প্রায় সম্পূর্ণ কাজে শেষ মুহূর্তে বাধা পড়ায় বিচলিত হয়ে পড়তে পারেন। সন্তানের বিদ্যা শিক্ষার বিষয়ে ... বিশদ
বসন্ত এসে গিয়েছে? না! সে তো শুধু আর গানে আটকে নেই। সরস্বতী পুজো দরজায় কড়া নাড়ছে মানেই বাঙালির বসন্তকালের বাঁশি। শীতকালীন পার্টি, বিয়েবাড়ি, পিকনিক— নানাবিধ অনুষ্ঠানে চুলের বাহারি কায়দা করে কাটল কয়েকদিন। বসন্তের আমেজে নতুন করে যত্ন করতে হবে। কারণ সামনেই আসছে গ্রীষ্ম। তার প্রস্তুতি শুরু করতে হবে এখন থেকেই। যত্নের সাধারণ কিছু উপায় বাতলে দিলেন হেয়ার এক্সপার্ট অভিরূপ নন্দী।
তেলে চুল তাজা
প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা চলে প্রতিনিয়ত। চুল এবং মাথার তালুও হাওয়াবদলের সঙ্গে নিরন্তর মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টাই করে। যত্নের প্রথম ধাপে মনে করুন সেই প্রাচীন প্রবাদ ‘জলে চুন তাজা, তেলে চুল তাজা’। অভিরূপ জানালেন, প্রতিদিন চুলে তেল লাগাতে পারেন। কিন্তু তেল সারা রাত লাগিয়ে রাখবেন না। মনে রাখতে হবে, তেল মাথার তালুর জন্য। নারকেল তেল সহ যে কোনও রকম তেল হতে পারে, যা মাথার তালুতে গিয়ে কাজ করবে। অভিরূপের কথায়, ‘তেল লাগানোর কারণটা বুঝতে হবে। যাতে চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কিন্তু একইসঙ্গে যখন আমরা চুলে তেল লাগিয়ে সারা রাত রাখছি, তাতে ঘাম হয়। এই সময় থেকেই ঘাম বেশি হতে শুরু করে। ফলে মাথার তালুতে একটা চটচটে ভাব তৈরি হয়। সেটা থেকে খুশকি হতে পারে। চুল পড়তে পারে। সপ্তাহে একদিন তেল লাগিয়ে চুলে ২-৩ ঘণ্টা রেখে দিন। তাতেই কাজ হবে।’ মাথায় তেল লাগানোর পর মাসাজ গুরুত্বপূর্ণ। যাতে তেলের মধ্যে থাকা উপাদান ত্বকের ভিতরে প্রবেশ করে, রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, হেয়ার ফলিকলগুলো যাতে অ্যাকটিভ থাকে, সেজন্য অয়েল মাসাজ দেওয়া হয়। সেটা পেশাদারের হাতে হলেই ভালো বলে জানালেন তিনি।
রোদ্দুর থেকে সাবধান
আবহাওয়ার পরিবর্তনে সবথেকে অস্বস্তি হতে পারে ঘাম নিয়ে। তাই একদিকে রোদ্দুর অন্যদিকে স্টাইলিংয়ের ক্ষেত্রে হিট এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন অভিরূপ। তিনি জানালেন, রোদ্দুরে ঘুরে যদি আপনাকে কাজ করতে হয়, প্রতিদিন বাইরে বেরতে হয়, তখন চুল পনিটেল করে, বিনুনি করে বা বেঁধে রাখুন। দরকারে টুপি ব্যবহার করুন। এতে সূর্যের তাপে ক্ষতির পরিমাণ কমে। গরমে ঘাম হবেই। সেই ঘাম চুলে মিশলে তা আরও বেশি রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে যায়। ফলে চুল বেঁধে রাখলে ঘামের থেকে ক্ষতির সম্ভাবনা কমবে। গরমে চুলকে আর্দ্র রাখতে হবে। যাতে চুলের শুষ্ক ভাব কমাবে। পাশাপাশি অত্যধিক রোদের তাপ এবং আর্দ্র আবহাওয়া থেকেও চুলকে বাঁচাবে।
সারা বছরই এখন উৎসবের মরশুম। কিন্তু এই বসন্ত থেকেই ‘হিট স্টাইলিং’ সীমিত করার কথা জানালেন বিশেষজ্ঞ। ‘গরমের সময় আয়রনিং, ব্লো ড্রাই, যে কোনও থার্মাল টুল এড়িয়ে চলুন। হাইড্রেটিং শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এই সময়টা গরম জল এড়িয়ে চলুন’, বললেন অভিরূপ।
