সন্তানের কর্ম সাফল্যে মানসিক প্রফুল্লতা ও সাংসারিক সুখ বৃদ্ধি। আয়ের ক্ষেত্রটি শুভ। সামাজিক কর্মে সাফল্য ... বিশদ
ব্রাইডাল মেকআপ বা কনের সাজ এখন আর একটি দিনের বিষয় নয়। বিশেষ দিনের বিশেষ সাজের আগে দরকার লম্বা প্রস্তুতি। নাহলে সবাইকে অবাক করে দেওয়ার মতো লুক তৈরি হবে কী করে? এই বিষয়ে কথা হচ্ছিল অভিজ্ঞ মেকআপ আর্টিস্ট ও স্টাইলিং এক্সপার্ট কৌশিক-রজতের সঙ্গে। ওঁরা দীর্ঘ সময় ধরে মেকআপ-এর বিবর্তন খেয়াল করেছেন। নিজেরাও ব্রাইডাল মেকআপ নিয়ে করেছেন নানা পরীক্ষানিরীক্ষা।
এখন কী ধরনের মেকআপ ইন? কৌশিক বললেন, ‘বছর কুড়ি আগে ‘ডার্ক মেকআপ’ পছন্দ করত অনেকেই। স্মোকি আইজ নিয়ে মাতামাতি ছিল। ব্ল্যাক আর গোল্ড শেডস পছন্দ ছিল। কাজল পছন্দ ছিল। এরপর এল ‘নো কাজল লুক’। স্ট্রং লাইনার, উইং করে দেওয়ার প্রবণতা তৈরি হল চোখে। গত পাঁচ বছরে চলছে ন্যুড শেডের আধিক্য। অনেকটাই সূক্ষ্ম মেকআপ-এর যুগ এখন। কেউ কেউ চাইছেন ডিউয়ি মেকআপ।’
এই প্রবণতা কি বাজারে পণ্যের আসা-যাওয়ার ওপর নির্ভরশীল নাকি সেলেবদের স্টাইলও ফ্যাক্টর? কৌশিকের মতে, ‘ফ্যাশন যেমন সবসময় বদলায়, মেকআপ-এও তাই। কাজটা করতে করতেই মনে হয়েছে পরিবর্তন না আনলে যে ধরনের লুক তৈরি করা হচ্ছে, তাতে একঘেয়েমি চলে আসবে।’ বিভিন্ন সময়ে ফ্যাশন উইকে অংশগ্রহণ করার সুবাদে হালফিল ট্রেন্ডও তাঁরা সহজেই বুঝতে পারেন বলে জানালেন এই মেকআপ স্টাইলিং ডুও। বললেন, বিভিন্ন বছরে একটা কালার প্রাধান্য পায়। কখনও গ্রিন, কখনও ব্লু। তবে রেড হোয়াইট ব্ল্যাক সবসময়েই ট্রেন্ড-এ থাকে। এখন চলছে মিন্ট ও শ্যাম্পেন কালার্স -এর প্রাধান্য। লাল রং বিয়ের আবেগের সঙ্গে চিরকালই জড়িয়ে। এখনকার প্রজন্ম কি লাল রঙের সঙ্গে বিয়েকে মিলিয়ে দেখতে খুব আগ্রহী? তারা তো ভীষণ বাস্তববোধসম্পন্ন। বুঝেশুনে ফ্যাশন নিয়ে পা ফেলে। কৌশিকের কথায়, ‘ঠিকই। অনেকে লাল পরলেও অনেকে সেই ট্র্যাডিশন থেকে বেরিয়ে এসে ইংলিশ কালার্স বেছে নিচ্ছে। অথবা বেনারসি কাপড় রেখে পাড়ে ডিজাইনারদের দিয়ে কাজ করাচ্ছে। এতে আলাদা স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরি হচ্ছে। অনেকে সাদা লালপাড়ও চাইছে।’ রজত বলেন, ‘জেন জি চায় ট্র্যাডিশনের সঙ্গে ফিউশনের মেলবন্ধন।’
একালে মুখসজ্জায় চন্দনের ভূমিকাও অনেকটাই পিছনের সারিতে। কৌশিক বলেন, ‘এক কপাল আলপনা এখন আউট অব ফ্যাশন। কিছু ডটস অথবা সামান্য মোটিফ চাই। সেকেলে নকশা নতুন প্রজন্ম চায় না।’
কনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সকলেই এখন সেজে উঠতে চাইছে। আগে আত্মীয়রা একে অপরকে সাজিয়ে দিতেন। সেই চল উঠে গিয়ে গোটাটাই এখন চলে এসেছে পেশাদারদের হাতে। পার্টি মেকআপ তাই কাকিমা-মাসিমা সবার জন্যই। রজত মনে করছেন, ‘বাঙালি বিয়েতেও অনুষ্ঠানের বহর অনেক বেড়েছে। আগে আইবুড়োভাত বা গায়ে হলুদ কোনও মতে হতো। এখন অবাঙালি বিয়ের মতো সঙ্গীত, মেহেন্দি সবই হচ্ছে। প্রতিটা অকেশনে আলাদা লুক। তাই পাল্লা দিয়ে সকলের সাজের প্ল্যানিংও বেড়েছে। এতে ফিল্মের প্রভাবও আছে। আগে বিয়েটা দু’টি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত। এখন তা বড়সড় ইভেন্ট। এটা একদিকে ভালোই, সবার কাজের সুযোগ বাড়ছে। আগে বিয়ে আর রিসেপশন— এই সাজেই প্ল্যান শেষ হতো। এখন প্রি-ওয়েডিং থেকে শুরু করে কী ধরনের ব্রাইডাল সাজ হবে, অনেক আগে থেকে সেসব নিয়ে আলোচনা করতে হয়। ওঁরা কী চান, আমরা কী পরামর্শ দিলাম সবটুকু মিলিয়ে সেই পথে এখনকার হবু কনেরা কেনাকাটি করেন। কারণ এখন তো শুধু ফোটো অ্যালবাম নয়। সোশ্যাল মিডিয়াও আছে। তাই ভিডিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাজের তালমেল হওয়াটা খুব জরুরি। কী ধরনের গয়না পরবেন, সেটাও ওঁরা কথা বলেই ঠিক করেন। কেউ হয়তো হীরের গয়না পরবেন ভেবেছিলেন, কিন্তু লুক অনুসারে দেখা গেল সোনার গয়না ভালো যাবে, তখন সেটাই করেন।’
মিনিমাল মেকআপ ও স্টাইলিং এখন বলিউডের বিয়েতেও সাড়া জাগাচ্ছে। আলিয়া ভাট ও কিয়ারা আদবানির মতো তারকারা পথ দেখাচ্ছেন। রজতের মতে, ‘এখন সবাই চায় মেকআপ-এর আড়ালে ব্যক্তিত্ব যেন চাপা পড়ে না যায়। আর আগে বলা হতো পুরো সাজটাই এমন হবে, যে ব্রাইডকে দেখে যেন সবাই বলে, আরে তোমাকে তো চেনাই যাচ্ছে না! এখন কেউ সেটা চায় না। যাকে যেমন দেখতে তেমনই থাকবে। বরং একটা ত্রুটিহীন চেহারা যেন ফুটে ওঠে, এটাই মেকআপের লক্ষ্য।’ কৌশিক যোগ করলেন, ‘আগে ট্রেন্ড ছিল একেবারে আলাদা দেখাতে হবে, অতিরঞ্জিত লুক— তা না করে সুন্দর একটা লুক তৈরি করা যে অনেক বেশি জরুরি, সেটা ক্লায়েন্টকে বোঝাতে হতো।’ এখন বলা হয়, বিয়ের সাজের আগে ত্বকের সঠিক যত্ন নেওয়া জরুরি। কৌশিকের কথায়, ‘ক্যানভাস ভালো তৈরি না হলে মেকআপ কিছুতেই নিখুঁত হয় না। তাই ছ’মাস-এক বছর আগে থেকে আমরা বলে দিই কীভাবে যত্ন নেবেন ত্বকের। এতে আসল দিনে মেকআপটা ঠিকমতো হয়।’