প্রায় সম্পূর্ণ কাজে শেষ মুহূর্তে বাধা পড়ায় বিচলিত হয়ে পড়তে পারেন। সন্তানের বিদ্যা শিক্ষার বিষয়ে ... বিশদ
বসন্তপঞ্চমীর সাজ মানেই তাতে থাকবে বাসন্তী রঙের ছোঁয়া। হলুদ পাঞ্জাবির সঙ্গে হলুদ শাড়ির আলাপ। একসঙ্গে অঞ্জলি দেওয়া আর কুল খাওয়া! ছোট থেকে এক লাফে একদিন হঠাৎ বড় হওয়ার সুযোগ। স্কুলবেলার স্মৃতিতে সরস্বতী পুজোর দিনটা সবসময় অমলিন। স্কুল ছেড়ে কলেজছোঁয়া তরুণ-তরুণীর সাজে কতটা বদল আসে? বিদ্যাবতীর আরাধনায় বাসন্তী রং কি আর বাধ্যতামূলক থাকে? নাকি যুগের নিয়মে সেখানে জায়গা করে নেয় অন্য সব উজ্জ্বল রঙের ক্যাটালগ?
এই প্রজন্মের সদ্য কলেজ পৌঁছানো অদিতি-নেহারা বলছে, ‘শাড়ি এখন সবসময় ম্যানেজেবল নয়। কিন্তু সরস্বতী পুজো এমন একটা দিন, যেদিন শাড়ি না পরলেই সবাই অবাক হয়ে তাকাবে! যেন কী অপরাধ করে ফেললাম। তাই মা কাকিমার হেল্প নিয়েই শাড়ি পরে নিই। পরার পরে অবশ্য খারাপ লাগে না। কিন্তু পরার ঝঞ্ঝাট ভাবলেই গায়ে জ্বর আসে। তাই বাসন্তী না অন্য রং, এত ভাবার সময়
নেই। যে শাড়ি সহজে পরে থাকা যায়, সেটাই প্রেফার করি।’
ডিজাইনার সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়ও শোনালেন এক কথা। তবে তাঁর মতে, ‘হলুদ শাড়ি বা বাসন্তীরঙা শাড়ির চল নেই, ভাবলে ভুল হবে। এখনও সরস্বতী পুজোর আগে দোকানে দোকানে খেয়াল করলে দেখবেন ওই রঙের শাড়ি বাচ্চাদের জন্য ঝোলানো থাকে। তরুণী বা আর একটু বেশি বয়সের অনেকেও এই দিনটার জন্য স্পেশাল হলুদ রঙের শাড়িই খোঁজেন। ফ্যাশনের দিক থেকে দেখলে বলা যায়, এখনকার মেয়েরা হয়তো হলুদ তাঁতের শাড়ি পরছে না। মাল কটন, মাল চান্দেরি, হাল্কা জর্জেট বা হাল্কা শিফন তারা বেছে নিচ্ছে কমফর্টের জন্য। সেটাই স্বাভাবিক। এখন ফ্যাশনমতে কেউ যা-ই করুক, আরামটা প্রাধান্য দেয় সবাই।’
খাদির তরফে ডিজাইনার ঐশী গুপ্ত বললেন, ‘মনে রাখতে হবে সরস্বতী পুজো বা এ বাংলায় যে পুজোই হোক, সেটা ধর্মীয় উৎসবের চেয়েও অনেক বেশি সাংস্কৃতিক। তাই তা ঘিরে সাজগোজেও একটা বহুত্ববাদী সাংস্কৃতিক ছোঁয়া থাকে। সাজের এসেন্স অর্থাৎ মূলগত জায়গাটা একই আছে। এসথেটিক্স বদলেছে। সরস্বতী পুজোয় উন্মাদনা সবসময়েই কিশোর কিশোরী, তরুণ তরুণীদের ঘিরে। বাড়ির পাশে হেঁটেচলে বেড়াত যে মেয়ে, হঠাৎ একদিন শাড়ি পরে সে অপরূপা। এই কালে বাসন্তীর সঙ্গে সাদা, পিঙ্ক, নীল এগুলোও রঙের প্যালেটে যোগ হয়েছে। মেয়েদের এই পুজো শুরু হয় শাড়ি দিয়েই। বড় হয়ে তারা হয়তো বা অন্য কিছু বেছে নেয় আরামকে প্রাধান্য দিয়ে। কিন্তু এথনিক ছোঁয়া তাতে থাকবেই। এই দিনটা শাড়ি যদি নাও বা থাকে, থাকবে সালোয়ার-কামিজ বা আধুনিক শারারা সেট। স্টাইলটা নিয়ে পরীক্ষা করেও আভিজাত্য রক্ষা করা যায়। ১৮-১৯ বছরের মেয়েরা আজকাল শাড়ি ড্রেপিং নিয়েও কত ভাবে! অসম্ভব সুন্দর সব ড্রেপিং স্টাইল আপন করে নিয়েছে ওরা। আর অ্যাক্সেসরিজ-এর ক্ষেত্রে পোড়ামাটি বা কড়ির দুল এখনও প্রিয়। চিরকালীন বাংলাকে খুঁজে পাওয়া যায় এভাবেই।’
