মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
অভিনয়ে এলেন কীভাবে?
২০১৪ থেকে ২০১৫ —এই এক বছর আমি মডেলিং করেছিলাম। তারপর পড়াশোনার জন্য সেটা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। মাস্টার ডিগ্রি কমপ্লিট করার পরে একটা ফোটো শ্যুট করেছিলাম। সেই ছবি দেখার পরই সিরিয়ালের পরিচালক আমায় অভিনয় করার অফারটা দেন।
আপনার প্রথম অভিনয় কী?
‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’ই হচ্ছে আমার প্রথম মেগা ধারাবাহিক। এটা সান বাংলায় দেখানো হচ্ছে। এখানে আমি জ্যোৎস্নার চরিত্রে অভিনয় করছি।
প্রথম শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন?
আমার প্রথম শ্যুটিং কালিম্পংয়ে ডান্স দিয়ে শুরু হয়েছিল। আমি যেহেতু নাচের ‘ন’-ও জানি না তাই একটা উত্তেজনা হচ্ছিল মনে মনে। তবে শুরুর আগে বেশ কয়েকদিন কোরিওগ্রাফারের কাছে আমাকে নাচ প্র্যাকটিস করতে হয়েছিল। আমাকে ওঁরা খুব সাহায্য করেছেন। এরপর আমার নাচতে বা অভিনয় করতে কোনও অসুবিধা হয়নি। তবে একটা ভয় তো লেগেছিলই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভগবানের ওপর ভরসা করে নাচটা করেই ফেলেছিলাম।
চরিত্রটা কতটা উপভোগ করছেন?
বেদের মেয়ে জ্যোৎস্নাটা একটা আইকনিক মুভি। তাই এটা করতে খুবই ইন্টারেস্টেড ছিলাম। প্রথম প্রথম চরিত্রটা একটু কঠিন লাগছিল। চরিত্রটাতে নিজেকে ঢালতে একটু সময় লেগেছিল। কিন্তু আমার ডিরেক্টর, কো-অ্যাক্টররা আমাকে খুব সাহায্য করেছে। আর এখন চরিত্রটার প্রতি একটা টান এসে গিয়েছে। তাই চরিত্রটাও এখন নিজের মধ্যে বসিয়ে নিতে পেরেছি।
যখন অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেওয়ার কথা ভাবলেন, তখন বাড়িতে কোনও সমস্যা হয়নি?
হয়েছিল বইকি। ভীষণ সমস্যা হয়েছিল। যেহেতু আমার পরিবারের কেউই এই জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, তাই প্রথম দিকে আমার অভিনয়ে আসা কেউ মেনে নেননি। সবাই ভয় পেয়েছিলেন। কিন্তু যখন আউটডোরে মাকে নিয়ে যাই তখন মা দেখেছিল সমস্ত টিম একটা পরিবারের মতো। তারপর সবার ভয় কেটে যায়।
আপনারা কয় ভাই বোন?
আমি একা।
পড়াশোনা কোথায় করেছেন?
আমি সোদপুরের মেয়ে। ওখানকার সুশীলকৃষ্ণ শিক্ষায়তন থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছি। এরপর ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজ থেকে ইংরেজিতে গ্র্যাজুয়েশন এবং মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি।
ছোটবেলায় কেমন ছিলেন?
ছোটবেলায় একাই বড় হয়েছি। বাবা-মা দু’জনেই কাজে বেরতেন। আমাদের একটু অার্থিক টানাটানি ছিল। কষ্টের মধ্যে যেহেতু বড় হয়েছি তাই এটুকু বুঝতে পেরেছিলাম যে বাবা-মা আমাকে ভালো রাখার জন্য খাটছেন। আর তখন থেকেই ভেবে রেখেছিলাম আমিও বড় হয়ে আমার বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়াব। ছোটবেলা থেকেই আমার মধ্যে এই মূল্যবোধটা তৈরি হয়ে গিয়েছিল।
প্রেম করছেন নাকি?
