শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহবৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে মানসিক ... বিশদ
মা আনন্দময়ীর আগমন। বর্ষে বর্ষে আসেন তিনি। আমাদের ঘরে-বাইরে তাঁর ছড়ানো সংসারে। শারদীয়া দেবীর আবির্ভাবের মধ্য দিয়েই জাতির আত্মশক্তির উদ্বোধন। ব্রত-পার্বণ উৎসবময় ভাবালোকে মাতৃমূর্তির এই আবির্ভাব। আমাদের এই দুর্গাপূজাকে ‘মহাপূজা’ নামে উল্লেখ করা হয়। সমস্ত দেবদেবীর অর্চনা ‘পূজা’ হিসাবে কথিত। তাহলে শুধুমাত্র দুর্গাপূজা ‘মহাপূজা’ রূপে কেনই বা বিঘোষিত? প্রভূত দ্রব্য উপকরণে ষোড়শোপচারে পূজার সঙ্গে যদি মহাস্নান, বলি আর হোম থাকে তাহলে সে পূজা ‘মহাপূজা’ হিসাবে সূচিত হবে। বিভিন্ন তন্ত্রশাস্ত্রে বলা হয়েছে, ‘দুর্গাপূজা চতুঃকর্মময়ী স্নপন পূজন বলিদান হোমরূপা’।
মহাবিদ্যা মহামায়া মহাজননীর মহাপূজায় প্রথমেই আসে স্নানের কথা। মা দুর্গার নির্বাহিত স্নানটি যে মহাস্নান নামে কথিত তা পূর্বেই বলা হয়েছে। ভারতের নদ-নদী, সাগর-সরোবরের জল, নানা মঙ্গল্য দ্রব্য, পতিতার গৃহের মৃত্তিকা সহ বিভিন্ন স্থানের মাটি, পঞ্চগব্য, পঞ্চশস্য, পঞ্চরত্ন ইত্যাদি ও নানা ধরনের সুগন্ধী তেল সহ ৭৫ প্রকারের উপাদান মহাস্নানে প্রয়োজনীয়। ‘ওঁ আত্রেয়ী ভারতী গঙ্গা যমুনা চ সরস্বতী’ ইত্যাদি মন্ত্রে সকল নদী ও সাগরের জলে যখন মহামাতার মহাস্নান শুরু হয় তখন আমাদের মনে হয়, এ যেন সারা ভারতের এক মিলন বন্ধন। এই মহাস্নানের মন্ত্রগুলি এত সজীব ও মর্মস্পর্শী যে এর তাৎপর্য অনুধাবন করতে পারলে জাতীয়তা, সংস্কৃতি ও একতা বোধের উপলব্ধি আমাদের প্রবুদ্ধ করে তোলে। রাজরাজেশ্বরীর এই চমৎকারী ও বিস্ময়কর অভিষেককালে বিভিন্ন রাগরাগিণীতে গীত ও বাদ্য বাজানোর বিধি মন্ত্রে আলোকিত। যেমন মালব রাগে বিজয় বাদ্য, ললিত রাগে বেদবাদ্য, বিভাস রাগে দুন্দুভি বাদ্য, ভৈরব রাগে ভীমবাদ্য, কেদার রাগে ইন্দ্রাভিষেক বাদ্য, বারারি রাগে শঙ্খবাদ্য, বসন্ত রাগে পঞ্চশব্দ বাদ্য ও ধানসি রাগে ভৈরব বাদ্য।
মহামায়ার এই পরমপবিত্র স্নানের মধ্য দিয়ে জাতির সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় চিন্তার উন্নতমনা তত্ত্বটি অতি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছে।
পঞ্চশস্যের জলের দ্বারা দেবীর অভিষেকে আমাদের কৃষি চিন্তার ধারা উচ্চারিত হয়েছে। পঞ্চরত্নের দ্বারা মহাস্নান ধন-সম্পত্তি বৃদ্ধির বার্তাকে বহন করে আনে। গোষ্ঠ মৃত্তিকা মিশ্রিত জল ও দধি দুগ্ধ সহ পঞ্চামৃত জলে স্নান গো-সম্পদের প্রয়োজনের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দেয়। মহাস্নানের আরেকটি বিশেষ ধারা বনসম্পদের স্মারকরূপে প্রকাশিত। বকুল, কুল, জাল, শিমুল ও বেড়েলা এই পঞ্চকষায়ের সমন্বয় বৃক্ষরোপণের উপযোগিতার স্বরূপ প্রদর্শিত।
মহাস্নানের দ্রব্যসমূহের মধ্যে আছে ‘বেশ্যাদ্বারের মৃত্তিকা’। সমাজে বারবনিতাও দেবী বন্দনায় বর্জিত নয়। বিশ্বশক্তির কাছে নেই কোনও ভেদাভেদ। সকলেরই সমান অধিকার।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ভাষায়: ‘মা’র অভিষেকে এস এস ত্বরা
মঙ্গলঘট হয়নি যে ভরা
সবার পরশে পবিত্রকরা তীর্থ নীরে
এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।’
চৈতন্যময় নন্দ