ডিজাইনার অভিষেক নাইয়া মনে করছেন, সরস্বতী পুজো ঘিরে স্টাইল একেবারে পাল্টে গিয়েছে এমনটা একেবারেই নয়। তাঁর কথায়, ‘তবে এখনকার প্রজন্মের কথা মাথায় রাখলে বলব তারা একই স্যাচুরেটেড কালার নিয়ে থাকছে না। তারা এখন চাইছে সফট প্যাস্টেল শেডস অথবা ন্যুড টোনস। যদি বাসন্তী রং পরতে হয়, ওরা খুঁজবে প্যাস্টেল ইয়েলো। ওরা হোয়াইটও খুব পছন্দ করছে, চোখের আরাম, পরেও আরাম। এছাড়া হট পিঙ্ক খুব চলছে। ইয়েলোর মধ্যেও অনেক রকম আছে। এখনকার মেয়েরা শাড়ির ফ্যাব্রিক নিয়েও খুব সচেতন। শাড়ি পরার পরে ফুলে থাকলে ওদের চলবে না। গায়ে লেগে থাকা নরম শাড়ি প্রাধান্য পাচ্ছে ওদের কাছে। শিফন, জর্জেট, সফট সিল্ক এগুলো তাই ভীষণ ইন। সাজের দিক থেকেও বলা যায়, যারা মোটামুটি মার্জিত সাজ পছন্দ করে, তারা হেয়ারস্টাইল নিয়ে খুব বাড়াবাড়ি কিছু করতে চায় না। আর অ্যাক্সেসরির ক্ষেত্রেও হালকা কিছু খোঁজে। গলায় সামান্য স্লিক কিছু। এইটুকু যথেষ্ট।’
ছেলেদের ক্ষেত্রে কতটা বদলেছে সাজের রকম? অভিষেক বললেন, ‘জিনসের সঙ্গে একটা পাঞ্জাবি পরে নেওয়া অনেকেরই পছন্দ। কিন্তু আমি বলব এটা ফ্যাশনে ছিল না। এটা আমার কাছে ফ্যাশন ডিজাস্টার। আজকাল ছেলেরা অনেক সচেতন হয়েছে। চুড়িদার বা এমনি পায়জামা অনেক ইন। তার চেয়েও যেটা বেশি চলছে এখন, সেটা হল উঠতি বয়সের ছেলেরাও এখন ধুতি খুব পছন্দ করছে। কিছুদিন আগেও এটা ততটা ছিল না। সেলিব্রিটিরাও আজকাল ভীষণ ধুতি পাঞ্জাবি প্রেফার করছেন। তাই সেটা অনুসরণ করার একটা অভ্যাস তৈরি হচ্ছে। আর একটা বিষয় এক্ষেত্রে কার্যকর হয়েছে। দেখুন, ধুতি চিরকালই বাঙালি ঐতিহ্যবাহী পোশাকে ছিল। কিন্তু পরার নানা ঝামেলায় ধুতি নিয়ে ততটা আগ্রহ ছিল না ছেলেদের মধ্যে। এখন ধুতি পরাও যেহেতু খুব সহজ হয়ে গিয়েছে তাই পরার উৎসাহও বাড়ছে। বাসন্তী বা সফট ইয়েলো কুর্তা আর তার সঙ্গে সাদা ধুতি তাই খুব পছন্দ অনেকের। আবার উল্টোটাও রাখছে অনেকে কম্বিনেশনে। সাদা পাঞ্জাবির সঙ্গে বাসন্তী রং ছোঁয়া ধুতি। সরস্বতী পুজোয় আর কী চাই! ঐতিহ্যের কাছে এভাবেই তো ফিরে ফিরে আসি আমরা।’
এই বিশেষ দিনে খুদের হাতেখড়ির জন্যও মায়েরা খোঁজেন নরম সুতির হলুদ-লালপেড়ে শাড়ি। বাচ্চার ত্বক এমনিতেই ভীষণ নরম। অন্য কোনও ফ্যাব্রিক উপযোগী নয়। তাই এখনও দোকান ঘুরলে এমন ছোট ছোট সুন্দর শাড়ি চোখে পড়ে। ছোট খুকিদের সাজের মতোই ছোট খোকাদের জন্য থাকে মিষ্টি হলুদ পাঞ্জাবি। কোথাও সেই পাঞ্জাবিতে থাকে মিষ্টি ফ্লোরাল ছাপ বা বাচ্চাদের চোখ টানে এমন সব মোটিফ। সব মিলে খুদেদের সাজও হয়ে ওঠে জম্পেশ।