ্ট? প্রবাসে থেকেও কিন্তু নিজের সংস্কৃতির ধারক-বাহক হওয়া সম্ভব। আসল কথা, ইচ্ছাটাই সব। ঠিক যেমন লন্ডনে থেকেও কলকাতার মাটির টান, মাটির গান অনুভব করেন সোমা দাস। রীতিমতো নাড়া বেঁধে চলেছে তাঁর সঙ্গীতচর্চা। বিদেশে থাকলেও পুজোর গানে এবার নজরুলের আগমনি সুর খুঁজে পাওয়া গেল। লন্ডনের মাটিতে নজরুলের গান গাইবেন সোমা দাস। এর আগে রূপঙ্করের সুরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে একুশের গান, দেবজ্যোতি মিশ্রের সঙ্গীত আয়োজনে রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম, জয় সরকারের সুরে ফিরে আসার গান আধুনিক বাংলা গান ইত্যাদি করেছেন বিভিন্ন সময়। কলকাতা স্ট্রিট মিউজিক ফেস্টিভ্যালের সহযোগিতায় থেকেছেন। এবার পুজোয় নজরুলের এক স্বল্প শ্রুত আগমনি গাইলেন তিনি। মহালয়ায় সেই গান গেয়ে দর্শক ও শ্রোতাদের মুগ্ধ করলেন সোমা। গানটার রচনাকাল ঠিক জানতে পারা যায় না, তবে তা ভৈরবী রাগে আধারিত, তাল দাদরা। দুই ভিন্ন স্বরলিপি অনুযায়ী মধ্যলয় ও ধীরলয়ে গানটা গাওয়া হয়। ‘দশ হাতে ওই দশদিকে মা, ছড়িয়ে এলো আনন্দ’ এই গানটা নজরুলের গানগুলোর মধ্যে অপ্রচলিত। সোমা দাস বললেন, ‘পুজোর সময় প্রবাসে কাটলেও দেশের সঙ্গে মিশে থাকতে চাই। পুজোয় একটা বাংলা গান না করলে কেমন যেন অসম্পূর্ণ লাগে নিজেকেই। গানে গানেই মাটির সঙ্গে একটি যোগাযোগ স্থাপন করি।’
দল বেঁধে পাহাড়ে মেয়েরা
সালটা ১৯৭১। কলকাতার দ্য ইনস্টিটিউট অব এক্সপ্লোরেশন শুরু করেছিল তাদের যাত্রা। পথচলায় বিশিষ্টতা রেখে নদী-পাহাড়-জঙ্গল সর্বত্র বিচরণ করাই ছিল এদের লক্ষ্য। সেই ধারা অক্ষুণ্ণ রাখতে একাধিক সফল লেডিজ এক্সপিডিশনের পাশাপাশি লেডিজ ট্রেকের চিন্তাভাবনা শেষ পর্যন্ত কম্বাইন্ড ট্রেকের রূপ নিলেও, সম্পূর্ণ ট্রেক রুট ছিল ব্যতিক্রমী। উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার অন্তর্গত নর পর্বত রেঞ্জের কুন্ঠ খাল একসময়ের বহুল ব্যবহৃত পথ গ্লেসিয়ার বসে যাওয়ার কারণে হয়ে পড়ে অব্যবহৃত। ৪৫ বছর পর, ২০১৫ সালের শেষের দিকে সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টায় করা হয় সংস্কার। আর সেই পথই ছ’বছর পর সায়ন্তনী মহাপাত্রের নেতৃত্বে দ্য ইনস্টিটিউট অব এক্সপ্লোরেশনের সাত সদস্যের দল অতিক্রম করে সৃষ্টি করল অনন্য নজির। অব্যবহৃত চূড়ান্ত চড়াই-উতরাই পথ ঢেকেছে জঙ্গলে। জঙ্গল কেটে এগনো ছাড়া অন্য কোনও উপায় ছিল না। তেমনই ছিল ধসে যাওয়া রাস্তায় রোপের সাহায্যে পার হওয়া, ছিল সারারাত ধরে টেন্টের ওপর থেকে তুষার পরিষ্কার এবং বৃষ্টি মাথায় নিয়ে গুহায় রাত কাটানোর মুহূর্তও। বাদ যায়নি মানুষ সমান লম্বা পলিগোনাম-এর জঙ্গল কেটে টেন্ট পিচ করা, ব্রহ্মকমলের গালিচায় রাত কাটানো, বারে বারে খরস্রোতা নালা পার করা এবং জঙ্গল পথে পায়ে-পায়ে হেঁটেও পথ হারানোর মুহূর্ত। ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার্সে আজকাল সেভাবে ফুল দেখা যায় না একথা তো সবারই জানা। তাই যারা ফুলের মেলা দেখতে চান, শারীরিক দক্ষতা তৈরি করে কুণ্ঠ খাল ট্রেক পথে পা বাড়াতে পারেন। এ পথের নৈসর্গিক দৃশ্য ও ফুলের শোভা ক্লান্তি লাঘব করবেই।