মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
পবিত্র কোরানের ভাষায় বিবাহ মানবজীবনের একটি বলিষ্ঠ অঙ্গীকার। নিকাহ পড়ানো এবং খোৎবা পাঠ অবশ্যই বিয়ের প্রধান অঙ্গ ও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিধি। একজন মৌলবি, অথবা আরবি ভাষায় শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত নিকাহ পড়ান এবং খোৎবা পাঠ করেন। ওহাব সাহেব নিকাহ পড়ানো এবং শাস্ত্র বিষয়ে সুপণ্ডিত। ওঁর কথায় ‘পাত্র এবং পাত্রীর পূর্ণ সম্মতি ছাড়া ইসলামে বিয়ে সম্পন্ন হয় না। বিধিটা হল প্রথমত, বিয়ের মজলিসে পাত্রকে পাত্রীর নাম-ঠিকানা এবং পিতৃ পরিচয় জানিয়ে সম্মতি নেওয়া হয়। কবুল করার পর একজন উকিল এবং দু’জন সাক্ষী নিয়ে পাত্রীর মতামত নিতে যাওয়া হয়। পাত্রী আলাদা থাকে, পাত্রী কবুল না করলে অর্থাৎ বিয়েতে সম্মত না হলে বিবাহ অসম্পূর্ণ। বিধি অনুসারে কেবল কুমারী পাত্রী নয়, বিধবা বা বিচ্ছেদ প্রাপ্ত পাত্রীর ক্ষেত্রেও নারীর সম্মতি ছাড়া বিবাহ সম্পন্ন হয় না।’ নিকাহ পড়ানোর পর খোৎবা পাঠ করা হয়। ওহাব সাহেব বলেন, উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে খোৎবা পাঠ, নিকাহ কবুল হওয়ার পর অনুষ্ঠিত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খোৎবা হল আরবি ভাষায় লেখা একটি বক্তৃতা। যার বিষয়বস্তু— নবদম্পতির যেন আমৃত্যু ভাব-ভালোবাসা থাকে এবং তাদের ভবিষ্যৎ যেন সুখময় হয়। এই ধরনের আশীর্বাদ সহ প্রার্থনা থাকে খোৎবাতে। ওহাব সাহেব জানালেন, ‘সরকারি আইন অনুসারে প্রত্যেক থানায় একজন ম্যারেজ রেজিস্ট্রার নিয়োগ করা হয়। ১৮৭৬ সাল থেকে মুসলিম বিয়ের রেজিস্ট্রেশন শুরু। এই নথিভুক্ত করার কাজ যিনি করেন তাঁকে কাজি বলা হয়। কাজির যোগ্যতা অর্জন করতে হলে তাঁকে ন্যূনতম উর্দু ভাষায় ফাজিল ডিগ্রিপ্রাপ্ত হতেই হবে। উর্দু ও আরবি ভাষায় জ্ঞান থাকার সঙ্গে সঙ্গে শরিয়ত সম্পর্কেও তাঁর বিশেষ জ্ঞান থাকা আবশ্যক। ওহাব সাহেবের মুসলিম সমাজের প্রতি বিশেষ অনুরোধ, ‘কোনও বিয়েতে অতিরিক্ত ব্যয় যেন না করা হয়। আজকাল অনেক সময় বিনোদন ও জাঁকজমকের জন্য অনেক কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা ধার করেও খরচ করেন, সেটা অনুচিত মনে হয়। তাছাড়া কখনও কখনও অন্য থানা নিবাসী কোনও মৌলবি ভিন্ন অঞ্চলের বিবাহবাসরে উপস্থিত হয়ে নিকাহ পড়াতে দেখি সেটাও খানিকটা অবৈধ কাজ।’ এই সমস্ত না হলে, বিয়ের অনুষ্ঠান সাদামাটা অনাড়ম্বর হলেও স্মরণীয় করা যায়।
