মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
রোম দেশে শুরু হয়েছিল ভ্যালেন্টাইন’স ডে
ভ্যালেন্টাইন’স ডে-র উৎপত্তি নিয়ে সামান্য বিতর্ক রয়েছে। কেউ বলেন রোম দেশের বিখ্যাত উৎসব লুপারকালিয়া থেকেই এই দিনের উৎপত্তি। রোমান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী লুপারকালিয়া প্রতি বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি পালন করা হতো। উৎসবের রীতি অনুযায়ী রোমের রাস্তাঘাটে ওইদিন পুরুষ ও নারী দিগম্বর সেজে ঘুরে বেড়াত। রোমানদের বিশ্বাস ছিল ওই দিন পোশাক না পরলে নাকি সন্তান সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আর পুরুষ ও নারীর অমন খোলামেলা ঘোরাঘুরি থেকেই পরবর্তীকালে এই দিনটি প্রেমের দিন হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে এমন ধারণা যে খুব কষ্টকল্পিত তাও নয়। দ্বিতীয় ধারণা অনুযায়ী, রোমের রাজা দ্বিতীয় ক্লডিয়াস নিজের সেনাবাহিনী জোরদার করতে তরুণ সমাজে বিবাহ নিষিদ্ধ করে দেন। কেন না, অবিবাহিত পুরুষের পিছুটান বলে কিছুই থাকবে না। ফলে নিঃশেষে প্রাণ দান করে অমর হতেও তাদের কারও দ্বিধা থাকবে না। কিন্তু আইন যখন গড়া হবে তখন তার কিছু বিরোধিতাও যে আসবে তাতে আর আশ্চর্য কী? এবার বিরোধিতা করলেন চার্চের এক পাদরি, সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। তিনি চুপি চুপি তরুণ সমাজে বিবাহরীতি চালু করলেন। ধরাও পড়লেন রাজার হাতে। আর রাজাদেশে তাঁর মৃত্যুদণ্ড হল। ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে মারা হয়। প্রেমের উপাসকের মৃত্যুদিনটিকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে ওই দিনেই প্রেম দিবসের ঘোষণা করা হয়।
প্রায় ৬০০ বছরের পুরনো রীতি
সুদূর রোম থেকে মার্কিন দেশেও ক্রমশ ভ্যালেন্টাইন’স ডে জনপ্রিয় হয়ে উঠল। তবে সেই জনপ্রিয়তা মার্কিন স্কুলের ক্লাসরুমেই সীমাবদ্ধ ছিল বহুদিন। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা প্রিয় বন্ধু বা বান্ধবীকে প্রেমের কবিতা ও কার্ড উপহার দিত ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ। এই কবিতা লেখার প্রথা চালু হয়েছিল ৬০০ বছরের বেশি আগে। শোনা যায় অরলিয়ানসের ডিউক চার্লসকে যখন টাওয়ার অব লন্ডনে বন্দি করা হয় তখন তিনি তাঁর স্ত্রীর জন্য একটি প্রেমের কবিতা লিখেছিলেন। সেটা ১৪১৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। সেই থেকেই প্রেমের কবিতা লেখার চল যুবসমাজেও ছড়িয়ে পড়ে।
এসথার হল্যান্ড ও ভ্যালেন্টাইন’স ডে
এসথার হল্যান্ড ছিলেন চিত্রকর। টাইম পত্রিকায় কাজ করতেন তিনি। সময়টা এই ১৮৫০ সাল হবে। হল্যান্ড ভ্যালেন্টাইন’স ডে বিষয়ে নানারকম ছবি এঁকেছিলেন। ছবিগুলোয় প্রেমের চেয়ে হাস্যরসই বেশি ধরা পড়েছিল। তবু মার্কিন দেশে হল্যান্ডের সেইসব ছবি দারুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। জনপ্রিয়তা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে সেইসব ছবির একটা বাজারও তৈরি হয়। শোনা যায় সেই সময় হল্যান্ডের ছবির এতই চাহিদা হয়েছিল, তিনি ১ লক্ষ ডলারে তাঁর ছবি বিভিন্ন মার্কিন পত্র পত্রিকায় বেচেছিলেন। আর তার পর থেকেই এসথার হল্যান্ড ‘মাদার অব আমেরিকান ভ্যালেন্টাইন’ হিসেবে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন।
হৃদয়ে লেখো নাম...
ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে ‘To wear your heart on your sleeves’. বাক্যটা আকাশ থেকে পড়েনি। এই বাক্যটির সঙ্গেও ভ্যালেন্টাইন’স ডের একটি রীতি জড়িয়ে গিয়েছে। বস্তুত সেই রীতি থেকেই উঠে এসেছে প্রবাদটি। লস অ্যাঞ্জেলিস টাইমসের খবর অনুযায়ী মধ্যযুগে পুরুষরা নাকি নিজের প্রিয় নারীটির নাম একটা চিরকুটে লিখে তা শার্টের হাতায় গুঁজে রাখতেন। তারপর সেই চিরকুট শার্ট থেকে বার করে পরা হতো। সেইমতো কারও প্রেম পরিণতি পেত কেউ বা প্রত্যাখ্যাত হতেন। এই যে শার্টে হৃদয়ের কথা লিখে রাখা, সেই থেকেই ইংরেজি প্রবাদ বাক্যটির জন্ম হয়েছে। এখন এই বাক্যের অর্থ অবশ্য আর এতটা আক্ষরিক নেই। কারও মনের ভাব তাঁর চোখে মুখে ধরা পড়লে তাঁর সম্বন্ধে এই বাক্যটি ব্যবহার করা হয়।
হৃদ মাঝারে
আজকাল প্রেমের সিম্বল হিসেবে হৃদয়ের ছবি আঁকা হয়। তবে চিরকালই যে এমন রীতি ছিল তা নয়। বস্তুত প্রেমের সঙ্গে হৃদয়কে জুড়ে দেওয়ার কৃতিত্বটা পুরোপুরিই দেওয়া উচিত ফরাসি ও ইতালিয়ান শিল্পীদের। আগে হৃদয় সংক্রান্ত সব কিছুই মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত ছিল। অর্থাৎ বুদ্ধি ও স্মরণশক্তির সঙ্গেই হৃদয়ের ছিল নিবিড় যোগাযোগ। কিন্তু পরবর্তীকালে ফরাসি ও ইতালিয়ান চিত্রকররা প্রেমের ছবিতে লাল হৃদয়ের এঁকে হৃদয়ের সঙ্গে প্রেমের পরিচয় ঘটালেন। তারপর থেকে যা-ই প্রেমজ, তা-ই হৃদয়সংক্রান্ত। এই বদলটা ঘটেছিল আনুমানিক ১৪ শতাব্দী নাগাদ।
কিউপিডের তির আর লাল গোলাপ
কিউপিডের সঙ্গে পরিচয় আছে নিশ্চয়ই। তিনি রোমান দেবী ভিনাসের পুত্র। বিষের আঠা মাখানো তিরধনুক হাতে নিয়ে, পিঠে ডানা লাগিয়ে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঘুরে বেড়ায় আর যুবসমাজকে লক্ষ্য করে তির ছোঁড়ে কিউপিড। কিউপিডের তির গায়ে লাগলেই ব্যস, প্রেম অবশ্যম্ভাবী! আর প্রেম মানেই লাল গোলাপের গুচ্ছ। কিন্তু কেনই বা অন্যান্য গোলাপ প্রেমের মধু থেকে বঞ্চিত হল কখনও কি ভেবে দেখেছেন? কারণটাও রোমান দেবদেবীতেই আটকে আছে। রোমান প্রেমের দেবী ভিনাসের প্রিয় ফুল লাল গোলাপ। তাই তো লাল গোলাপই প্রেমের প্রতীক হিসেবে দেশে দেশান্তরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
উপহারের নানারকম
ভ্যালেন্টাইন’স ডে উদ্যাপন হবে অথচ উপহারের উল্লেখ থাকবে না, তাও আবার হয় নাকি? আমাদের দেশে ক্রমশ ভ্যালেন্টাইন’স ডে-র উপহার কার্ড আর ফুল ছাড়িয়ে হীরের আংটি, পেনডেন্ট ইত্যাদিতে গিয়ে ঠেকেছে। আর বিদেশে? সেখানে কিন্তু ভ্যালেন্টাইন’স ডে উপলক্ষে এখনও সবচেয়ে জনপ্রিয় উপহার চকোলেটের বাক্স। ইতিহাস অনুযায়ী রিচার্ড ক্যাডবেরি সাহেব প্রথম ভ্যালেন্টাইন’স ডে-র উপহারের তালিকায় চকোলেটের বাক্সের নাম তুলেছিলেন। ১৮৬৮ সালে প্রথম রিচার্ড ক্যাডবেরির তৈরি চকোলেটের বাক্স উপহার দেওয়া হয় ভ্যালেন্টাইন’স ডে-তে। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত বিদেশে প্রেমের দিনের সেরা উপহার চকোলেট। তবে ফ্লেভার অবশ্যই অনেক বদলেছে। বদল হয়েছে চকোলেটের আকৃতিও। এখন নাকি ক্যারামেল ফ্লেভারড নাট ফিলড চকোলেট ভ্যালেন্টাইন’স ডে-র উপহার হিসেবে বিশেষ জনপ্রিয়। এছাড়াও বিদেশে অনেকেই বিশেষ এই দিনে নিজের প্রিয়জনকে কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দিতে চান। এগুলোকে বলে ‘এক্সপিরিয়েন্স গিফট’। এই যেমন কোনও কনসার্টের টিকিট বা বিশেষ ভ্রমণের বুকিং উপহার দিলেন প্রিয় মানুষটিকে। বিদেশে প্রেমের দিনের এমন মুহূর্ত উপহার পাওয়ার জন্য উদ্গ্রীব থাকে যুবসমাজ।