মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
তিনি যখন বি টেক-এর শেষ বছরের পড়াশোনায় ব্যস্ত তখনই সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি খবরে তাঁর চোখ আটকে যায়। তিনি জানতে পারেন, অন্ধ্রপ্রদেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া শহরটির নাম প্রকাশম জেলার অঙ্গোল। কিন্তু এ জায়গাই যে তাঁর জন্মভূমি! এ খবর পড়ে স্বাভাবিকভাবেই ব্যথিত ও বিচলিত হন তাঁর মতো সংবেদনশীল একজন মানুষ।
‘শুধুমাত্র সরকারের ওপর সব দোষ না চাপিয়ে আমি নিজেও কিছু করার সিদ্ধান্ত নিলাম আমার শহরের উন্নয়নের জন্য। গবেষণা চলাকালীন আমি বেশ বুঝতে পারলাম অপরিচ্ছন্নতা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আমার শহরের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ। বেঙ্গালুরুর ‘দ্য আগলি ইন্ডিয়ান ইনিশিয়েটিভ’-এর ব্যাপারে আমি আগেই জেনেছিলাম। এটি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যারা রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ করে। ভাবলাম, এ রকম কি আমার অঙ্গোলেও করা যায় না? কিন্তু বাধা হল লোকবল। এসব কাজের জন্য প্রচুর মানুষ দরকার। কোথায় পাব এত স্বেচ্ছাসেবক?’ এসব ভেবে যখন সারা হচ্ছিলেন পরিবেশ-বান্ধব এই তরুণী, তখন তাঁর বাবা তাঁকে সমর্থন জানালেন, সঙ্গে রইল আশ্বাস। বন্ধুদের কাছে প্রস্তাব তুলতেই ৮০ শতাংশ মুখ ফিরিয়ে নিল। তাঁর বাবা বললেন, ‘কেউ কেউ তো রাজি হয়েছে, এই যথেষ্ট।’
২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর ডক্টর এ পি জে আব্দুল কালামের জন্মদিনে ১০ জন সঙ্গীকে নিয়ে অঙ্গোলের একটি উদ্যান পরিষ্কার করার কাজে নেমে পড়লেন তেজস্বী। যাত্রা শুরু করল ‘ভূমি ফাউন্ডেশন’। প্রথম প্রথম মানুষজন তার এহেন কর্মযজ্ঞ নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করত। কিন্তু তিনি যে ‘তেজস্বী’। কাজেই উত্তর দিলেন। কাজ চালিয়ে যেতে লাগলেন এক গভীর বিশ্বাসে। শহরের দেয়ালে দেয়ালে, গাছে গাছে টাঙানো সমস্ত পোস্টার, ফ্লেক্স খুলে নেওয়া হল, সরানো হল জঞ্জালের স্তূপ, রাস্তাঘাটের চেহারা বদলে গেল কিছু মানুষের পরিশ্রম আর উদ্যমে। নেতৃত্বে তেজস্বী। শুরু হল ‘ওয়ান গোল, ক্লিন অঙ্গোল’ প্রকল্প।
একটাই লক্ষ্য, প্রিয় অঙ্গোলকে পরিচ্ছন্ন, সুন্দর করে তোলা। অনেক বছর ধরে যে উদ্যানগুলি নোংরা পুতি-গন্ধময় হয়ে পড়েছিল সেগুলি এখন পরিষ্কার। যারা এ কাজ দেখে বিদ্রুপ করত তারাই এখন তেজস্বীকে দেখে জোড়হাত করে।
প্রথম দিকে এই কাজে মেয়ে তেজস্বীকে অর্থ সাহায্য করতেন তাঁর বাবা। তবে এখন তেজস্বী চাকরি পাওয়ার পর তাঁর আর বাবার অর্থের প্রয়োজন হয় না। তাঁর নিজের রোজগারই যথেষ্ট। তেজস্বীর কথায়, ‘আমার আয়ের ৭০ শতাংশ এই কাজে ব্যয় করি।’