মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা বিভাগের অংশ, জল পুলিসের কর্মী ছিলেন এই অনুরাধা। যাঁর বইয়ের পাতার প্রতিটি ছত্রে লিপিবদ্ধ করা আছে মার্কিন বাহিনীর অন্দরের নানাবিধ শারীরিক অনাচারের কথা। পুরুষশাসিত ওই বাহিনীর যৌন লাঞ্ছনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার অনুরাধা শুধুমাত্র প্রতিবাদ করেই থেমে থাকেননি, চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। কারণ, একজন পুরুষ সেনা অফিসারের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সুবিচার মেলেনি। উল্টে ওই অফিসারের পদোন্নতি হয়।
মার্কিন দেশে পুরুষতন্ত্রের চেহারাটা ঠিক কীরকম কিংবা মহিলাদের কাজের ক্ষেত্রের পরিবেশ কতটা আলাদা জানতে চাইলে লেখিকার সপাট উত্তর, পৃথিবীর দুই গণতন্ত্রে এই বিষয়ে খুব বেশি ফারাক নেই। দুই দেশেই রাজনীতি, কর্পোরেট, প্রশাসন সর্বস্তরেই কোনও কোনও ক্ষেত্রে মহিলারা উচ্চপদে আসীন রয়েছেন কিন্তু তাই বলে পুরুষ শাসন বা ক্ষমতার আস্ফালন কমেনি। সামগ্রিক চিত্রটা তাই দুই দেশে প্রায় একইরকম। মহিলাদের প্রতি সামাজিক শোষণ ওদেশেও রয়েছে। রয়েছে কর্মক্ষেত্রে যৌন উৎপীড়নও।
চাকরি ছাড়ার পর অনুরাধা গড়ে তোলেন Service Women’s Action Network বা সংক্ষেপে SWAN। যে সংস্থাটি মার্কিন সেনাবাহিনীর ভিতরে চাপা পড়ে থাকা যৌন হয়রানির কাহিনীগুলি নিয়ে এসেছে সর্বসমক্ষে। এমনকী লড়াইয়ের ময়দানে মেয়েদের সমান অংশগ্রহণে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, অনুরাধার সংস্থার আন্দোলনের ফলে সেই চিত্রটাও গিয়েছে উল্টে।
জগদীশ ভাগবতী এবং পদ্মা দেশাই, এই দুই কৃতী অনাবাসী অর্থনীতিবিদের কন্যা অনুরাধা সেদিন কলকাতার বেশ কিছু কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মুখোমুখি হয়ে ব্যক্ত করেন নিজেদের কর্মজীবনের নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের অভিজ্ঞতার কথা। এমনকী সেদিন তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কিছু কথাও উঠে এসেছে ওই আলাপচারিতায়।
অন্য আরেকটি মেয়ের সঙ্গে প্রেম, পরে মায়ের চাপে সেই সম্পর্কে ইতি, এমনকী মায়ের প্রথম বিবাহ সব কিছুই জায়গা পেয়েছে সেদিনের ওই কথোপকথনে। বলছিলেন, মেয়েদের প্রতি অশালীন আচরণ রুখতে আইন আছে, কিন্তু সেই আইন প্রয়োগে সদিচ্ছার অভাব উত্তরোত্তর যৌন হয়রানির মতো অপরাধকে বাড়িয়ে তুলছে।
টিন এজে এক সাবওয়েতে ভয়াবহ যৌন নিপীড়নের শিকার অনুরাধা ওই ঘটনার পর ২৫ বছর মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন। বাবা-মায়ের কাছেও নিজের বেদনার কথা, কষ্টের কথা বলার ভাষা খুঁজে পাননি। বরং ক্রমশ নিঃসঙ্গতা এবং অবসাদে ডুবে গিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও মুখ খুলেছেন অনুরাধা। তাঁর পিতৃদেব নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রবল সমর্থক হলেও তিনি নাগরিক পঞ্জি সংক্রান্ত উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, যৌন সংখ্যালঘু এবং মহিলাদের প্রতি সুরক্ষার দায়িত্ব যে সংখ্যাগুরুদেরই নিতে হবে সেকথা জানাতেও পিছপা হননি। এমনকী অবরুদ্ধ কাশ্মীরে দীর্ঘ সময় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকা নিয়েও তাঁর উদ্বেগের কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
নারী স্বাধীনতা, জাতীয় সুরক্ষা, মানসিক স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয় নিয়ে মার্কিন পত্র-পত্রিকায় বহু লেখা প্রকাশিত হয়েছে অনুরাধার। পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার। সমাজকর্মী এই মেয়েটির আবার যোগ এবং মেডিটেশন শিক্ষিকা হিসাবেও সুখ্যাতি আছে। বর্তমানে নিউইয়র্কবাসী অনুরাধার এই বইটি সম্পর্কে আর এক লেখক ইলিয়ট অ্যাকারম্যান বলেছেন, ‘মার্কিন সেনাবাহিনীর কয়েক যুগের সংস্কৃতিতে যে পরিবর্তনের ঝড় এসেছে তাকে বুঝতে বা জানতে হলে অনুরাধা ভাগবতীর এই বইটা অবশ্য পাঠ্য।’