মুসলিম বিয়ের সমস্ত স্ত্রী-আচারসহ প্রায় সকল রীতি-রেওয়াজ, যা কিছু পালন করা হয়, অন্য ধর্মের এবং বিশেষ করে সেই অঞ্চলের অনুকরণে করা হয়। সব রিচুয়ালসেই আঞ্চলিক প্রভাব থাকে। পশ্চিমবাংলার মুসলিমদের বিয়ের অনুষ্ঠানে যে সমস্ত স্ত্রী-আচার থাকে তা মূলত বাঙালি হিন্দুদের রীতি-রেওয়াজ। তেমনই মহারাষ্ট্র বা অসমের বিবাহবাসরে সেখানকার স্ত্রী-আচার পালন করাই প্রচলিত প্রথা। মুসলিম বিয়েতে যেমন শাস্ত্রবিধি সংক্ষেপিত তেমনই স্ত্রী-আচারের তেমন কোনও উদ্যাপন রীতিও নেই বা আগে ছিল না। কিন্তু পাশাপাশি থাকার কারণে বিয়ের মতো আনন্দ অনুষ্ঠানে যোগ হয়েছে বেশ কিছু স্ত্রী-আচার। সেই সঙ্গে উৎসবের জাঁকজমক ও বিনোদন আজকাল সামর্থ্যানুসারে প্রায় প্রত্যেক মুসলিম বিয়েরই অঙ্গ হয়েছে। তবে আঞ্চলিক রীতি রেওয়াজ পুরোপুরি অনুসরণ করা হয় না। কিছু পার্থক্য থাকে। যে সব রীতি-রেওয়াজ বা স্ত্রী-আচারে অন্য ধর্মীয় শাস্ত্রবিধি আছে সেগুলি বাদ দিয়ে কেবল হই হুল্লোড় এবং নিছক মজা আনন্দ উপভোগ করা হয়। মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত প্রায় সমস্ত বিবাহবাসরে স্ত্রী-আচার এখন দর্শনীয় বিষয় হয়ে উঠেছে।
স্ত্রী-আচারের মধ্যে বরের বাড়ি থেকে তত্ত্ব পাঠানো হয়, আবার কনের বাড়ি থেকেও তত্ত্ব আসে বউভাতের দিন কনেযাত্রীর সঙ্গে। খানিকটা ফুলশয্যার তত্ত্বের মতোই। এছাড়া ফুল দিয়ে সাজানো হয় বিবাহ মণ্ডপ এবং অনেক সময় মালাবদলও হয় মিলন অনুষ্ঠানে। এই মিলন কিছুটা যেন সম্প্রদানের মতো। এই অনুষ্ঠানগুলো উভয়পক্ষই উপভোগ করে এবং খুশির আমেজ দ্বিগুণ হয়ে যায়।
অবাঙালি মুসলিম বিয়ের রীতি-রেওয়াজে বেশ কিছু পার্থক্য আছে। স্ত্রী-আচারও সেখানে ভিন্ন। যেমন লখনউ বা রাজস্থান অথবা দক্ষিণ ভারতের মুসলিম বিয়ের স্ত্রী-আচারে অবশ্যই ওখানকার স্থানীয় প্রভাব থাকে। আবার তুরস্কের কোনও বিয়েতে দেখা যায় একেবারেই পাশ্চাত্যের অনুকরণে আচার-অনুষ্ঠান। এমনকী পোশাক-পরিচ্ছদও ওয়েস্টার্নাইজড। যেমন কোনও জাতির খাবার সম্পর্কে খাদ্যাভ্যাসই আসল কথা তেমনই বিয়ের স্ত্রী-আচার বা রিচুয়ালসের ক্ষেত্রেও সেই অঞ্চলের প্রভাব বিশেষভাবে দেখা যায়।
স্ত্রী-আচার ছাড়া বিবাহবাসর সত্যি ভীষণ অনাড়ম্বর অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে। তাই মুসলিম বিয়েতে নানান স্ত্রী-আচার পালন করা হয়। বেশ কিছু রীতি-রেওয়াজও যুক্ত হয়েছে বিবাহ অনুষ্ঠানে। তবে অনাবশ্যক ব্যয় পরিহার করাই কর্তব্য।