হ্যাঁ, সে তো করছিই। আমি পরের বছর বিয়ে করতে চলেছি। ওর নাম শুভজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ও হোটেল ম্যানেজমেন্টে আছে। আমরা দু’জনেই বন্ধু ছিলাম। হঠাৎ করেই আমাদের আলাপ হয়। আর এই আলাপ থেকে বন্ধুত্ব এবং প্রেম। এরপর দু’বাড়িতে জানাজানি হয় এবং বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আপনার বাড়িতে কে কে আছেন?
আমি, বাবা আর মা।
রান্না করতে পারেন?
হ্যাঁ। সব ধরনের রান্না করতে পারি। আসলে রান্না করতে আমার ভালো লাগে। যখনই ইচ্ছে হয় তখনই কিছু না কিছু বানিয়ে ফেলি। বিরিয়ানি ছাড়া আমি যা যা এ পর্যন্ত রান্না করেছি সবগুলোই সবার খুব পছন্দ হয়েছে।
এখন তো অনেক রোজগার করছেন, রোজগারের টাকা কীভাবে খরচ করেন?
আমি ব্যয়বহুল জীবনযাপন করি না। যেটুকু দরকার সেটুকুই খরচা করি। ভবিষ্যতের জন্য জমানোর চেষ্টা করছি।
নিজের টাকায় বাড়ি করা বা গাড়ি কেনার ইচ্ছে নেই?
একটা তো স্বপ্ন আছেই। নিজের একটা ছোট বাড়ি হবে একটা গাড়ি হবে। তবে আগে আমি একটা ছোট সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কিনব, কিনে ড্রাইভিংটা শিখব। তারপর ভালো একটা নতুন গাড়ি কিনব।
আজ যে আপনি অভিনেত্রী হয়েছেন, এই অভিনেত্রী হওয়ার পেছনে কার অবদান বেশি?
সবার। আমার বাবা-মা, আমার বয়ফ্রেন্ড, দিদা সবাই আমাকে নানাভাবে সাহায্য করেছেন। এদের সাহায্যেই আমি আজ এখানে আসতে পেরেছি।
আগের জীবনের সঙ্গে এখনকার জীবনের ফারাক কতটা? লোকে যখন চিনতে পারে কেমন লাগে? নিজের লাইফ স্টাইল কতটা বদল করেছেন?
সবাই যখন কাজের প্রশংসা করে তখন ভালো লাগে। কারণ আমি অডিয়েন্সের জন্যই কাজটা করি। যখন দর্শক বলে ভালো লাগছে, তখন খুব আনন্দ হয়। আর বদল বলতে গেলে সেরকম কিছু হয়নি। শুধুমাত্র আগে আমি আমার পরিবারকে অনেক সময় দিতে পারতাম। এখন কাজের চাপে সেটা কম হয়ে গেছে। তাই একটু খারাপ লাগে।
পশুপাখি ভালোবাসেন?
ভালোবাসি, তবে দূর থেকে। আসলে আমার একটা অ্যানিমাল ফোবিয়া আছে। তাই পশুপাখি ধরতে ভয় পাই।
বর্তমান সমাজে মেয়েদের অবস্থান কেমন বলে আপনার মনে হয়?
এখন সবাই চাইছে মেয়েদের একটা জায়গায় পৌঁছে দিতে। কিন্তু সমাজ একটা মেয়েকে এখনও মেয়ে বলেই মনে করে। কিছুদিন আগে হায়দরাবাদে যে ঘটনাটা ঘটল, কিংবা এ ধরনের আরও যে ঘটনাগুলো ঘটছে যেগুলো দেখে বোঝা যায় একদল বিকৃত মানুষ মেয়েদের এখনও ভোগ্যবস্তু হিসেবেই দেখে। অনেকে বলেন যে মেয়েরা অনেক কিছু করতে পারে। মেয়েরা এই, মেয়েরা সেই, এগুলো না বলে আগে তাদের সম্মান দেওয়া উচিত। সবার বাড়িতে মা-বোন আছে। যখন রাস্তা দিয়ে একটা মেয়ে যায় তখন সমাজের উচিত তাকে সম্মানের চোখে দেখা। এটা না হলে মেয়েদের অবস্থান কখনওই বদলাবে না।
আজকালকার সিরিয়ালগুলোতে মহিলাদের বড্ড বেশি করে ভিলেনের চরিত্রে দেখানো হচ্ছে। সত্যি কি সমাজেও মহিলারা এতটাই জটিল-কুটিল? কী মনে হয় আপনার?
