মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
রামায়ণ ও মহাভারতের কয়েকজন নারীর পরিণয় কথায় সেজে উঠবে আজকের আলোচনা।
দ্রৌপদীর পরিণয় কথা: দ্রৌপদী পাঞ্চালরাজ দ্রুপদের কন্যা। যজ্ঞ থেকে উৎপন্না তিনি তাই যাজ্ঞসেনী। তিনি পৌরাণিক সাহিত্যের একমাত্র নারী চরিত্র যে একই সময়ে পাঁচ পুরুষকে বিবাহ করেছিলেন।
অত্যন্ত মিষ্টভাষী, সুশোভন পাণ্ডবরা অজ্ঞাতবাসের সময়কালে ঘুরতে ঘুরতে উপস্থিত হয়েছেন পাঞ্চাল দেশে। তাঁরা ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে আশ্রয় নিলেন এক কুম্ভকারের বাড়িতে। সেই রাজ্যেই দ্রুপদ রাজার কন্যার স্বয়ংবর সভা অনুষ্ঠিত হবে। শুধু স্বয়ংবর সভা নয়। সেখানে অনুষ্ঠিত হবে এক কঠিন প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতার শর্ত হল জলে প্রতিবিম্ব দেখে শূন্যে ঘুরন্ত মাছের চোখে যে তির বিদ্ধ করতে পারবে তাকে কন্যা দান করা হবে। এই ঘোষণা শোনার পর নিজ নিজ বীরত্ব প্রমাণ করার অভিপ্রায়ে বিভিন্ন রাজ্য থেকে ক্ষত্রিয় শ্রেষ্ঠ সব রাজারা আসতে থাকলেন। রাজা দ্রুপদ আগন্তুক অতিথিদের যথাযোগ্য সংবর্ধনা জানালেন। সভামণ্ডপের সজ্জাও ছিল দেখবার মতো। শেষে দ্রৌপদী মহামূল্য অলঙ্কারে সুসজ্জিতা হয়ে, সুন্দর বস্ত্র পরে সুবর্ণমালা ধারণ করে সভামণ্ডপে উপস্থিত হলেন। ধৃষ্টদ্যুম্নর মেঘমন্দ্রিত স্বরে গমগম করে উঠল সভাস্থল। তিনি দ্রৌপদীকে বললেন, ‘এই বিক্রমশালী রাজারা তোমার জন্য লক্ষ্যভেদ করতে প্রবৃত্ত হবেন। এঁদের মধ্যে যিনি এই লক্ষ্যভেদ করতে পারবেন, তুমি তাঁকেই আজ বরণ করবে।’
প্রবল পরাক্রমশালী ও অধ্যবসায়শালী রাজপুত্ররা নিজেদের বিক্রম প্রকাশ করলেন। কিন্তু সেই বিশালাকৃতি ধনুতে গুণারোপণে ব্যর্থ হলেন। সেই সময়ে কুন্তীপুত্র মহাবীর অর্জুন সেই দুরূহ ধনুতে গুণারোপণের ইচ্ছে প্রকাশ করেন। এবং অনায়াস দক্ষতায় লক্ষ্যভেদ করলেন। প্রকাশ্য সভায় দ্রৌপদী অর্জুনের গলায় বরমালা পরিয়ে দেন। পাণ্ডবজননী এসব কিছুই জানতেন না। গোধূলি বেলায় অর্জুন বাইরে থেকে ডেকে বলেন, ‘মা দেখ আজ ভিক্ষায় এক অপূর্ব জিনিস পেয়েছি।’ মা কুটিরের ভেতর থেকে জবাব দেন,‘যা এনেছ তা পাঁচজনে মিলে ভোগ করো।’ কুন্তী না দেখে যা আদেশ দিলেন তারই পরিণতিতে দ্রৌপদীর পঞ্চপতি বা পাঁচস্বামী।
পতিব্রতা গান্ধারী: গান্ধার রাজ সুবলের কন্যা গান্ধারীর বিয়ে হয় ধৃতরাষ্ট্রের সঙ্গে। ভীষ্ম এবং তাঁর বিমাতা সত্যবতী কুরুবংশের সন্তান নিয়ে যথেষ্টই চিন্তায় ছিলেন। ধৃতরাষ্ট্র, পাণ্ডু ও বিদুর এই তিনজন জন্মাবধি ভীষ্মের কাছে প্রতিপালিত ছিলেন। ধৃতরাষ্ট্রের বংশ, যশ ও প্রতিপত্তি বিবেচনা করে সুলক্ষণা ও ধর্মপরায়ণা গান্ধারীকে ধৃতরাষ্ট্রের হাতেই সমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁর পিতা-মাতা। গান্ধারীর কাছে যখন খবর গেল তাঁর হবু স্বামী জন্মান্ধ, তখন ‘আমি পতিকে অতিক্রম করব না’ এই বলে নিজের দু’চোখ বেঁধে ফেললেন তিনি। স্বামীর প্রতি গান্ধারীর আত্মনিবেদন, যে স্বভাব, তাঁর ন্যায়বোধ শেষ দিন পর্যন্ত আপন স্বাতন্ত্র্যে সমুজ্জ্বল ছিলেন তিনি।
