মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
সালটা ১৯৪৩-এর ৯ জুলাই, স্থান সিঙ্গাপুর, বক্তব্য রাখছেন এক মহান ব্যক্তিত্ব। তিনি বলছেন, আমি চাই একটা নতুন সর্বাঙ্গীণ মুক্তি সম্পন্ন সমাজ, এবং তার উপর একটা স্বাধীন রাষ্ট্র। যে সমাজে, যে রাষ্ট্রে নারী মুক্ত হইয়া পুরুষের সহিত সমান অধিকার ভোগ করিবে এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের সেবায় সমানভাবে আত্মনিয়োগ করিবে, যে সমাজে নারী পুরুষের মধ্যে কোনও বৈষম্য থাকিবে না।
এই বক্তব্য যাঁর তিনি ছিলেন মাতৃজাতির উপাসক, সুভাষচন্দ্র বসু।
সেদিন আকাশে ছিল কালো মেঘের ঘনঘটা, নেমেছিল বৃষ্টি। কিন্তু সেই প্রচণ্ড বৃষ্টিতেও কেউ সেই জনসভা ছেড়ে যাননি। সেই দিন সেই পরিপূর্ণ জনসভায় মানুষের ঢল নেমেছিল। সেই ব্যক্তিত্ব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের আর সেই রাষ্ট্রে নারী জাতিকে সম্মান জানাতে গড়া হবে নারী বাহিনী, যাঁরা দেশের জন্য ঝাঁসির রানির মতো লড়াই করবেন।
একসময় বক্তৃতা শেষ হল, নেতাজি নেমে এলেন মঞ্চ থেকে। এক বৃদ্ধা তাঁর দিকে এগিয়ে এলেন। ক্রমশ একেবারে সামনে এসে দাঁড়ালেন মহিলা। চোখে তাঁর অবাক দৃষ্টি। তারপর ঘটল এক অবিস্মরণীয় ঘটনা, সেই বৃদ্ধা নেতাজির পায়ে হাত দিতে গেলেন। নেতাজি কিন্তু আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন এমন ঘটনা ঘটবে। তিনি বৃদ্ধার হাত ধরে নিজের মাথায় রাখলেন এবং বললেন আপনি আমার মাতৃসম, আমায় আশীর্বাদ করুন। বৃদ্ধার চোখে জল, নেতাজিরও চোখে জল।
নারী জাতির প্রতি তাঁর যে প্রতিশ্রুতি তা সার্থক হল ১৯৪৩ সালের ২১ অক্টোবর। ওই দিন গঠিত হল আজাদ হিন্দ ফৌজ সরকার। আর সেই ফৌজের নারী সংগঠন হিসাবে গঠিত হল, ‘রানি ঝাঁসি রেজিমেন্ট’। তার দায়িত্বে এলেন সিঙ্গাপুরের এক বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। কর্মজীবন ত্যাগ করে নেতাজির আহ্বানে দেশমাতৃকার চরণে যিনি নিবেদিত হলেন তিনি লক্ষ্মী সেহগল।
তিনি ডাক দিলেন, ‘চলো, দিল্লি...’ চারদিকে ধ্বনিত হল ‘কদম কদম বাড়ায়ে যা’ -র মন্ত্র। নেতাজির আজাদ হিন্দ ফৌজে নারী, পুরুষ সমান অধিকারে অধিষ্ঠিত হলেন।
তথ্যসূত্র: নারী ও নেতাজি,