না। এতটা বোধহয় হয় না। আসলে দর্শকরা এ ধরনের নেগেটিভ চরিত্র দেখতে পছন্দ করেন। তাই হয়তো এতটা জটিল কুটিল চরিত্র দেখানো হয়। আমাদের ডেলি লাইফে কিছু কিছু ঝামেলা লেগেই থাকে। কিন্তু তাই বলে এরকম নয়। এগুলো মানসিকতার উপর নির্ভর করে। আর টিভির ব্যাপারটা পুরোপুরি দর্শকের চাহিদার উপর নির্ভর করে। তার সঙ্গে বাস্তবের মিল থাকবে এমনটা ভাবাই উচিত নয়।
ভূত আর ভগবানে বিশ্বাস আছে?
হ্যাঁ আছে। আমার মনে হয় পজিটিভ এনার্জি থাকলে তাকে কাউন্টার করার জন্য একটা নেগেটিভ এনার্জিও থাকবেই। ফলে ভগবান থাকলে ভূতও থাকবে।
সিনেমায় অভিনয় করতে চান? স্বপ্নের চরিত্র কী?
হ্যাঁ অবশ্যই করতে চাই। আপাতত সব ধরনের চরিত্রকেই আমি ফিল করতে চাই। আমি একটা চ্যালেঞ্জিং চরিত্র করতে চাই যেখানে আমি আমার অ্যাক্টিংয়ের স্কিলটাকে ফুটিয়ে তুলতে পারব।
পরজন্মে বিশ্বাস আছে? পরজন্মে কী হয়ে জন্মাতে চান?
ভূত আর ভগবান যদি থেকে থাকে তবে পরজন্মও থাকবে। তবে আমি এ নিয়ে বিশেষ কিছু ভাবিনি। আপাতত এ জন্মটাই তো আগে ভালোভাবে বাঁচি।
অবসর সময়ে কী করেন?
অবসর সময়ে সিনেমা দেখি, টিভিতে বিভিন্ন সিরিজ দেখি, বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলি, পরিবারকে সময় দিই।
এক নজরে
জন্মতারিখ: ১০ জুন ১৯৯৪
ডাকনাম: সোনা
রাশি: মিথুন
প্রিয় অভিনেতা: নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি
প্রিয় অভিনেত্রী: দীপিকা পাড়ুকোন
প্রিয় সিনেমা: গুপি গাইন বাঘা বাইন
প্রিয় গায়ক: অরিজিৎ সিং
প্রিয় গায়িকা: শ্রেয়া ঘোষাল
হবি: গান করা
প্রিয় খাবার: বাঙালি খাবার
প্রিয় ফল: আম
প্রিয় ফুল: গোলাপ
বিশেষ ইচ্ছা: বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করা
প্রিয় রং: গোলাপি, সাদা
প্রিয় বন্ধু: শরণ্যা, প্রীতি
প্রথম প্রেম: আমার মা মিনতি দাস
স্মরণীয় মুহূর্ত: যখন প্রথম টিভিতে নিজেকে দেখেছিলাম।
জীবনের সংজ্ঞা: কষ্ট করে নিজেকে একটা জায়গায় পৌঁছে দেওয়া।
ভালোবাসার সংজ্ঞা: জীবন
নিজের সম্পর্কে মতামত: জীবন সংগ্রামী। যে তার জীবন সংগ্রামে এগিয়ে যাচ্ছে একটা লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য।