মন্দোদরীর পরিণয়: সোনার মতো গৌরবর্ণা। অপরূপা এক নারী, যার জন্ম দৈত্য বংশে স্বর্গের সুন্দরী অপ্সরা হেমার গর্ভে, তিনি মন্দোদরী। একদিন রাবণ বনে কন্যাসহ ময়দানবকে দেখে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি কে? উত্তরে ময় জানালেন, দেবতাদের থেকে হেমা নামে এক অপ্সরাকে স্ত্রীরূপে পেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর দুর্ভাগ্য সে একদিন স্বর্গে ফিরে যায়। তাই ময়দানব মনঃকষ্টে সংসার ছেড়ে এখন বনে এসেছেন। কন্যার জন্য উপযুক্ত পাত্রের সন্ধান পেয়ে আদরের সন্তানকে পাত্রস্থ করতে পারলেই তাঁর নিশ্চিন্তি। এরপর ময়দানব রাবণের কুল, পরিচয় জানতে চান। মহর্ষি বিশ্বশ্রবার পুত্র ও রাক্ষস রাজা দশাননের পরিচয় পেয়ে খুব খুশি হয়ে সানন্দে রাবণের হাতে কন্যা সম্প্রদানের ইচ্ছে প্রকাশ করেন ময়। না বলার কোনও প্রশ্নই নেই। কেন না অপরূপা লাবণ্যময়ী মন্দোদরীকে দেখে রাবণ প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়েছিলেন। অতএব শুভস্য শীঘ্রম। ওই বিজন বনেই চার হাত, চার চোখ এক হলো। যৌতুক স্বরূপ রাবণ পেলেন এক তপোলব্ধ যোগশক্তি— শক্তিশেল। এরপর রাবণ স্ত্রী মন্দোদরীকে নিয়ে ফিরে আসেন লঙ্কায়। রাবণের জীবনের সঙ্গে, লঙ্কা রাজ্যের সঙ্গে, পাটরানি হিসেবে মিশে গেল একটাই নাম—মন্দোদরী। সীতার পরিণয় কথা: জনক রাজার কন্যা জানকী বা সীতা ছিলেন পরমা সুন্দরী। শস্যক্ষেত্র থেকে কুড়িয়ে পাওয়া গিয়েছে অতএব তিনি পৃথিবীর কন্যা। তাই তিনি জানকী। জনকরাজ সীতার বিয়ের উপযুক্ত পাত্র সন্ধানে মন দিলেন। দক্ষযজ্ঞের সময় মহাদেব যে ধনু ব্যবহার করেছিলেন, সেই ধনু পূর্বপুরুষদের হাত ঘুরে তাঁর হাতে এসে পড়েছিল। জনক প্রতিজ্ঞা করেন, যে এই হরধনুতে জ্যা পরাতে পারবে তাঁর সঙ্গেই কন্যার বিয়ে দেবেন। বিশ্বামিত্র সীতার স্বয়ংবরে দশরথের দুই পুত্রকে নিয়ে যখন উপস্থিত হন। রাজা জনক এঁদের রূপে মুগ্ধ হন। সীতার স্বয়ংবর সভায় অনেক রাজা উপস্থিত ছিলেন। প্রাণপণ চেষ্টায় কেউই ধনুক নাড়াতেও পারলেন না। অবশেষে রাম ওই সুদৃঢ় ধনু হাতে নিয়ে অবলীলায় দ্বিখণ্ডিত করেন এবং শর্তানুযায়ী হরধনু ভঙ্গ হলে সীতা রামচন্দ্রের গলায় তাঁর বরমালা পরিয়ে দেন। তাঁদের শুভ পরিণয় শেষ হয়।
তনুশ্রী কাঞ্জিলাল মাশ্চরক