অ্যালোভেরা, আমলার গুরুত্ব
চুলের যত্নে বড় ভূমিকা রয়েছে শ্যাম্পুর। কোন পদ্ধতিতে শ্যাম্পু করছেন, তা গুরুত্বপূর্ণ। অভিরূপের মতে, প্রথমবার শ্যাম্পু করলে ফেনা না হলে দু’বার শ্যাম্পু করুন। যাতে মাথার তালুর চটচটে বিষয়টা ধুয়ে বেরিয়ে যায়। আবার শুধু শ্যাম্পু করলে চুল রুক্ষ্ম হয়ে যাবে। ফলে কন্ডিশনার লাগাতেই হবে। প্রথমে খুশকি নির্মূল করে, এমন শ্যাম্পু তালুতে লাগান। ধুয়ে ফেলুন। এরপর সাধারণ শ্যাম্পু চুলে লাগান। ফেনা হলে ধুয়ে ফেলুন। স্ক্যাল্প এবং চুলে দু’রকমের সমস্যা থাকলে দু’রকম শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় তাড়াহুড়োতে কন্ডিশনার অনেকে তালুতে লাগিয়ে দেয়। এতে চুল তেলতেলে হয়ে যাবে। কন্ডিশনার চুলের গোড়া থেকে তিন থেকে চার ইঞ্চি ছেড়ে নিচের দিকে লাগান।’ আবহাওয়ার পরিবর্তনের সময় প্রাকৃতিক উপাদানে সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে বললেন বিশেষজ্ঞ। অ্যালোভেরা, আমলা, শিকাকাই যুক্ত শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার যে কোনও ধরনের চুলে ভালো কাজ করবে। অ্যালোভেরা জেলও চুলে লাগাতে পারেন। সংবেদনশীল, র্যাশ প্রবণ স্ক্যাল্পে ভালো কাজ দেয়। কন্ডিশনার হিসেবে অ্যাপেল সিডার ভিনিগারও এসময় ব্যবহার করতে পারেন। ঘরোয়া মাস্কও খুব উপকারী। ডিমের কুসুম এবং মধু মিশিয়ে তৈরি মাস্ক চুলে লাগিয়ে শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ঢেকে রাখুন আধ ঘণ্টা। এরপর হাইড্রেটিং শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিলেই উজ্জ্বল লাগবে।
পুষ্টির ডায়েট
বসন্তের ডায়েট অত্যন্ত জরুরি। ভালো খাবার খেলে তার প্রতিফলন ত্বক এবং চুলে পড়বেই। অভিরূপের মতে, ডায়েটে পুষ্টির ভাগ বেশি থাকতে হবে। যাতে হেয়ার ফলিকল সমৃদ্ধ হতে পারে। ‘ভিটামিন এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্টযুক্ত খাবার ডায়েটে রাখতে হবে। চুল ভালো রাখতে কিছু কসমেটিক সমাধান নিশ্চয়ই হয়। কিন্তু সেটা বাইরে থেকে করা হয়। কিন্তু পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার খেলে সেই উপকার ভিতর থেকে হবে’, বললেন তিনি।
হাইড্রেটিং শ্যাম্পু
শীত শেষে ফের ফিরে আসে সাঁতারের অভ্যেস। যাঁরা সাঁতারে অভ্যস্ত চুল ভালো রাখতে তাঁদের আলাদা যত্ন নিতে হবে। অভিরূপ বললেন, ‘সুইমিং পুলের ক্লোরিন মেশানো জলে চুলের ক্ষতি হয়। সেক্ষেত্রে হাইড্রেটিং শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। অথবা কোনও নির্দিষ্ট এলাকায় ক্লোরিনযুক্ত জল থাকলে সাঁতারের পরে সাধারণ জল দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। যাতে চুলের পিএইচ লেভেল ভালো থাকে। হেয়ার সেরাম ব্যবহার করতে হবে। এতে চুল উজ্জ্বল, কোমল থাকবে। চুল কম ভাঙবে।’
চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখতে নির্দিষ্ট সময় অন্তর কেটে ফেলা ভালো। বিশেষজ্ঞের মতে, চুল নীচের দিকে পাতলা হয়ে গেলে সেখান থেকে ভাঙতে শুরু করে। তিন-চার মাস অন্তর চুল ট্রিম করে নেওয়া ভালো।